আস সালাতু আস সালামু আলাইকা এয়া হাবিবআল্লাহ। আজ পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.)। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী,আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের কাণ্ডারী, রাহমাতুলিল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আল্লাহর জমীনে শুভাগমনের দিন। আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন শুধু ইসলাম ধর্মের নয় সমগ্র মানবজাতীর কল্যাণস্বরূপ। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী এবং জ্ঞানী।
খৃষ্টীয় ৫৭০ সালের ১২ রবিউল আউয়াল মক্কা নগরীর কোরাইশ বংশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মায়ের নাম আমেনা। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে তিনি পিতৃহারা হন। শৈশবেই তিনি হারিয়ে বসেন তাঁর মাকে। তৎকালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন। এই রীতি অনুসারে হযরত মুহাম্মাদকেও হালিমা (অপর নাম হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেয়া হয়। এই শিশুকে ঘরে আনার পর হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে সমর্থ হন।
দুই বছর লালন-পালনের পর হালিমা শিশু মুহাম্মাদকে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু মুহাম্মাদকে পুনরায় হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে। এতে তার আশা পূর্ণ হল। ইসলামি বিশ্বাস মতে এর কয়েকদিন পরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে — একদিন শিশু মুহাম্মদের বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেন ফেরেশতা জিবরাইল ও ফেরেশতা মিকাইল। এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে বক্ষ বিদারণের ঘটনা হিসেবে খ্যাত। এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়সে তিনি তাঁর মাকে হারান। এরপর দাদা আবদুল মুত্তালিব এবং চাচা আবু তালিবের কাছে লালিত পালিত হন। শৈশবকাল থেকেই তিনি ছিলেন অন্য শিশুদের চেয়ে স্বতন্ত্র। কথাবার্তায়, আচার আচরণে খুব সহজেই তিনি সবার প্রিয়জন হয়ে ওঠেন। কিশোর বয়সেই তিনি সবার কাছে আল আমিন রূপে গৃহীত হন। একটি সুন্দর ও নৈতিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তিনি স্থানীয় কিশোরদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন ’হিলফুল ফুযুল’ নামক সংগঠন। যুবক মুহাম্মাদের মহানুভব এবং সত্যবাদীতার কথা জানতে পেরে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান। মুহাম্মাদ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদিজার পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান। মুহাম্মদ (সা.) এর সততা ও ন্যায়পরায়নতায় মুগ্ধ হয়ে খাদিজা তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে পরিবারের সম্মতিতে তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। চল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ নবুওয়ত লাভ করেন। ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মাদ প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তার স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাকে খাবার দিয়ে আসতেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এমনি একদিন ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে আল্লাহ প্রেরিত বাণী নিয়ে আসেন এবং তাকে পড়তে বলেন : ‘পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে’। সূচনা হয় একটি নতুন অধ্যায়ের। প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। মুহাম্মাদ এর আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন তার সহধর্মিণী খাদিজা। এরপর মুসলিম হন মুহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী, ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি মক্কাবাসীদের থেকে অনেক নির্যাতন ও অপমান সহ্য করেছেন। মুহাম্মাদ ও আবু বকর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। এদিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইসলামী বর্ষ পঞ্জিকায় হিজরী সালের গণনা শুরু হয়। সেখানে তিনি ইসলামের প্রসার করতে থকে। অবশেষে ৬৩২ সালের ১১ হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল তিনি ইহজগত ত্যাগ করেন।