কোরবান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান পুরুষও নারীর ওপর কোরবানী ওয়াজিব। আদম আঃ থেকে শুরু করে সব নবীর যুগেই কোরবানী পালিত হয়েছে। আল্লাহ ও তার রাসুলের শর্তহীন আনুগত্য, ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষা আছে কোরবানীতে। ঈদুল আযহার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে কোরবানী। এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানী দিয়ে থাকি। পশু উৎসর্গ করতে হবে এক আল্লাহর এবাদতের উদ্দ্যেশে যার কোন শরীক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। তিনি বলেন আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার ইবাদত করবে। (সুরা জারিয়াতঃ ৫৬)।
আল্লাহ তাআলা সুরা কাউসারে বর্ননা করেছেন “তোমার প্রতিপালকের উদ্দ্যেশে সালাত আদায় করো ও পশু কোরবানী করো।
প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনা ছিলো হযরত ইব্রাহীম আঃ এর আত্মত্যাগের কঠিন পরীক্ষা। আর ঐ পরীক্ষায় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) উত্তীর্ণ ও হলেন নিজ ছেলে আঃ কে আল্লাহর কোরবানী দিতে সেচ্ছায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আমাদের কোরবানী প্রকৃতপক্ষে হজরত ইব্রাহীম আঃ এর অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতিচারণ।
কোরবানিতে তাকওয়ার আবেগ অনুভূতি নেই,আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই কোরবানির কোন মূল্য নেই। বনের পশুকে কোরবানির মাধ্যামে মনের মায়ার দাগ কাটলে হৃদয়ে আসবে শুদ্ধতা। শুদ্ধতা লাভের জন্যই তাকওয়া যা অর্জনের জন্য কোরবানির ঈদুল আযহা। মানুষ আত্মস্বার্থ ত্যাগ না করে, তাকওয়া ভুলে গিয়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে পশু করোবানি দিয়ে ভূরিভোজে আনন্দ উপভোগ করে। নিজের নাম ফুটানোর জন্য আমি অত লাখ টাকা দিয়ে কোরবানী করেছি আত্মীয়স্বজনের কাছে বলতে থাকে। অহরহ ও প্রতিনিয়তই মিথ্যা কথা বলছি আমরা । আমরা কেবল অর্থ সম্পদ আর আভিজাত্যের পেছনে লাগামহীন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ছুটছি।এর বাইরে অন্য কোন দিকে ফিরে তাকানোর সময় যেনো নেই। অথচ এসব মুসলিম সমাজের চিত্র নয়। আল্লাহ পবিত্র কোরআানে বলেছেন,” তোমরা দুনিয়াবাসীকে রহমত করো “। সুরা বাকারা – ১৯৫
হযরত মুহম্মদ সাঃ বলেছেন যার দ্বারা মানবতা উপকৃত হয়, মানুষের মধ্যে তিনিই উত্তম।
অথচ মুসলমানদের কাছে মানবসেবাটাই সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয়।
আমাদের ভেতর লুকিয়ে থাকা শয়তানরূপী পশুটাই সত্য ও সুন্দরের পথে পথচলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এই পশুত্বই আমাদের মনের সুকোমল প্রবৃত্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই কোরবানীর শিক্ষা গ্রহন করে সুন্দর সমাজ নির্মাণ করতে হলে আমাদের সবাইকে নিজেদের ভেতরের পশুত্বকে কোরবানি করতে হবে। আমাদের মন থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ লালসা দূর করতে হবে। গড়তে হবে সুন্দর মন। তাহলেই ঈদুল আজহা স্বার্থক হবে এবং আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানী ও সার্থক হবে।