রমা চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত বীরাঙ্গনা। তিনি বহু গ্রন্থের লেখক। যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মহান স্বাধীনতাকে পেয়েছি রমা চৌধুরী তাদেরই একজন। আজ তাঁর ৮০ তম জন্মবার্ষিকী। এই জন্মদিনে শৈলী টিভি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা।
রমা চৌধুরী ১৯৪১ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
রমা চৌধুরী ১৯৬২ সালে কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন। এরই মধ্যে আসে উনিশো একাত্তর, স্বাধীনতা যুদ্ধ।
১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর বিদুগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবেই কমরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ রমা চৌধুরীর সামনে মূর্তিমান আতংক হয়ে দাঁড়ায়। এই সময় তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে দেশান্তরী হয়ে যান। দুই সন্তানকে নিয়ে রমা চৌধুরী পৈতৃক ভিটা পোপাদিয়ায় বসবাস শুরু করেন
১৯৭১ সালের ১৩ মে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিজ বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর উপর চালায় শারীরিক নির্যাতন। সম্ভ্রম হারানোর পর পাকিস্তানি দোসরদের হাত থেকে পালিয়ে পুকুরে নেমে আত্মরক্ষা করেছিলেন। সেই দিনকার ভয়ঙ্কর সেই চিত্রের যে বর্ণনা তিনি তাঁর ‘একাত্তরের জননী’ গ্রন্থে লিখেছেন তা সত্যিই লোমহর্ষক। তা কখনোই ভোলার নয়।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘যখন আমাকে নির্যাতন করতে উদ্যত হলো পাক সেনা, তখন জানালার পাশে দাঁড়ানো আমার মা ও দুই ছেলে বারবার আকুতি করছিলেন। ছিল আমার পোষা বিড়াল কনুও। তখন আমি মাকে আমার সন্তানদের নিয়ে সরে যেতে বলেছিলাম।’
শেষ বয়সের বেশ কটি বছর তিনি যাপন করেছেন একাকী জীবন। পরিবারের বাইরে। সময় কাটিয়েছেন লেখালেখি করে। বইগুলো তিনি ফেরি করে ফিরতেন। সংসার চালাতেন বই বিক্রির টাকায়। তাঁর প্রায় আঠারোটি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। চট্টগ্রামস্থ লুসাই ভবনের ৪০৮ কক্ষটি ছিলো তার আবাসস্থল সাথে ছিলেন বেশকিছুৃ বিড়াল। তার বিড়ালদেও আলাদা নাম ছিলো। তাদের নিয়ে বইও লিখেছেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একই সঙ্গে পরিচালনা করেছেন ‘দীপংকর স্মৃতি অনাথালয়’ নামের একটি অনাথ আশ্রম। প্রচণ্ড কষ্টের জীবন কাটলেও তাঁর দু’চোখে স্বপ্ন ছিল সুখ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।