দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন ফারহানা আকতার। দৈনিক আজাদী, ভোরের কাগজ, প্রথম আলোসহ নানা সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে প্রচুর লিখেছেন। প্রবন্ধ, কলাম, আত্মকথা ও কবিতা।
শিশুকাল কেটেছে নানাবাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগের পাড়া গ্রামে। বাবা সামরিক বাহিনীর হওয়ায় শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন ক্যান্টনম্যান্টে। এসএসসি ও এইচএসসি বোর্ড স্কলারশিপসহ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং স্টাডিজ ও ইন্টারন্যাশনাল বিষয়ে বিবিএ (সম্মান) এবং এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশায়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে । বিভিন্ন গবেষণায় নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। বর্তমানে পতিসর ইন্টান্যাশনাল রবীন্দ্র রিচার্স ইনস্টিটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও পরিচালক।
তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘সুপ্রিয় দিনলিপি’ প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। এটি মূলত আত্মজীবনী। প্রথম খণ্ডের প্রথম সংস্করণের প্রকাশক বইপত্র, দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশক অনুপ্রাণন প্রকাশন। দ্বিতীয় খণ্ডের প্রকাশকও অনুপ্রাণন প্রকাশন।
আত্মজীবনী হলেও ‘সুপ্রিয় দিনলিপি’ গ্রন্থে লেখকের সমাজ-ভাবনাও উঠে এসেছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক বৈকল্য প্রভৃতি সরলভাবে স্থান পেয়েছে তাঁর মনোজগতে। বলা যায়, গ্রন্থটি একজন নারী লেখকের যাপিত জীবনের অব্যক্ত কথামালার গ্রন্থিত রূপ।
লেখক ফারহানা আকতার বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি আত্মনির্ভরশীল, সংস্কারমুক্ত, স্বশিক্ষিত, মেধাবী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে হলে আমাদের সবাইকে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে। সেখানে আমাদের মূল অস্ত্র হবে রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা।’ [দেশ রূপান্তর, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯]
ফারহানা আকতার আত্মপ্রত্যয়ী লেখক। তিনি স্বাধীনচেতা। কর্মস্থলে তিনি যেমন দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী; তেমনি জীবনের নানা ধাপ অতিক্রম করছেন ধী-শক্তি ও কঠোর মনোবল নিয়ে। তাঁর কাছে স্বাধীনতা মানে ‘পরাধীনতার হাত হতে নিজেকে মুক্ত করার জন্য প্রাণপণে য্দ্ধু করা’। স্বাধীনতা মানে ‘অন্যের অধিকার ক্ষ্ন্নু না করে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা’। স্বাধীনতা মানে ‘অপরকে অপমানিত করে নিজেকে সম্মানিত করা নয়’। স্বাধীনতা মানে ‘ যা খুশী তা করে বেড়ানো নয়’। স্বাধীনতা মানে ‘যেমন ইচ্ছে তেমন চলা নয়’। স্বাধীনতা মানে ‘যা খুশি তা বলা কিংবা লেখাও নয়’। স্বাধীনতা মানে ‘কেউ খাবে, কেউ খাবে না’ সেটাও নয় । স্বাধীনতা মানে ‘মারামারি -হানাহানি, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নয়’। সর্বোপরি এসবকিছু মিলিয়ে-স্বাধীনতা মানে-‘একটি নির্দিষ্ট ভূখ-ে কিংবা একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে কিংবা একটি নির্দিষ্ট সমাজে কিংবা একটি নির্দিষ্ট পরিবারে বসবাসকারী প্রত্যেকের মানবিক, সামাজিক, পারিবারিক, রাষ্টীয়, ধর্মীয়, পেশাগত, শিক্ষাগত, আবাসনগত, চিকিৎসাগত, আদর্শগত-সবরকম অধিকারসমূহ সুরক্ষিত করা’। যে রাষ্ট্র বা সমাজ সেটা করতে পারে, সে রাষ্ট্র বা সমাজই হয়ে ওঠে সকলের কাছে অনুসরণীয় একটি আদর্শ রাষ্ট্র বা সমাজ। [আজাদী, ২৬ মার্চ ২০১৯]