শৈলী সাহিত্য বুলেটিন সেপ্টেম্বর ২০২২ সংখ্যা প্রকাশিত হলো। সম্পাদক আজিজ রাহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এম কামাল উদ্দিন। প্রকাশক : শৈলী। মুদ্রণ : আইকো। মূল্য : ১০ টাকা

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা সম্পাদনায় কবি কামাল চৌধুরী
মিল্টন বিশ্বাস
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশে যতগুলো কবিতার সংকলন প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে ব্যতিক্রমী ও গবেষকদের জন্য কার্যকর একটি গ্রন্থ ‘মহাকালের তর্জনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা’ (২০২২)। এ গ্রন্থের ‘ভূমিকা’ এবং ‘কবি পরিচিতি’ এ দুটি অংশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাংলা কবিদের যে ১৫০টি কবিতা সংকলনটিতে অন্তর্ভুক্ত সেগুলো বাছাই করার ক্ষেত্রে একজন প্রকৃত কবির অন্তর্দৃষ্টি সম্পাদনায় প্রযুক্ত হয়েছে।
সম্পাদক কবি কামাল চৌধুরী কেবল একজন কবি নন, তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব। সিনিয়র সচিব এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এদেশে প্রকাশিত কবিতার সংকলন সম্পর্কে ভালোই খবর রাখেন। কারণ ৪০০ কবির কবিতা নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা’ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব থাকাকালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত সাহিত্যকর্মের সামগ্রিক পরিচয় তিনি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। সহস্রাধিক কবিতা থেকে ৪০০ কবিতা নির্বাচন কিংবা গল্প-ছড়া-লোককবিতা অথবা প্রবন্ধ বাছাই করতে তাঁকে বেশ পরিশ্রমসাধ্য সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে। ফলে শিল্প-সাহিত্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিফলন সম্পর্কে কবি কামাল চৌধুরীর অভিজ্ঞতা তথা জানার পরিধি ব্যাপক। এছাড়া তিনি পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলা কবিতার প্রতিবাদী ধারার অন্যতম পথিকৃত। এজন্য ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কবিতার সংকলন থেকে তাঁর সম্পাদনায় ভিন্নতর গ্রন্থ প্রকাশিত হবে এটাই স্বাভাবিক।
‘মহাকালের তর্জনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলো রাজনৈতিক কবিতাও। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতার পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করে যে ভূমিকাটি কামাল চৌধুরী লিখেছেন তাতে ‘কবিতার স্মরণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে’ বলে মতামত ব্যক্ত করে উল্লেখ করেছেন-‘বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে লেখা প্রতিবাদ ও শোকের কবিতাগুলো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বিধায় নান্দনিকতা ও উৎকর্ষ বিচারের পাশাপাশি প্রকাশের তারিখ ও সময়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’ অর্থাৎ কবিতার নান্দনিকতা ও উৎকর্ষ এবং প্রকাশের তারিখ ও সময়কে প্রাধান্য দিয়ে কবিতা নির্বাচন করেছেন তিনি। তিনি প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান অবধি কবিতার ছন্দে বীরপুরুষের বন্দনা গানের ইতিহাস অবগত আছেন। এজন্য ভূমিকায় বিশ্বকবিতায় বীর বন্দনার যে রূপরেখা তিনি উপস্থাপন করেছেন তা এযাবৎ এদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অন্য কোনো কবিতার সংকলনে দেখা যায়নি।
কামাল চৌধুরী লিখেছেন- ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সরাসরি শোক ও প্রতিবাদী কবিতার সন্ধান পাই আমরা ১৯৭৭ সাল থেকে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন প্রকাশ করতো ‘জয়ধ্বনি’ পত্রিকা। বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা ‘সমকাল’ প্রকাশিত হতো সমকাল মুদ্রায়ণ ও সমকাল প্রাইভেট লিমিটেড, ৭, ডিআইটি এভেনিউ, মতিঝিল, ঢাকা-২ থেকে। সমকালের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কবি সিকান্দার আবু জাফর। ১৩৮৬ বঙ্গাব্দে (১৯৭৭ সাল) সমকাল পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কবি হাসান হাফিজুর রহমান-পরে ইসমাইল মোহাম্মদ (চলচ্চিত্র পরিচালক উদয়ন চৌধুরী) ছিলেন এ পত্রিকার সম্পাদক।’ পঁচাত্তরের পর এই সংকলনগুলো ছিল হত্যাকা-ের প্রতিবাদী ভাষ্য। কবিতায় বঙ্গবন্ধুর মতো এতো বৈচিত্র্যে পৃথিবীর আর কোনো নেতা চিত্রিত হননি।
তাঁকে নিয়ে রচিত কবিতার বিষয় সম্পর্কে সম্পাদক যথার্থই লিখেছেন-‘পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা বহু সংকলন ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব কবিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এত বহুমাত্রিকভাবে ও নানা বর্ণে উপস্থাপিত হয়েছেন যা এই উপমহাদেশে অন্য কোনো নেতার ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন দেশের কবিরা অসংখ্য কবিতা রচনা করেছেন। এ ধরনের কবিতার মূল সুর একই থাকে। শুধু স্থানকাল ভেদ এবং আঙ্গিক ও প্রকরণগত ভিন্নতা থাকে। শোকের সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যক্তি চরিত্র, অর্জন ও গৌরবের মহিমা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতায়ও আমরা দেখি তার জীবন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ মিলেমিশে একাকার। বিজয়গাথা ও শোকের মিলিত প্রবাহে স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণে কবিতা হয়ে উঠেছে বাঙালির ইতিহাসেরও আকর। শোক ও প্রতিবাদের কবিতা, অর্জন ও গৌরবের কবিতা কখনো উচ্চকণ্ঠ ও তীব্র কিন্তু লক্ষ করি, শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতার অসাধারণ যাত্রা শুরু হয়েছে। এর অনেকগুলোই আজ স্মরণযোগ্য কবিতা হিসেবে পাঠকের কাছে প্রবলভাবে আদৃত।
হুইটম্যানের লাইলাকের মতো প্রতীকী ব্যঞ্জনা ও উৎকর্ষপূর্ণ কবিতার উদাহরণও প্রচুর। কবিতায় সেই দুঃসময়ের চিত্রের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়ির চিত্র, তাঁর কারাজীবন, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিসৌধ, ৭ই মার্চের অমর ভাষণ, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, মুক্তিযুদ্ধ, জীবিত কন্যাদ্বয়ের শোক-সর্বোপরি বাঙালি ও বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের নানা অনুষঙ্গ উঠে এসেছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো আমাদের জাতিসত্তার হাজার বছরেরও দীর্ঘ ইতিহাসের অন্তহীন পরিভ্রমণের রূপক যা আগামী দিনের পাঠকের হৃদয়েও স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে কামাল চৌধুরীর বিশ্বাস।
[মহাকালের তর্জনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা, সম্পাদনা কামাল চৌধুরী, প্রকাশক : ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা, ২০২২, প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সব্যসাচী হাজরা, মূল্য : ৮০০ টাকা।]

পাঠ প্রতিক্রিয়া
রাশেদ রউফের কিশোরকবিতা
রাঙামাটি
মেহগনি দেবদারু জারুল সেগুন
গাছের পালকি চলে হুন হুনা হুন
লেকের স্বচ্ছ জলে সবুজের ছায়া
আকাশ বিছিয়ে দেয় রৌদ্রের মায়া।
চারদিক সুনসান বড় পরিপাটি
পাহাড়ের বুক চিরে হাসে রাঙামাটি।

বনজুড়ে খেলা করে হরিনের ছানা
বৃক্ষের গায়ে আঁকা পাখিদের ডানা
খানা-খাদে কী অবাধে ওড়ে প্রজাপতি
রাতের আকাশে হাসে চাঁদ মায়াবতী।
বনানী মিতালি পাতে পাহাড়ের সাথে
আকাশও ভাসায় ভেলা উচ্ছ্বাসে মাতে
চুপিসারে ছড়ায় সে কুয়াশার জাল
শাল মহুয়ার সাথে ঘুমায় তমাল।
এখানে সাগর নেই, নেই সে-ঝিনুক
রাঙামাটি চায় লোকে কুয়াশা কিনুক।

আসে দিন, লীন হয় কুয়াশার ছানি
হাসে ফুল জলবায়ু সবুজ বনানী
চারদিক পরিপাটি আর সুনসান
বাউরি বাতাসে ভাসে আদিবাসী গান।
পাখির পালক ভাসে জলের উঠোনে
পাহাড়ের কথাগুলো বৃক্ষরা শোনে
সবুজের বুকে মেশে আকাশের নীল
রুপোর কণার মতো সব অনাবিল।

কী স্বর্গ! নিসর্গ খাই আর হাঁটি
হরিৎ টিয়ের মতো হাসে রাঙামাটি।

ছবিময় মায়াঘন এক কিশোরকবিতা ‘রাঙামাটি’
সুজন বড়ুয়া
পাহাড়কন্যা রূপসী রাঙামাটিকে কবিতার বাতাবরণে তুলে আনলেন কবি রাশেদ রউফ। শব্দ ছন্দ উপমা চিত্রকল্পের কারুকাজে অসাধারণ একটি নৈসর্গিক কবিতা। বড়োদের কবিতা যারা লেখেন উন্নাসিকতাবশত তাদের কেউ কেউ হয়তো এ কবিতাকে পদ্যই বলবেন। প্রকাশভঙ্গি সহজ সরল হলেই কিন্তু কবিতাকে পদ্য বলা যাবে না। সহজ সরল বলেই তো এগুলো কিশোরকবিতা, পদ্য নয়। পদ্য অন্য জিনিস। আগেকার দিনে এ ধরনের কবিতাকে পরিণত কবিতাই বলা হতো। যাহোক, রাশেদ রউফের ‘রাঙামাটি’ শিরোনামের এই কবিতায় কাব্যকলার সব শর্তের উপস্থিতি উজ্জ্বল। নিবিড় ছবিময় মায়াঘন এক কিশোরকবিতা ‘রাঙামাটি’। যারা কখনো রাঙামাটি যাননি এই কবিতা পড়ে তারা নির্ঘাত রাঙামাটির হাতছানি পাবেন। অভিনন্দন রাশেদ রউফ।
রাঙামাটির সৌন্দর্য অন্যরকম ব্যঞ্জনায় বর্ণিত
অরুণ শীল
মায়াবী বর্ণনা ও লাবণ্যময় উপমা এই কবিতাকে অনন্য এক স্তরে উন্নীত করেছে। আট ছয় মাত্রার গতিময় ছন্দের আবরণে প্রাণময় শব্দের গাঁথুনি ও যুতসই অন্ত্যমিল এখানে এনেছে দারুণ এক গীতিময়তা। এই কবিতা বাংলা ‘কিশোরকবিতা’র উজ্জ্বল এক প্রতিনিধি। এরূপ মায়ামাখা কবিতার জন্য ‘কিশোরকবিতা’ আজ মর্যাদাপূর্ণ সাহিত্য মাধ্যম হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কবি রাশেদ রউফ ‘কিশোরকবিতা’ নিয়ে মেতে আছেন এবং সংগঠিতভাবে এই মাধ্যমকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি একজন ছন্দ সচেতন প্রাজ্ঞজন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি। পাহাড়, নদী, ঝর্ণা বন, সুবিশাল জলরাশির হ্রদ ও আদিবাসীর জীবনবৈচিত্র পর্যটককে আকর্ষণ করে। এই নিসর্গ নিয়ে কবির বিস্ময়ানুভূতি পাঠকের মনেও সঞ্চারিত হয়। রাঙামাটির স্নিগ্ধ অপরূপ সৌন্দর্য এ কবিতায় অন্যরকম ব্যঞ্জনায় বর্ণিত হয়েছে। কবি এখানে খুব সহজ সরল ভাষায় পাঠকের সাথে সংযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু শিশু-কিশোর নয় প্রকৃত কাব্যামোদীরা এই কবিতার শিল্প- সৌন্দর্যে বিমোহিত হবেন। এ ধরনের কবিতা সৃষ্টির ফলে আধুনিক গদ্য কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া পাঠক আবার কবিতামুখি হচ্ছেন। তাই পরিপুরক ও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কিশোরকবিতা আলোচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তুলেছেন
রহীম শাহ
বাংলাদেশের কিশোর কবিতা এখন বেশ সাবালক। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দীন, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান এবং আল মাহমুদের হাত ধরে কিশোর কবিতা পুরুষ্ঠ হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পর কিশোর কবিতাকে সাবালক করে তুলেছেন বেশকিছু কবি এবং ছড়াকার। তাদের মধ্যে এখন যার কথা বলব, তিনি কিশোর কবিতা লিখে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। কিশোর কবিতার পাশাপাশি ছড়া লিখেও তিনি নিজের অবস্থান সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি রাশেদ রউফ। ছড়া ও কবিতা লিখে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও অর্জন করেছেন। তিনি আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে সবসময় সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। তার ‘রাঙামাটি’ কবিতাটিও ব্যতিক্রম নয়। স্বরমাত্রিক ছন্দে লেখা আলোচ্য কবিতাটির শিরোনাম ‘রাঙামাটি’ হলেও তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের পরিবেশকে। বাংলাদেশের স্বপ্নকে। যে স্বপ্ন একজন কিশোর দেখতে পায়, একজন কবি-কিশোর দেখতে পায়-সেই স্বপ্নেরই সফল প্রতিফলন এই কবিতাটি। কারণ কিশোরের স্বপ্ন ছাড়া কিশোরকবিতা অসম্ভব। আমি এই কবি-কিশোর রাশেদ রউফের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

চিত্রকল্পে ঋদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি
এমরান চৌধুরী
আমরা মনে করি কিশোরকবিতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য সহজিয়া প্রকাশ। হালকা, চটুল এবং মায়াবী শব্দ-বিন্যাস কিশোর কবিতার শরীরে যে প্রাণ সঞ্চার করে, ভারিক্কি শব্দের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। বাংলা সাহিত্যে যে কটি কিশোরকবিতা পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে তাদের সবকটিতে উপর্যুক্ত বিষয় বিদ্যমান।
রাশেদ রউফ’র ‘রাঙামাটি’ কবিতাটিও সহজিয়া প্রকাশের গুণে টইটম্বুর। প্রকৃতি তথা নিসর্গের রূপায়নে তাঁর যে জুড়ি নেই তা আমরা বরাবরই অবগত। এই কবিতাটির প্রতিটি পঙক্তি পড়লে মনে হয় সিনেমার পর্দার মতো একের পর এক ছবি চোখে ভাসছে। ক্রমে স্পষ্টমান হয় প্রকৃতির নিজ হাতে সাজানো রূপময় রাঙামাটিকে। আসলে রাঙামাটির যে অপরূপ রূপ লাবণ্য তা মন ও চোখ একাকার করে দেয়ার মতো।
মায়াবী চিত্রকল্প (বাউরি বাতাসে ভাসে আদিবাসী গান), মাত্রাবৃত্তের অনুপম দোল (বৃক্ষের গায়ে আঁকা পাখিদের ডানা), উপমা-অনুপ্রাসের (কী স্বর্গ! নিসর্গ কিংবা হরিৎ টিয়ের মতো) সরব উপস্থিতি ‘রাঙামাটি’ কবিতাটিকে দিয়েছে নতুন মাত্রা এবং প্রাণময়তা। এক কথায় বলতে চাই কবিতাটি চিত্রকল্প ও উপমায় ঋদ্ধ চির সবুজের দেশ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

কাব্যসাহিত্যে কবিতাটি মূল্যবান সংযোজন
সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার
বাংলা কিশোরকবিতার অন্যতম নির্মাণ শিল্পী রাশেদ রউফ। তাঁর কবিতা পাঠে সব ধরনের পাঠক এক নান্দনিক আবহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। উপরোক্ত কথাগুলোর যথাযথ সত্যায়ন আমরা দেখি কবির ‘রাঙামাটি’ শিরোনামের কবিতায়ও। পর্যটক কবির কাছে চলন্ত গাড়ির বিপরীত দিকে আপাতচলমান মেহগিনি, দেবদারু, জারুল, সেগুন গাছগুলোকে মনে হলো হুন হুনা হুন অনুকার শব্দে চলে যাওয়া পালকি – অনবদ্য রূপক কল্পনাই বলতে হয়। বৃক্ষ, পাহাড়, লেক, পাখি, হরিণ, আকাশের চাঁদ, আদিবাসী গান, কুয়াশা ইত্যাদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অলংকার কবি এমন চিত্রোপম ভাষায় উপস্থাপন করেছেন মনে হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাঙামাটি পাঠকের দৃষ্টির সমীপে প্রতিভাত।
‘রাঙামাটি’ কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা সুখপাঠ্য একটি কবিতা। শ্রুতিমধুর এর অন্ত্যমিল। কবিতার পরতে পরতে অবিমিশ্র শিল্পের সমাহার। কবি রাশেদ রউফের ‘রাঙামাটি’ কবিতাটি কাব্যসাহিত্যে একটি মূল্যবান সংযোজন।

পাঠ বিষয়ক কথামালা
বই পড়ার নেশায়
মৃণালিনী চক্রবর্তী
পড়ার অভ্যাসটা বয়সের একটা সময় খুব চেপে বসেছিল। মনে হতো বইকে নিয়ে থাকলে নিজেকে সম্মানিত মনে হবে। ভালো হওয়ার, ভালো থাকার, ভালো চিন্তার বইপড়া একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তখন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর সহজ সরল ভাবগম্ভীর সমাজ ও বাস্তব জীবনের কাহিনী আমাকে দোলা দিত। তাই বেশ কয়েকবার পড়া হয়ে যায় শরৎ রচনাবলী মেজদিদি, বিরাজ বৌ, গৃহদাহ। সেই সময়কার সমাজের নানা সুখ-দুঃখের ঘটনাবৈচিত্র্য আমাকে টেনে নিয়ে যেত। কাব্যিক বেদনাময়তা চোখের জলকে উছলে নামাতো। এমন অন্তর ও ভাবের আকর্ষণ।
তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের ভাবগাঁথাও আমাকে দূরে রাখতে পারেনি। ডুব বারবার দিয়েছি, আজও আছি সঙ্গে। এরপর এক সময় ভাবধারার পরিবর্তনে খুব করে ঝুঁকে পড়ি গবেষণামূলক লেখা পাঠে। প্রবন্ধের রন্ধ্রে রন্ধ্রে খুঁজে পাই জীবনের জিজ্ঞাসা, প্রতিবাদ, প্রতিকারের সূচনা, নানা জানা-অজানা চিন্তার খোরাক। এরমধ্যে পড়া হয়ে যায় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মনিরুজ্জামান স্যারের চট্টগ্রামের লেখকদের ওপর তথ্যবহুল বইটি। যা প্রেরণায় উজ্জীবনে উজ্জীবিত করে। আরেকটি বই পড়ার সুযোগ হয়েছে তা হলো চট্টগ্রাম একাডেমি প্রকাশিত নেছার আহমদ সম্পাদিত জন্মশতবর্ষে চট্টগ্রামের শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘জাতির পিতা’ গ্রন্থটি। তথ্যসমৃদ্ধ এই গ্রন্থটি অনেক কিছু জানতে শেখায়। সেই থেকে আজও গবেষণাধর্মী বিষয় আমাকে বেশি আকর্ষণ করে।
স্কুল জীবনে একটু-আধটু নিমাই ভট্টাচার্য ও ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়-এর বই খুলেও কিছু রস আস্বাদনের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমায় বেঁধে রাখতে পারেনি তাদের অনুভব অনুভূতি। এসময় শিমুল বড়ুয়া সম্পাদিত আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ-এর ওপর মগ্নিত তথ্যের গভীর স্রোতধারায় অবগাহনে মানুষের খ-িত চিন্তাগুলি একসময় ঐ সময়কে প্রণম্য করে তোলে। খেয়ালীপনা শ্রম প্রতিভার শিখ-ীতে পৌঁছায়। তার সাথে রাশেদ রউফ ও জাহাঙ্গীর মিঞা সম্পাদিত ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর’ চট্টগ্রাম একাডেমির তথ্যবহুল বইটিও আমাকে তথ্যভা-ারে সমৃদ্ধ করেছে। কোনো একসময় এই বই হবে বিরল তথ্যসমগ্র।

পাঠানুভূতি
লেখক-পাঠকের দৃষ্টিতে
সনজিত দে’র
কিশোরকবিতার বই
‘মনের খাতায় স্বপ্ন আঁকি’
সরওয়ার আরমান : সম্প্রতি কবি সনজিত দে-এর ‘মনের খাতায় স্বপ্ন আঁকি’ গ্রন্থটি পদ্য শাখায় স্বকাল শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০২১ এ ভূষিত হয়। তাঁর কিশোরকবিতার এই গ্রন্থটি সম্পর্কে লেখক ও পাঠক মহলে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
ষষ বইটি কেমন লেগেছে জানতে চাওয়া হলে শৈলী সাহিত্য বুলেটিনকে কয়েকজন কবি, লেখক-পাঠক বইটি নিয়ে তাঁদের চমৎকার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। ছড়াশিল্পী জসীম মেহবুব বলেন, হ্যাঁ, বইটি ভালো লেগেছে। কবি আখতারুল ইসলামের মতে- এক কথায় বইটি অসাধারণ। তরুণ কবি সাইফুল্লাহ কায়সার বলেন, বইটি পড়লে মনের মাঝে কিশোরবেলার দুরন্তপনার কল্পচিত্র ভেসে ওঠে। শিক্ষক ও কবি কানিজ ফাতিমা বলেন, বইটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। কবি ও গল্পকার নূরনাহার নিপা বলেন, বইটি পড়ে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি। কবি ও গল্পকার সালাম সৌরভ বলেন- খুবই ভালো লেগেছে। পাঠক হিসেবে বিশিষ্ট সংগঠক মহসিন চৌধুরীর অভিমত- কবিতাগুলো পাঠে বেশ চমৎকার লেগেছে।
ষষ ভালোলাগার কারণ সম্পর্কে আরেক প্রশ্নের আলোকে ছড়াশিল্পী জসীম মেহবুব বলেন, অতি সাধারণ বিষয়ও তার কবিতা ছন্দনৈপুণ্যে শিল্পের চৌকাঠ পেরুতে সক্ষম হয়েছে। কবি আখতারুল ইসলামের বলেন, কবি সনজিত দে ছন্দ, মাত্রা, অন্ত্যমিল প্রয়োগে খুবই সচেতন।
কবি সাইফুল্লাহ কায়সার বলেন, সহজ শব্দ, বাক্যের গভীরতা, কল্পচিত্রে তাঁর কবিতাগুলো অনন্য। কবি কানিজ ফাতিমা বলেন, বইটি বিষয়বস্তু, ছন্দ- নৈপুণ্য, শিল্পমান, গুণগতমান, নতুনত্বে অসাধারণ হয়েছে। কবি ও গল্পকার নূরনাহার নিপা বলেন, সহজ-সরল ছন্দে, দৃশ্যময় ভাষায় কবিতাগুলো পাঠকের হৃদয় নাড়া দেয়। কবি ও গল্পকার সালাম সৌরভ বলেন, তাঁর গ্রন্থটি বৈচিত্র ও নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া যায় যা ছন্দে, নৈপুণ্যে কিশোরকবিতাগুলো সমৃদ্ধশালী। পাঠক ও সংগঠক মহসিন চৌধুরী বলেন, বইটির বিষয়বস্তু, ছন্দে ছন্দে এক বৈচিত্রময় প্রকাশ ঘটেছে।
ষষ ‘মনের খাতায় স্বপ্ন আঁকি’ গ্রন্থে মোট ২০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। কোন কবিতা কার মনে রেখাপাত করেছে? এ সম্পর্কে জানতে গেলে কবি ছড়াশিল্পী জসীম মেহবুব বলেন, পাহাড় নিয়ে ছয়মাত্রার মাত্রাবৃত্ত, দুই মাত্রার ভাঙা পর্বে দশ লাইনের ‘ভালোবাসা’ শিরোনামের কবিতাটি আমার অনবদ্য মনে হয়েছে। সনজিত দের হাতে মাত্রাবৃত্তের কবিতাগুলো অনেক বেশি বাঙময় হয়ে উঠে বলে আমি মনি করি। কবি আখতারুল ইসলাম বলেন, বইটিতে আমার ভালোলাগার কবিতা হলো ‘ভালোবাসা’, ‘মনের খাতায় স্বপ্ন আঁকি’, ‘অনেক অজানা, পাহাড়পুরের দস্যি টুলু’, ‘বটবৃক্ষ’, ‘দলছুট এক পথভোলা মেঘ’। কবি সাইফুল্লাহ কায়সারের মতে ‘বাংলাদেশকে দেখতে হলে’, ‘আগামীর পথে’ কবিতাগুলো দারুণ। তাছাড়া ‘ভালোবাসা’, ‘আকাশ’, ‘বটবৃক্ষ’ ‘অবাক উপহার’ ও ‘রক্তরাঙা টিপ’ও ভালো লেগেছে। কবি কানিজ ফাতিমার মতে সবচে ভালোলাগার কবিতা ‘আগামীর পথে’। তাছাড়া ‘মনের খাতায় স্বপ্ন আঁকি’ ‘দলছুট এক পথভোলা মেঘ’ কবিতাও অনন্য সৃজন। কবি নূরনাহার নিপা বলেন, ‘আকাশ’, ‘মনের খাতায় স্বপ্ন আঁকি’, ‘পাঠ্যবইয়ে ডুবে’, ‘রক্তরাঙা টিপ’ কবিতাগুলো আমার বেশ ভালো লেগেছে। কবি সালাম সৌরভ বলেন, ‘আগামীর পথে’ কবিতাটি অসাধারণ। সেইসাথে ‘মনের খাতায় স্বপ্ন আঁকি’ও ভালোলাগার মতো। নিষ্ঠাবান একজন পাঠক হিসেবে মহসিন চৌধুরী বলেন, ‘মনের খাতায় স্বপ্ন আঁকি’ কবিতাটি আমার মতো যে কোনো পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। এছাড়া ‘দলছুট এক পথভোলা মেঘ’, ‘অবাক উপহার’ ও ‘রক্তরাঙা টিপ’-এর মতো কবিতাগুলোও চমকপ্রদ।
ষষ একজন পাঠকের কাছে লেখকের চাহিদার শেষ নেই। লেখকের কাছে পাঠকের কেমন চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ছড়াশিল্পী জসীম মেহবুবের প্রত্যাশা হলো বাংলাদেশের কিশোরকবিতার সবুজ জমিনে সনজিত দের কলম যেন কখনো থেমে না যায়। তিনি নিজেকে আরও শাণিত করে এগিয়ে যাবেন। কবি আখতারুল ইসলাম বলেন, পাঠক হিসেবে লেখকের কাছে চাই নির্বাচিত কিশোরকবিতা সমগ্র। এক সাথে সব লেখা পাঠককে আনন্দ দেবে। কবি সাইফুল্লাহ কায়সার বলেন, লেখক কিশোরকবিতায় আরো বেশি মনোনিবেশ করবেন কেননা তাঁর প্রায় বই উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রেখেছে।
কবি কানিজ ফাতিমা বলেন, আমি চাই কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি যেন তাঁর কিশোরকবিতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। তিনি লেখনির মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক এই আমার প্রত্যাশা। কবি নূরনাহার নিপা আগামীতে কবির নতুন কোনো কাব্যগ্রন্থ সৃষ্টিতে চমক দেখতে চায়। কবি সালাম সৌরভ আশা করেন সনজিত দে’র কাব্য ভাবনা ও লেখনী শক্তি নক্ষত্রের মতো আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠুক। পাঠক সংগঠক মহসিন চৌধুরীর প্রত্যাশা- কবি আরো ভালো কিছু কবিতা উপহার দিক দেশ ও সমাজকে ছুঁয়ে যাবার মতো।
সবার প্রত্যাশা নিয়ে কবি সনজিত দে তাঁর লেখা কবিতার মাঝে লেখক-পাঠকের হৃদয়ে বেঁচে থাকুক জন্মজন্মান্তর।

পাঠ পরিক্রমা
জাকির হোসেন কামালের শিশুতোষ
গল্পগ্রন্থ ‘রাখাল রাজা ও পাখপাখালির গল্প’
রুনা তাসমিনা : কথা বলবো ‘রাখাল রাজা ও পাখপাখালির গল্প’ বই নিয়ে। শিশুতোষ বই যাঁরা লিখেন তাঁরা নিজেরাই শিশু হয়ে যান। নিজের অজান্তে চলে যান শৈশব কৈশোরের সেই দুরন্ত সময়ে। শিশুসাহিত্যিক জাকির হোসেন কামাল তাঁর ‘রাখাল রাজা ও পাখপাখালির গল্প’ গ্রন্থের গল্পগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন। শিশুমনে মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, বড়োদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করার জন্যে গল্পে গল্পে তিনি খুব সুন্দর করে আহবান জানিয়েছেন। ‘ময়না’ গল্পটি পড়লে মনে হবে স্বপ্নে দেখা কোনো পাখির খোঁজে শিহান গ্রামে যেতে চায়। আসলে তা নয়। গল্পটির শেষে এসে বোঝা যায় ময়না একজন কাজের মেয়ে। যে প্রতিদিন অত্যাচার সহ্য করছে গৃহকর্ত্রীর। আমাদের দেশে নির্যাতিত শিশুশ্রমের চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক এই গল্পে। দস্যিপনার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানবিক সাবুকে অংকের স্যার আবিষ্কার করেন ‘বিশেষ কাজ’ করার সময়। সাবু লুকিয়ে ছিন্নমূল মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ করে। একদিন মতিন স্যার দেখে ফেলেন এই বিশেষ কাজ। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। বুঝতে পারেন শেষ ক্লাসে সাবুর প্রায় দিন অনুপস্থিতির কারণ। গর্ববোধ করেন তাঁর ছাত্রকে নিয়ে। বুক জুড়ে তাঁর তৃপ্তি। ‘ভুতু’ গল্পে সবাই মনে করে ভুতু নিজেই একটা ভূত। কিন্তু একদিন ভয়ে ভুতু নিজেই যখন ভূত-ভূত করে ভয়ে চিৎকার করে পুরো পাড়া জড়ো করে, তখন দেখা যায় ভূত নয়। সে একজন মানুষ। শরীরের অস্বাভাবিক গড়নের জন্যে যে খাপ খাওয়াতে পারে না অন্য সবার সঙ্গে। এখানে লেখক বুঝাতে চেয়েছেন, কারো দৈহিক গড়ন নিয়ে ঠাট্টা তাকে তীব্র মানসিক চাপে ফেলে দেয়। যার কারণে সে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে পরিবার, সমাজ সবকিছু থেকে। ‘ভয়হীন রাফিন’ পড়তে পড়তে মনে হবে কোনো ভূত মনে হয় রাফিনের ওপর ভর করেছে। আসলে তা নয়। স্কুল থেকে পিকনিকে গিয়ে রাফিন দেখেছিলো দু’জন ক্ষুধার্ত শিশু। সেদিন খেলায় ব্যস্ত থাকায় রাফিনের মাথায় আসেনি ছুঁড়ে ফেলা খাবারের কিছু ভাগ তাদের দিয়ে দিতে। কিন্তু বাড়ি ফিরে বারবার তাদের কথা মনে হওয়ায়, কল্পনায় রাফিন তার নিজের খাবারের প্রায় সবকিছুই দিয়ে দেয়। রাফিনের অদ্ভুতুড়ে কা- দেখে মা ভয় পেয়ে যান। এরমধ্যে একদিন নানাভাই আসেন। মনে চাপিয়ে রাখা সমস্ত কথা নানাভাইকে খুলে বলার স্বস্তি ফিরে আসে রাফিনের মনে। বইটি মোহগ্রস্তের মতো টেনে নিয়ে যায় পরের গল্পে। ‘মিয়া ভাই’ গল্পের মিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর অবিচল বিশ্বাস, আত্মপ্রত্যয় আর অনুপ্রেরণায় রহমত জাহান, মাহবুবকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্যে একটি গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে সমর্থ হয়। বইয়ের শেষ গল্প ‘রাখাল রাজা’ নিজেই একটি বাংলাদেশ। ‘এখানে বীজ পড়লেই গাছ হয়’ খুব চমৎকার একটি সত্য কথা। আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি কথাটি অত্যন্ত সত্য। সুজলা সুফলা এই দেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে লক্ষ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রাণ দেন দেশ স্বাধীন করার জন্যে। তাঁদের তাজা রক্ত জমাট বেঁধে বাংলার আকাশে একদিন উদিত হয় টকটকে লাল সূর্য। সেই সূর্যকে ছায়া দিয়ে ঘিরে রাখার জন্যে মাটির সমস্ত সবুজ ছুটে যায় আকাশে। বাংলার আকাশ ঢেকে যায় সবুজে। রচিত হয় লাল সবুজের পতাকা তলে আমাদের প্রিয় ‘বাংলাদেশ’। এছাড়া ‘নুরা পাগলা’, ‘মুনিয়া’, ‘গোয়েন্দা মাসুদ’, ‘সব সমস্যার সমাধান’, ‘সিরাউদ্দৌলা’ সহ মোট বারোটি গল্প ‘রাখাল রাজা ও পাখপাখালির গল্প’ গ্রন্থে চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। শিশুসাহিত্যিক জাকির হোসেন কামাল প্রত্যেকটি গল্প লেখার সময় বর্তমান সময়কে ধরেছেন। যেটি খুবই জরুরি প্রত্যেক লেখকের জন্য। একটি গল্প থেকে পাঠককে পরের গল্পে নিয়ে যান লেখক তাঁর লেখনী শক্তি দিয়ে। তবে গল্পগুলোয় আরও সংলাপ থাকলে শিশু-কিশোর কিংবা বড়রা মজা পেতেন আরো বেশি। শিশুরা কথা শুনতে চায়। তাঁদের মনে অনেক প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া লেখকের কর্তব্য। এক বসায় পড়ে শেষ করা শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ‘রাখাল রাজা ও পাখপাখালির গল্প’ চমৎকার একটি গল্পগ্রন্থ। খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মোমিন উদ্দিন খালেদের আঁকা এবং আদিগন্ত প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে নিঃসন্দেহে।

শেখ রাসেল ছোটোদের বইমেলা উপলক্ষে বের হচ্ছে বেশ কিছু প্রকাশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিতব্য শেখ রাসেল ছোটোদের বইমেলা ও শিশুসাহিত্য উৎসব উপলক্ষে বের হচ্ছে বেশকিছু প্রকাশনা। এরমধ্যে রয়েছে বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক ও শিল্পশৈলী সম্পাদক নেছার আহমদ এর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘শেখ রাসেল : অন্তহীন শোকের নদী’, গল্পকার ইফতেখার মারুফ-এর গল্পগ্রন্থ ‘রাসেল তোমাকে ভালবাসি’। এছাড়া রয়েছে উৎসব উপলক্ষে বিশেষ গ্রন্থ ‘ভালোবাসায় শেখ রাসেল’, রাশিদা তিথির ছড়াগ্রন্থ ‘লাল সবুজের পতাকা’ ও জোনাকী দত্তের গল্পগ্রন্থ ‘প্রতীকের স্বপ্ন’।

ছড়াশৈলীর বিশেষ সংখ্যা আসছে শীঘ্রই
নিজস্ব প্রতিবেদক : কবি ও নাট্যশিল্পী কাসেম আলী রানার সম্পাদনায় শীঘ্রই প্রকাশিত হচ্ছে ‘ছড়াশৈলী’র বিশেষ সংখ্যা। এতে বিশিষ্ট ছড়াশিল্পীদের ছড়া ভাবনার সন্নিবেশ ঘটছে যাতে সংখ্যাটিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে। সেই সঙ্গে থাকছে একঝাঁক লিখিয়ের ছড়া। ইতোমধ্যে এই বিশেষ সংখ্যা নিয়ে লেখকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

মোয়াজ্জেম হোসেনের গবেষণাগ্রন্থ ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়া মনীষা’ প্রকাশের অপেক্ষায়
সাম্প্রতিক সময়ে প্রবন্ধ-গবেষণায় বেশকিছু লেখক মন-মনন নিয়োজিত করেছেন, মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁদের একজন। তাঁর জন্ম-জনপদ সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মনীষীদের জীবন ও সৃষ্টিকর্ম গবেষণায় তিনি নিজেকে পুরোদমে নিয়োজিত রেখেছেন। তাঁর সম্পাদনায় শীঘ্রই বেরুচ্ছে গবেষণাগ্রন্থ ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়া মনীষা’। সর্বমোট ১০০ জন মনীষীর ওপর মোয়াজ্জেম হোসেনের তৈরি জীবনীভিত্তিক এ গ্রন্থটি একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত হবে বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছেন।