রহীম শাহ। বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে যে কজন শিশুসাহিত্যিক নিজ প্রতিভায় সমুজ্জ্বল তিনি তাঁদের অন্যতম। কিশোর কবিতা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। আজ তাঁর ৬২তম জন্মদিন। শৈলী টিভি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই অভিনন্দন।

রহীম শাহ দীর্ঘ চার দশক ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থেকে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। মূলত শিশুসাহিত্য চর্চা করলেও সাহিত্যের সব কটি শাখায় তিনি লিখে চলেছেন সমানভাবে। লেখালেখিতে নিজেকে সবসময় সচল রাখতে সচেষ্ট থাকেন তিনি। ক্লান্তি তাকে কখনো স্পর্শই করতে পারে নি। কবি ও শিশুসাহিত্যিক রহীম শাহ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কবি শামসুর রাহমান বলেছেন, ‘রহীম শাহ একজন নিষ্ঠাবান ছড়াকার’। তিনি যেমন পরিশ্রমী তেমনি মেধাবী। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করে যাচ্ছি অনবরত। যদি একটি ভালো লেখা আমার হাত দিয়ে আসে, সে অপেক্ষায় আছি। একটি ভালো লেখার জন্য চেষ্টা করতে করতে অনেকগুলো বই হয়ে গেলো’। একটি ভালো লেখার প্রত্যাশায় তিনি অনেকগুলো ভালো লেখে এবং প্রচুর গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন। কবিতা-ছড়া, গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ, বিজ্ঞান, জীবনী, ভ্রমণকাহিনী, অনুবাদসহ শতাধিক গ্রন্থের জনক তিনি। এছাড়াও তিনি মুক্তিযদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন প্রচুর, রয়েছে তার সম্পাদিত বেশ কিছু সংকলনও।
কবি রহীম শাহ ১৯৫৯ সালের ৩ অক্টোবর চট্টগ্রামের পশ্চিম বাকলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম কে এম আবদুস শুকুর এবং সৈয়দা রিজিয়া বেগম। তাঁর শৈশব কাটে চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম বাকলিয়ায়।
রহীম শাহ কর্ম জীবন শুরু করেন সাংবাদিকতা দিয়ে। ১৯৮১ সালে যোগ দেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক নয়াবাংলায়। ১৯৮৯ সালে পাড়ি জমান ঢাকায়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন ১৯৮৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। এরপর দৈনিক প্রভাত, দৈনিক সকালের খবর এবং বিডিনিউজ২৪ ডটকমে সাংবাদিকতা করেন।
তিনি পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা শাপলা দোয়েল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং এনসিসি (নেচার কনজারভেশন কমিটি)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে তিনি একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অর্জন করেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়াও পুরস্কারের ঝুলিতে একে একে জমা হয়েছে পালক অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৭), অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক (২০০৩), জসীমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার (২০০৫), আরশীনগর সম্মাননা পদক (২০০৫), মাওলানা ভাসানী স্মৃতি পুরস্কার (২০০৬), আমরা কুঁড়ি শিশুসাহিত্য পদক (২০০৬), শিশু-কিশোর নাট্যম শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), আবদুল আলীম স্মৃতি পুরস্কার (২০০৮), কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পুরস্কার (২০০৮), নেতাজি সুভাষ বসু পুরস্কার (২০০৮), কবি গোবিন্দচন্দ্র দাশ সাহিত্য সম্মাননা (২০০৯), কথন শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৯), অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১০), নওয়াব ফয়জুন্নেসা স্বর্ণপদক (২০১১), লাটাই ছড়াসাহিত্য পুরস্কার (২০১৫), জাতীয় সাহিত্য পদক (২০১৬), প্রতীকী ছড়াসাহিত্য পুরস্কার (২০১৭), শ্রীপুর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (২০১৭), বঙ্গবন্ধু সিএনসি পদক (২০১৮), বাঙালির কণ্ঠ লেখক পুরস্কার (২০১৯), মহাত্মা গান্ধি পিস অ্যাওয়ার্ড (২০১৯), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯), কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পদক (২০২০), অমিকন সম্মাননা (২০২০), এসকেডি আমার বাড়ি শিশুসাহিত্য সম্মাননা (২০২১)।