একজন হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও তাঁর কবিতা

কে শুয়ে আছে পদ্মপাতায়?
কে ভাসে কচ্ছপের নাকে?
কে নেয় ঘুমন্ত ডিমের মধ্যে আশ্বিনের চাঁদের হিসেব?
বড়ো ভয় ছিল
যদি মেঘ খোঁজ পায়ব্যাঙের ছাতার মতো সন্ধ্যাতারাটি
তবে তাকে পুঁতে দেবে অন্ধ গোশালায়।
ম’রে গেলে বোঝা যাবে তাকে।

জল স’রে গেলে ধরা দায়
এইখানে জলাশয় ছিল,
আগুন নিভে গেলে অগ্নিমুখ অসহায়
পাকা ধান ঝ’রে গেলে মাঠে
ইঁদুরও পাবে না তার গর্তের প্রমাণ।
মরা খুব একটা ঘটনা নয়, আবার বিষয়ও :
যদি মরি নিস্তব্ধ প্রহরে
যদি মরি তোমার গোচরে
হে পুত্র! প্রিয় আমার
কবরে নামাবার আগে ভস্ম করে দিও
আমার সকল কর্ম-সমাচার
মুছে ফেলো কোনো চেনা নাম
একজন হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

কবিতাটি লিখেছেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী নিজেই। ব্যক্তির অভিপ্রায় অনুরণিত হয়েছে কবিতায়। শব্দ চয়নে, বিষয়-বিন্যাসে, নির্মাণশৈলীতে, চিত্রকল্পে তাঁর কবিতা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। পরিমিতিবোধ, কবিতার বুনন ও ভাষাশৈলীর কারণে তিনি পরিণত হয়েছেন কবিতার অনিবার্য ব্যক্তিত্বে। তিনি দেশের একজন অগ্রগণ্য কবি। যদিও সাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত বিচরণ। কবিতা ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস, শিশুতোষ গ্রন্থ, প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা।
হাবীবুল্লাহ সিরাজীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- দাও বৃক্ষ দাও দিন, মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি,মধ্যরাতে দুলে ওঠে গ্লাশ, নোনা জলে বুনো সংসার, সিংহদরজা, বেদনার চল্লিশ আঙুল, কতো কাছে জলছত্র, কতোদূর চেরাপুঞ্জি, সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না, বিপ্লব বসত করে ঘরে, কাদামাখা পা, যমজ প্রণালী, ভুলের কোনো শুদ্ধ বানান নেই, শূন্য, পূর্বে না উত্তরে, ইতিহাস বদমাশ হ’লে মানুষ বড়ো কষ্ট পায়, একা ও করুণা, পায়ে উর্বর পলি, কবিতাসমগ্র।
সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।
গত ২৪ মে ২০২১ রাত ১১ টায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। যে মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা।