ময়ুখ চৌধুরী। বাংলাদেশের সাহিত্যে এক অনিবার্য ও দুর্দমনীয় নাম। কবি, সমালোচক, প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক প্রভৃতি পরিচয়ের মধ্যে তার কবি পরিচিতিই সবচে উজ্জ্বল। ১৯৮০-এর দশক থেকে সাহিত্যকর্মে নিজস্ব কাব্যস্বরের জন্য তিনি বোদ্ধামহলের দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কবি ময়ুখ চৌধুরী ১৯৫০ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রামের দক্ষিণ নালাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মূল নাম আনোয়ারুল আজিম। আজ তাঁর ৭১ তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে কবিকে শৈলী টিভি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও কামনা করছি তাঁর দীর্ঘায়ু।
সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর লেখালেখি করবেন বলে কলা বিভাগে অধ্যয়ন করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এবং ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৮-৮৩ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কবি ময়ুখ চৌধুরী তার কবিতায় কঠিন ও গভীর তত্ত্বকেও খুব সহজে উপস্থাপন করতে পারেন। একেবারে নিটোল ছন্দে ঝর্ণার চলমান নৃত্যে। কবিতাকে তিনি গভীর অরণ্য থেকে টেনে এনেছেন মানুষের মুখোমুখি, বাস্তবতার দিকে। তাঁর কবিতায় উপমার ব্যবহার একবোরেই স্বতন্ত ও উজ্জ্বল। প্রেম তার কাব্যের প্রাণ, উপমা ও শব্দালঙ্কার তার দেহ। এ আত্মা ও দেহের সমন্বয়ে কবি। কবি ময়ুখ চৌধুরী সম্পর্কে কবি রাশেদ রউফ বলেন, ‘মযুখ চৌধুরীর কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁর ধ্বনি-মাধুর্য। তার প্রায় প্রতিটি কবিতায় আছে আদিম অপূর্বতা। এক একটি পংক্তির ভেতর তিনি সৃষ্টি করেন সুরের সম্মোহন, যা সঙ্গীতের মতো হানা দেয় মগজে; যাকে হারানো যায় না। যাকে ভোলা যায় না। তাঁর কবিতার অনন্য স্বর, স্বকীয় লেখালেখির তেইশ বছর পর তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ কালো বরফের প্রতিবেশী প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। এবং সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘চরণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুুণ্ডু হীন’ প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। সম্পাদনা করেছেন ‘প্রতীতি’ ও ‘কবিতা’ শিরোনামের দুটি সাহিত্যকাগজ। তিনি চার দশক ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন বর্তমানে অবসরে আছেন। সাহিত্য অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে- ‘কালো বরফের প্রতিবেশী’-১৯৮৯, ‘অর্ধেক রয়েছি জলে, অর্ধেক জালে’-১৯৯৯, ‘তোমার জানলায় আমি জেগে আছি চন্দ্রমল্লিকা’ -২০০০, ‘প্যারিসের নীলরুটি’ ২০০১, ‘আমার আসতে একটু দেরি হতে পারে’-২০০২, ‘পলাতক পেণ্ডুলাম’ -২০১৫, ‘ক্যাঙ্গারুর বুকপকেট ’-২০১৬, পিরামিড সংসার-২০১৭, জারুলতলার কাব্য -২০১৮, ‘রণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুণ্ডুহীন’।