ছোটদের পাতা কিংবা শিশুসাহিত্য কাগজ সাহিত্য জগতে বেড়ে ওঠছে খুবই অনাদরে অবেহেলায়। সাহিত্যজগতে প্রতিষ্ঠতরা যদিও অধিকাংশই শিশুসাহিত্য চর্চার মাধ্যমে নিজেকে উত্তরণ করেছেন কিন্তু এ বিভাগটিকে দেখেন অবজ্ঞার দৃষ্টিতে। বাংলা একাডেমি শিশুসাহিত্যিকদের পুরস্কৃত করে তাদের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ন রেখেছেন।
শিশুদের কাগজ সম্পাদনা করা একটি কঠিন কাজ। একে তো ছোটদের কাগজ ছোটরা কিনতে পারে না। বড়রা করে অবজ্ঞা। আজকাল পত্রিকায়ও ছোটদের পাতার প্রতি দেখাচ্ছে তাদের অবহেলা। এই ছোটদের পত্রিকার যদি একেবারে গোড়ার দিকে যাওয়া যায় তাহলে মনে পড়ে একটি পত্রিকার নাম। সেটি হল সবুজপাতা। এই সবুজপাতার সম্পাদক ছিলেন শিশুসাহিত্যিক স্বপন বুড়ো, যার আসল নাম অখিল নিয়োগী। তিনি ১৯০২ সালের ২৫ অক্টোবর টাঙ্গাইলের সাঁকরাইলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১১৯তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
অখিল নিয়োগী একজন শিশুসাহিত্যিক, সম্পাদক, অঙ্কন শিল্পী। তিনি স্বপনবুড়ো ছদ্মনামেই অধিক পরিচিত। অখিল নিয়োগীর পিতার নাম গোবিন্দ চন্দ্র নিয়োগী ও মাতা ভবতারিণী দেবী। পিতা টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী হাই স্কুলের নামকরা প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং সিটি কলেজ থেকে আই.এসসি. পাশ করে সরকারি আর্ট কলেজে ভর্তি হন। তখনই ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় তার ধারাবাহিক উপন্যাস ‘বেপরোয়া’ প্রকাশিত হয়। আর্ট কলেজে ছাত্র থাকাকালে ‘আর্টিস্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ র প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন ‘চিত্রা’ নামে একটি পত্রিকায় কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসাবে অখিল নিয়োগী কর্মজীবন শুরু করেন। বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে অঙ্কনশিল্পী হিসাবে তার প্রথম যোগাযোগ। পরে গীতিকার, নির্দেশক, অভিনেতা প্রভৃতি ভূমিকায় তাঁকে দেখা গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় শ্রীনিকেতনের ওপর যে তথ্যচিত্র তৈরি হয়, তিনি তার চিত্রনাট্যকার ছিলেন। ‘মুক্তির বন্ধনে’ ছবিটি তিনি পরিচালনা করেন। ১৯৪৫ সাল থেকে যুগান্তর পত্রিকার ‘ছোটদের পাততাড়ি’ বিভাগের নিয়মিত লেখক ও পরিচালক ছিলেন। সেই সূত্রেই ‘সব পেয়েছির আসর’ গড়ে তোলেন। শিশু সাহিত্য সৃষ্টি ও পত্রিকা প্রকাশে স্বপনবুড়োর বিশেষ দক্ষতা তৈরি হয়েছিল। এই দক্ষতার কারণেই তিনি পরে নিজের শিশুসাহিত্য পত্রিকা মাসিক ‘সবুজপাতা’ প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন।
‘স্বপনবুড়ো’ ছদ্মনামে তিনি ছোটদের জন্য গান লিখতেন এবং ক্রমে এই নামেই অধিক পরিচিত হন। ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক শিশুরক্ষা সমিতির আহ্বানে ভিয়েনা যান। সম্মাননা সাহিত্যিক হিসাবে তিনি কয়েকটি পুরস্কার ও পদক পান। ১৯৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাঁকে বিদ্যাসাগর পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে।
অখিল নিয়োগীর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- ‘বাবুইবাসা বোর্ডিং’, ,‘বনপলাশীর ক্ষুদে ডাকাত’, ‘বাস্তুহারা’, ‘পঙ্ক থেকে পদ্ম জাগে’, ‘ধন্যি ছেলে’, ‘কিশোর অভিযান’, ‘পালা-পার্বণ ছড়াছন্দ’, ‘ভুতুড়ে’, ‘দেশ’, ‘খেলার সাথী’। ১৯৯৩ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। লেখক : সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক