সতীশদের দ্বি-তল কাঠের বাড়িটা দীঘির পাশে বাঁশঝাড় ঘেঁষা, লোডশেডিং -সন্ধ্যায় জোনাক পোকা দেখা যেত কখনো সখনো। অন্য গাছের পাশে গন্ধরাজ ফুলের গাছ ছিলো।কেনো জানি গন্ধরাজ ফুল স্বাতীকে তীব্রভাবে টানতো।সুগন্ধির জন্য নাকি অন্ধকারে সাদা রঙটা ভাল্লাগতো বলে যেমন ভালো লাগে জোনাক পোকা।এখন অবশ্য শহরে এ পোকা তেমন নেই!
পথটা ছিলো সবুজ ঘাস বিছানো স্বাতীদের বাড়ি ডিঙিয়ে সরু মতো রাস্তা।একটা মাধবীলতার ঝাড়ও ছিলো। যা কিনা দূর থেকে বাড়িটার বৈকালিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতো, দূরবিন দিয়ে দেখতে অসাধারণ লাগতো!
এক ঝাঁক ছেলেমেয়ে খেলাধুলা করার এক ফাঁকে ওই পথে আসতো যেতো। ভাঙা পথ নাকি রাাঙাপথ না কোনো নামই যুতসই না, সরু পথও নয় – শেষ পর্যন্ত সবুজ পথ নামটা পছন্দ হলো।
স্বাতীদের বাড়ির পাঁচিলের ফোঁকর গলে দেখতো সে, সেইটা ওর দূরবিন দেখা। বন্ধুদের এমনই বলতে শুনেছি।
দোতলায় দাঁড়িয়ে একজন মনোযোগী সবকিছু দেখতো। স্বাতীর অন্যমনস্কতাকে যে কিনা কবিতাবন্দি করেছিলো। পাড়ার একটা ম্যাগাজিনে সেটা ছাপা হওয়ার পর তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তবে ছদ্মনামে লেখা বলে ধরতে অসুবিধা হয়েছিলো। একজন স্বাতীকে ঠাট্টা করে বলে ফেললো-‘তোর দূরবীনে সব দেখা যায়।মানুষ দেখতে পাস না?
শুনে স্বাতী একটু হকচকিয়ে উঠেছিলো। ধীরে ধীরে স্কুল থেকে হাইস্কুলের চৌকাঠ পেরিয়ে কলেজে প্রবেশ করে। নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নেয় সে। আত্মমগ্নতার ধ্যান কাটাতে না কাটাতে চাকরি।তারপর বিয়ে হলে ঘোরতর সংসারী। তবে, কাব্যলক্ষীকে সে বিসর্জন দেয়নি,নিত্যসঙ্গী করেছিলো।
কিছুদিন আগে নতুন করে স্বাতীদের বাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করলো। বাবাকে সে কানে কানে বলেছিলো পাঁচিলের সেই ফোকরটা যেন বন্ধ করা না হয়। স্বাতীর উৎকন্ঠা লাগছিলো সেটা বন্ধ করলে, সে কিভাবে ফিরে পাবে তার দূরবিন দেখা ছেলেবেলা।