তারায় ঝলমলে আকাশ
হঠাৎ হলো মলিন
জোছনা ভরা চাঁদ তুমি
আঁধারে হলে বিলীন
এ স্মৃতি শুধু কাঁদায়
ঠাঁয় নিয়েছ ইতিহাসের পাতায়-মোঃ হাবিবুল্লাহ
এত যে বিষাদ চারিধারে আজ! উত্তুরে হাওয়া হাহাকার করছে কান্না হয়ে। অথচ আজকের দিনটি তো এমন হবার কথা ছিল না। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আজ যে দেবশিশুর আগমন হয়েছিল তার জন্মোৎবের আলোক ছটা মেঘে মেঘে ভেসে বেড়াবার কথা ছিল। কথা ছিল তেতুলিয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিয়ে যাওয়ার।
কীভাবে করব আমরা আজকের দিনকে বরণ?
জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইতিহাসের কলংকজনক হত্যাকা-ের নির্মম শিকার সেই রাসেলের হত্যাকারী আমরা নিজেরাই। এ দিনটি চিরদিনের জন্য বিষাদ ভরা হয়ে রইল। আর কোন দিন প্রত্যুষে হাসবে না সূর্য। রাত জাগা পাখির ডানায় করে বিষাদ মাখা ভোর আসে প্রতি বছর।
তার আজ ৫৭ তম জন্মদিন। কিন্তু কোথাও কোন আলো নেই। সে সময় কতইবা বয়স ছিল তার? ১০ বছর । ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম তার । সবার প্রিয় সে ফুটফুটে ছেলেটি জন্ম নেয় ধানম-ি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায়। তার হাসু আপা কোলে তুলে নিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল।
‘আব্বু বাট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে বাংলায় ব্যাখ্যা করে শোনাতেন।
মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে, নিজের ছোট সন্তানের নাম রাখলেন রাসেল’-শেখ হাসিনা
সেই শিশুকাল থেকেই রাসেলের সবকিছু যেন ছিল ব্যতিক্রম। বড় বোনকে হাসুপা বলে ডাকত। কামাল ও জামালকে ভাই বলত আর রেহেনাকে আপু। কামাল ও জামালের নাম কখনও বলতো না। সবাই অনেক চেষ্টা করত নাম শেখাতে, মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে বলতো ভাই। দিনের পর দিন যখন চেষ্টা করে গেলেন -একদিন বলেই ফেলল, ‘কামমাল’, ‘জামমাল’,।
বঙ্গবন্ধু যখন কারাগার যাপন করতেন তাঁর সঙ্গে প্রতি ১৫দিন পর পর পরিবারের লোকেরা দেখা করার জন্য যেত। রাসেলকে নিয়ে গেলে আর আসতে চাইতো না। খুবই কান্নাকাটি করতো। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুর বাসা জেলখানা আর তারা তাদের বাবার বাসায় বেড়াতে এসেছে।
১৯৭১সালের মার্চ মাসে যখন অসহযোগ আন্দোলন চলছে, তখন বাসার সামনে দিয়ে মিছিল যেত আর মাঝে মধ্যে পুলিশের গাড়ি চলাচল করত। দোতলায় বারান্দায় রাসেল খেলা করত, যখনই দেখত পুলিশের গাড়ি যাচ্ছে তখনই চিৎকার করে বলত, ‘ও পুলিশ কাল হরতাল’। স্লোগান দিতো ‘জয় বাংলা’।
যুদ্ধকালীন সময়ে রাসেল আব্বার জন্য খুব কান্নাকাটি করত। তার ওপর আদরের কামাল ভাইকে পাচ্ছে না, সেটাও তার জন্য কষ্টকর। চোখের কোণে থাকতো সব সময় পানি। যদি জিজ্ঞাসা করা হতো,‘কী হয়েছে রাসেল?’ বলতো-‘চোখে ময়লা’। অবাক লাগে, এতটুকুন একটা শিশু কীভাবে নিজের কষ্ট লুকাতে শিখল।
১৯৭৫ সালের পনের আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল ছোট্ট রাসেলকে। মা, বাবা,দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচা সবাই লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়।
তখন সে বারবারই বলছিল, ‘মায়ের কাছে যাবো।’ মায়ের কাছে নেওয়ার নাম করেই হত্যা করা হয় শিশু রাসেলকে। কেন? কেন? কেন? আমাদের রাসেলকে এত কষ্ট দিয়ে কেড়ে নিল? আমরা কি কোনোদিন এই ‘কেন’র উত্তর পাব?
শেখ রাসেল। বাঙালির শৈশবকাল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বঙ্গবন্ধুর কনিষ্টপুত্র সকলের আদরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল। রাসেল আমাদের ক্ষমা করো ভাই। আমরা অপরাধী। রাসেল আমার বন্ধু, আমাদের বন্ধু, লাখো কোটি শিশুর বন্ধু। সবশেষে বলতে চাই,
`ছোট্টমণি রাসেল সোনা আমাদেরই ভাই
এই ফুলবাগানে আমরা আছি রাসেল শুধু নাই
শেখ রাসেল শুধু নাই।’