রাজকৃষ্ণ রায় বাংলা সাহিত্যে এক স্মরণীয় নাম। তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক বিশেষ অবদান রাখেন। আজ তার ১৭২ তম জন্সবার্ষিকী। শৈলীটিভি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে তার প্রতি রইলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। রাজকৃষ্ণ রায়ের জন্ম ১৮৪৯ সালেপ ২১ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার রামচন্দ্রপুরে। পিতার নাম রামদাস রায়। প্রাতিষ্ঠানিক তেমন শিক্ষা ছিলো না। তাঁর লেখাপড়ার প্রতি প্রচ- আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও শৈশবে তার বাবাকে হারিয়ে বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে তিনি বঞ্চিত হন। কিন্তু তার লেখাপড়া থেমে থাকেনি। তিনি নিজেই নানা স্থান থেকে বই পত্র যোগাড় করে স্বশিক্ষিত হয়েছিলেন। আর আর্থিক অনটন কাটাতে চাকরির আশায় নিউ বেঙ্গল প্রেসে কাজে যোগ দেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন না করলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে আর কাজের মাঝে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। অর্জিত কর্মদক্ষতায় ২১ বৎসর বয়সে ১২ টাকা মাসিক বেতনে আলবার্ট প্রেসের ম্যানেজার হন। কিন্তু তার জন্ম শুধু প্রেসের একজন কর্মচারী হওয়ার জন্য নয়। তিনি এখান থেকেই ১২৮৫ বঙ্গাব্দে মাসিক পত্রিকা ’বীণা’ প্রকাশ করেন। এই পত্রিকাতেই তার কবিতা নাটক প্রভৃতি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। নিজেকে একজন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরে ১২৮৭ বঙ্গাব্দে তিনি ‘বীণাযন্ত্র’ প্রেস স্থাপন করেন। কিন্তু লোকসানের ফলে প্রেস বিক্রি করে ১২৯৪ বঙ্গাব্দে ঠনঠনিয়ায় ‘বীণারঙ্গভূমি’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে স্বরচিত পৌরাণিক নাটক ‘চন্দ্রহাস’ এবং অন্যান্যদের নাটক ও প্রহসন অভিনয় করতে থাকেন। একজন নাট্য অভিনেতা হিসেবে নিজের পরিচয় ঘটে।
১২৯৭ বঙ্গাব্দে ঋণের দায়ে রঙ্গভূমি হস্তান্তরিত হলে ১২৯৮ বঙ্গাব্দে স্টার থিয়েটারের বেতনভোগী নাট্যকার হিসেবে নাটক লেখা শুরু করেন। তিনি লিখেছেন প্রচুর। বিদ্রুপাত্মক কবিতার সাহায্যে জাতির চেতনা সঞ্চারে বেশ ভুমিকা রেখেছেন। ‘ভূতলে বাঙ্গালী অধম জাতি’ কবিতা তার প্রমাণ। ‘ভারতগান’ কবিতামালার প্রত্যেকটিতে দেশপ্রেমের কথা বলেছেন, আবার অলস, ভীরু, স্বার্থপর জাতি সম্বন্ধে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন। তিনি অনেক প্রন্থ প্রকাশ করেছেন। সম্ভবত, রাজকৃষ্ণ রায়ই প্রথম বাঙালি যিনি সাহিত্যকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৮১ সালে ‘হরধনুভঙ্গ’ নাটকে তিনি সর্বপ্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার করেন। আবার ‘বর্ষার মেঘ’ কবিতা ও ১৮৮৪ সালে রচিত ‘রাজা বিক্রমাদিত্য’ নাটকে গদ্য-কবিতা রচনায় তার প্রয়াস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজকৃষ্ণের প্রথম কাব্যগ্রন্থ- ‘বঙ্গ ভূষণ’(১৮৭৪) আর শেষ রচনা ‘বেনজীর বদ রেসুনীর’(১৮৯৩)। ‘ভারতকোষ’ নামে ভারতবর্ষ সম্পর্কিত প্রথম বিশ্বকোষের সঞ্চালক ছিলেন তিনি । এছাড়াও রামায়ণ ও মহাভারতের পদ্যানুবাদ করেছেন। রাজকৃষ্ণ রায় রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল – ‘পতিব্রতা’, ‘নাট্যসম্ভব’, ‘তরণীসেনবধ’, ‘লায়লা মজনু’(১৮৯১) গীতিনাট্য, ‘ঋষ্যশৃঙ্গ’(১৮৯২) গীতিনাট্য, ‘দ্বাদশ গোপাল’(১৮৭৮) পৌরাণিক নাটক,‘অনলে বিজলী’(১৮৭৮) পৌরাণিক নাটক, ‘লৌহ কারাগা’(১৮৮০) নাটক, ‘হরধনুভঙ্গ’(১৮৮২) নাটক, ‘বামনভিক্ষা’, ‘হিরন্ময়ী’, ‘কিরণময়ী’,’আগমনী’,’নিভৃত-নিবাস, ‘অবসর-সরোজিনী'(১৮৭৬), ‘বেলুনে বাঙালীবিবি’ (১৮৯০) সামাজিক প্রহসন, ‘লোভেন্দ্র গবেন্দ্র’ (১৮৯০) সামাজিক প্রহসন, ‘দুই শিকারী'(১৮৮২).’অদ্ভুত ডাকাত'(১৮৮৯), ‘জ্যোর্তিময়ী'(১৮৮৯), ‘খোশগল্প'(১৮৮০-৮৫) গল্প সংকলন। রাজকৃষ্ণ রায় মাত্র ৪৫ বৎসর বয়সে সালের ১১ই মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।