আজ অহিংস রাজনীতির প্রবর্তক মহাত্মা গান্ধীর ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী। আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস। ২০০৭ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ থেকে বিতারিত করতে অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনটি ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। এ দিনটিতে স্বাধীন ভারত আন্দোলনের এ মহান নেতার প্রতি রইল শৈলী টিভির অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মহাত্মা গান্ধী। যার পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা। মহাত্মা গান্ধী বিশ্ব মানবতার কাছে এক অবিস্মরণীয় নাম। যার জীবনের মূলমন্ত্রই ছিলো অহিংস পরম ধর্ম। তিনি ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘গান্ধীজি’ হিসেবে সমধিক আদৃত। পেশায় তিনি ছিলেন আইনজীবী। ১৮৮৮ সালে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আইনব্যবসা শুরু করেন। ওকালতির কাজে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলে সেখানে এশীয়দের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক আচরণে শিকার হন গান্ধী। এবং এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন হিসেবে তিনি বেছে নেন অহিংস পন্থা। সেখানে ব্রিটিশ বর্ণবাদী শাসনের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নামেন। ১৯১৪ সালে দেশে ফিরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন।
সত্য আর অহিংসাকে পাথেয় করে জীবন চলাতে পছন্দ করতেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামেও গান্ধীর অহিংস পন্থা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গোখলে। তিনি কৃষি ও কুটিরশিল্পভিত্তিক আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের ওপর জোর দিয়েছিলেন, যা মূলত গ্রামভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে। ভারতে ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক কুখ্যাত রাওলাট আইন পাশ এবং জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধী আন্দোলন শুরু করেন।
ভারতের ‘স্বরাজ’ বা স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশবিরোধী ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এইসব আন্দোলন সংগ্রামের জন্য তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছে। সব পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ ও সত্যের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অটল। সাধারণ জীবনযাপন করা এই রাজনীতিবিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আশ্রম। গুজরাটি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর বেশ কিছু প্রবন্ধ রয়েছে। যা প্রকাশিত হয়েছে ইংরেজিতে কয়েকটি খ-ে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে মহাত্মা বলে অভিহিত করেন। আর তিনি ভারতবাসীর প্রিয় ‘বাপুজি’।
১৯৩০ সালে গান্ধী প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন। লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে হাঁটেন ৪০০ কিলোমিটার পথ, যা ছিল ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সূত্রপাত। পরের দিনগুলোতে তিনি ছিলেন উপমহাদেশের রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্তা।
ভারতের স্বাধীনতার পর রাজনীতি থেকে অবসর নেন তিনি। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আততায়ীর গুলিতে এই মহান নেতা নিহত হন।