বিপুল বড়ুয়া। সাহিত্যের নানা শাখার তাঁর পদচারণা স্বচ্ছন্দ। ছড়া লেখেন। ছড়ার একটি বইও বের হয়েছে। নাম-‘নোটন নোটন’। আধুনিক কবিতার পথেও তিনি পা বাড়িয়েছেন। কিশোরকবিতা লেখেন অত্যন্ত উঁচু মানের। ছড়াগুলো ছোটো ছোটো। ভাঙা ভাঙা লাইন। গাঁথুনি আঁটোসাঁটো না হলেও ছন্দের গতি নির্ভুল। কিশোরকবিতার বিষয় প্রকৃতি, দেশ, কৈশোর-আশ্রিত অনুষঙ্গ। এক ধরনের বিষণ্নতার সুর লেপ্টে থাকে এ সব কবিতায়। দুঃখ বেদনা ও মন খারাপের ছাপ লক্ষ করা যায় তাতে। কবিতাগুলো পাঠের মাধ্যমে পাঠক নরম সহজ সাবলীল ও সুন্দর মনের এক কবির সন্ধান পান অনায়াসে।
অন্যদিকে ছোটগল্প রচনায় বিপুল বড়ুয়া অনন্য। ছোটোদের ও বড়দের-উভয়ের জন্য তিনি গল্প লেখেন দু’হাতে। পঞ্চাশ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন সাধনায় লিপ্ত আছেন তিনি। বড়দের গল্পে তিনি সৃষ্টি করেন বাস্তবতার মায়া। মোপাসাঁ যাকে বলেছেন ‘ইল্যুশন অব রিয়েলিটি’। কবিতার মতোই ছোটগল্পেও উপমা আছে। প্রতীক আর চিত্রকল্পের ব্যবহার আছে। আমরা দেখি বিপুল বড়ুয়ার ছোটগল্পেও মননশীলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। তাতে ঘটনাভিত্তিক কাহিনি যেমন থাকে, তেমনি থাকে একটি সুন্দর উপসংহার।
ছোটোদের জন্য রচিত গল্পে বিপুল বড়ুয়ার কল্পনাশক্তির প্রখরতা আমরা প্রত্যক্ষ করি। ছোটোরা কী চায়, সেটা তিনি জানেন বলেই গল্পকে সেদিকে নিয়ে যেতে পছন্দ করেন। তবে সব ধরনের রচনায় বিপুল বড়ুয়ার ব্যক্তিক চরিত্র ফুটে ওঠে। স্বভাবে লাজুক, বিনম্র, ভদ্র ও অনুসন্ধিৎসু মনের কিশোরকে আমরা দেখি তাঁর গল্পের চরিত্রে। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর তিনটি গল্পগ্রন্থ, যেগুলো কিশোর পাঠককে উচ্ছ্বসিত করতে সক্ষম। গ্রন্থ তিনটি : ‘নীলক্ষেতের দুপুর’, ‘জেম সাহেবের বেল’, ‘বিনুর মুক্তি দেখা’।
বিপুল বড়ুয়া পেশায় সাংবাদিক। যদিও দেরিতে এসেছেন পেশায়, ১৯৯৪ সালে। যোগ দেন দৈনিক আজাদীতে। ২০১০ সাল হতে অদ্যাবধি দৈনিক কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরো বার্তা বিভাগে কর্মরত। জন্ম চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার হাইদচকিয়া গ্রামে ১৯৫২ সালের ১৩ অক্টোবর। বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত। চট্টগ্রাম একাডেমির পরিচালক
বিপুল বড়ুয়া সম্পাদনা করেছেন উস্তাদ অমিতাভ বড়ুয়া স্মারকগ্রন্থ, চট্টগ্রাম একাডেমি বইমেলা স্মারক।
লেখালেখির জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।