মেয়েটার ছবির দিকে তাকালাম। বেশ লাবণ্যময়ী। প্রথম নজরেই ভালো লেগে যায়। চেহারায় কেমন একটা মায়া। মনে মনে ঠিক করলাম একেই নেবো আমার অফিসে। এরপর আরও অনেকগুলো ছবি দেখলাম। ছবি মানে ঠিক ছবি নয়। আবেদনপত্রের সাথে লাগানো পাসপোর্ট সাইজের ফটো। কিন্তু ওই মেয়েটির মতো আর কাউকে মনে ধরলো না। ম্যানেজারকে ডেকে বাছাইকৃত আবেদনপত্র বরাবর ইন্টারভিউ কার্ড পাঠাতে বললাম। ম্যানেজার আবেদনপত্রগুলো নিয়ে চলে গেলো। ওহ! আপনাদেরকে তো আমার পরিচয়ই দেওয়া হয়নি। আমি নাবিল সারওয়ার। একটি বহুজাতিক কোম্পানির এম.ডি.।আমার একজন পি.এস.লাগবে। তাই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করে দিয়েছিলাম শুধু মহিলা প্রার্থীরা আবেদন করবেন। তারপরও প্রচুর আবেদনপত্র পড়েছে। সকালবেলা ম্যানেজার সে কথা বলাতে আবেদনপত্রগুলো নিয়ে বসেছিলাম দুপুরে। তার মধ্যে অতসী মজুমদার নামের ওই মেয়েটিই আমার নজর কাড়লো। নাম দেখে মনে করেছিলাম হিন্দু। পরে বায়োডাটা দেখে বুঝলাম মুসলিম। সাধারণত এমন নাম মুসলিম মেয়েদের খুব কমই শোনা যায়।

যথানিয়মে ইন্টারভিউ হয়ে গেলো। মোট পনেরোজনকে ডেকেছিলাম। অতসী ইন্টারভিউতে বেশ ভালোই করলো। ভাইবাবোর্ডে সরাসরি দেখলাম ওকে। স্মার্ট, সুদর্শনা মাঝারি গড়নের অতসী প্রথম দর্শনেই সবার নজর কাড়ে। কথা বলে বুঝলাম মেয়েটা বিনয়ীও। মনে মনে খুশি হলাম।ঠিক এমন একটি মেয়েই খুঁজছিলাম। এর আগেও আমার পিএস ছিল। তবে মেয়ে নয়,ছেলে। দারুণ এডজাস্ট করে চলছিল আমার সাথে। আমি ওর ওপর বেশ নির্ভরশীলই হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই ও আমাকে ছেড়ে গেলো। মালয়েশিয়ায় নাকি ভালো অফার পেয়েছে। সত্যি বলতে কি ওকে ছাড়তে আমার বেশ কষ্ট হয়েছিল,ওকে বলেছিলামও সে কথা। ও বিনয়ের সাথে বলেছিল দেশের বাইরে যাবার সখ ওর ছোটবেলা থেকেই। এ সুযোগ ও হাতছাড়া করতে চায় না। আমি ওকে আটকাইনি। যে যেতে চায় যাক। তবে এরপরই আমি সিদ্ধান্ত নিই, এবার আর ছেলে পি.এস. রাখবো না, মেয়েই রাখবো। ছেলেরা বড্ড উচ্চাভিলাষী হয়। সেই সূত্র ধরেই এই ইন্টারভিউর আয়োজন। শেষ পর্যন্ত অতসীকে এপয়ন্টমেন্ট লেটার পাঠিয়ে দিলাম।

আজ অতসী জয়েন করেছে। ওকে আমার রুমে বসাইনি। আমার রুমের সামনে বামদিকে একটা স্পেস আছে। ম্যানেজারকে বলে সে স্পেসটাকে একটু ডেকোরেশন করে অতসীর বসার ব্যবস্থা হয়েছে। ওর টেবিলটা এমনভাবে সেট করা হয়েছে আমার চেয়ার থেকে আমি ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। যদিও অতসী আমায় দেখতে পাবে না। কারণ বাইরে থেকে আমার রুমের ভেতরটা দেখা যায় না। ম্যানেজার হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার উদ্দেশ্য। বুঝলে বুঝুক,সাহসে তো আর কুলোবে না আমাকে কিছু বলতে। আমি দেখতে পাচ্ছি ম্যানেজার ওকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে। ও মাথা নেড়ে নেড়ে সব কাজ বুঝে নিচ্ছে। কেমন একটা স্নিগ্ধতা ওকে ঘিরে আছে। আমি আমার রুমে বসেই সে স্নিগ্ধতা টের পাচ্ছি। আচ্ছা, আমি কি খুব বেশি ভাবছি অতসীকে নিয়ে? ওকে নিয়ে এত ভাবার কী আছে? ও জাস্ট একজন কর্মচারী আমার। আমি আমার নিজে কাজে মন দিতে চাইলাম। কিছুক্ষণ কাজ করে মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো। কফি খেতে হবে। এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য অতসীকে আমার সঙ্গী করাই যায়। বেল দিয়ে পিয়নকে ডেকে অতসীকে আমার রুমে পাঠাতে বললাম।
অতসী রুমে ঢুকেই বললো,
-আসতে পারি স্যার?
আমি হাসিমুখে বললাম,
-আসো। আমি তোমাকে তুমি করেই বলবো।কারণ তুমি আমার অনেক ছোট।
অতসী খুব মিষ্টি হেসে বললো,
-অবশ্যই স্যার। আপনি তো আমাকে তুমিই বলবেন। স্যার,আপনি আমাকে ডেকেছেন?
আমি হেসে বললাম,
-হুম,ডেকেছি। তবে,কাজের জন্য নয়। এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য। তুমি আজ প্রথম জয়েন করলে,তাই তোমাকে কফি খাওয়াচ্ছি। কেমন লাগছে তোমার?
মনে হলো ও একটু বিব্রত হয়েছে। তবে মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-ধন্যবাদ স্যার। ভালো লাগছে।
এরপর কফি খেতে খেতে অতসীর পরিবার সম্পর্কে জেনে নিলাম। ওরা তিন বোন, ভাই নেই। বাবা চাকরি করেন,মা গৃহিনী। অতসী মেজো। ওর বড় বোন একটি কিন্ডারগার্টেনে পড়ায়। ওদের বাসা দেওয়ানহাট। জানতাম,অতসী মাস্টার্স দিয়েছে, তবে রেজাল্ট দেয়নি এখনো। সাধারণ মধ্যবিত্ত বলতে যা বোঝায় অতসীদের পরিবার তাই।
কফি খেয়ে অতসী নিজের কাজে গেলো। সমস্যা হলো ও চলে যাবার পর থেকে আমার খুব নিঃসঙ্গ লাগছে। আমার খুব ইচ্ছে করছে অতসীর সাথে আরও গল্প করতে। কিন্তু এটা মোটেও শোভনীয় নয়। অফিসের এমডি অফিস টাইমে বসে পি.এস.এর সাথে কফি খেতে খেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ করছে এটা একটা মুখরোচক খবর হবে অফিসে।তাই ওই চিন্তা বাদ দিলাম।
অতসী অফিসে জয়েন করার পর থেকে আমার কর্মোদ্দীপনা বেড়ে গেলো। আগে অফিসে যেতাম এগারোটায়। এখন সাড়ে নয়টার মধ্যে রোজ অফিসে পৌঁছি। বুঝতে পারি অফিসের কর্মচারীরা খুব বিরক্ত আমার ওপর। এতদিন অফিসটাইম নয়টা হলেও বেশিরভাগ আসতো দশটায়। এখন আমি সাড়ে নয়টায় আসাতে সবাইকে সাড়ে নয়টার মধ্যে আসতে হয়। অতসী খুব দ্রুত কাজ শিখে নিচ্ছে। মেয়েটা মেধাবী এবং চটপটে। কাজ একবার বুঝিয়ে দিলে খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারে। ম্যানেজারও খুব খুশি ওর ওপর।
কিন্তু আমি পড়েছি অন্য সমস্যায়। যতক্ষণ অতসীর সামনে থাকি,ততক্ষণ এক ভীষণ ভালো লাগা আমাকে ঘিরে থাকে। অফিস ছুটির পরই আমি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হই। ইচ্ছে করে নানা ছুতোয় অতসীকে আটকে রাখি। কিন্তু সেটা খুব দৃষ্টিকটু হবে। অন্ততপক্ষে ম্যানেজার বুঝে ফেলবে সব। আমার সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে হয়তো তার মনে। তাই সবার সাথে অতসীও বেরিয়ে যায়। আমি রাশভারি চেহারা নিয়ে অতসীকে বিদায় দিই।
আমি জানি অতসীর প্রতি আমার এ অতি আগ্রহ দোষণীয়। কারণ আপনাদের এতক্ষণ বলাই হয়নি আমি বিবাহিত। আমার দুটো সন্তানও রয়েছে। একজন ক্লাস ফোরে পড়ে,আরেকজন ওয়ানে। আমার স্ত্রীর প্রবল আগ্রহ সত্ত্বেও বাচ্চাদের আমি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াইনি। দুজনেই পাবলিক ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে পড়ে। আমার স্ত্রী সারাক্ষণ ওদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আসলে সত্যি করে বলি, আমি যেমনটি চাই আমার স্ত্রী ঠিক তেমনটি নয়। আমি চাই আমার স্ত্রী একটা বেণী অথবা খোঁপা করে, তাতে ফুল জড়িয়ে শাড়ি পরে আমার সাথে থিয়েটার দেখতে যাবে,কিংবা কোনো এক পূর্ণিমারাতে আমরা দুজন নৌকায় ঘুরে বেড়াবো। অথবা ঝুম বৃষ্টিতে আমরা দুজন সাগরপারে হাঁটবো ভেজা বালুতে পা ডুবিয়ে।
এসব ছোটখাটো রোমান্টিকতায় গা ভাসাতে আমার খুব ভালো লাগে। ও এসব একেবারেই পছন্দ করে না। ঘাড় পর্যন্ত কাটা ছোট চুলে ও জিনস-টপস কিংবা টিশার্ট-লং স্কার্টেই স্বচ্ছন্দ। থিয়েটার সে দেখেই না, নৌকাভ্রমণ, বালুকাবেলায় হাঁটা তার কাছে আদিখ্যেতা। বলতে গেলে আমরা দুজন দুভুবনের মানুষ। তবুও বাচ্চাদের কথা ভেবে আমরা সব মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি।
কিন্তু যত গ-গোল লাগালো ওই অতসী। ওকে দেখার পর থেকে জীবনকে নিয়ে আমার নতুন করে ভাবতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে আমি এতদিন যার অপেক্ষায় ছিলাম সে ওই অতসীই।
মনে মনে অনেককিছু ভেবে ফেললে কী হবে,এসব কথা অতসীকে বলার সাহস আমার নেই। মেয়েটা সহজ,সরল,সপ্রতিভ সব ঠিক আছে,তবে অসাধারণ ব্যক্তিত্বের বেড়াজালে নিজেকে ঘিরে রাখে। অফিসিয়াল কথার বাইরে ওর সাথে কথা বলতে কেমন একটা সংকোচ এসে বাধা দেয়। তাছাড়া অতসীকে বিয়ে করতে গেলে প্রথম স্ত্রীর সাথে আমাকে বোঝাপড়া করতে হবে। ওটা অতটা সহজে হবে না। এছাড়াও আমার বাচ্চা দুটোকে আমি খুব ভালোবাসি। প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাইলে বাচ্চা দুটো হয়তো মায়ের সাথে চলে যাবে। এটা আমি সহ্য করতে পারবো না। এসব ভাবনায় অসহনীয় দিনাতিপাত করছি আমি। যতক্ষণ অফিসে থাকি ভালোই থাকি। বাড়িতে আসলেই বার বার অতসীর চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাচ্চা দুটোর সাথে হেসে খেলে সময় পার করতে চাইলেও এক একটি রাত আমার কাছে দীর্ঘতর মনে হয়। এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় আমি ছটফট করি। আমার স্ত্রী অবশ্য বরাবরই আমার প্রতি উদাসীন। সে বাচ্চাদের নিয়েই মেতে থাকে। এর বাইরে সময় পেলে সে মায়ের বাসাতেই চলে যায়। আমাদের শারীরিক সম্পর্ক হয় না বললেই চলে। যদিও বা কখনো সখনো হয়, লজ্জার কথা কী বলবো, ইদানীং সে সময়টাতেও অতসী এসে হাজির হয় মনের পর্দায়।
আমি এক নিদারুণ সংকটে পড়ি। কী উপায়ে এ সংকট থেকে মুক্তি পাবো তা ভেবে কুলিয়ে উঠতে পারি না। ক্রমাগত বিষণ্নতা আমাকে গ্রাস করতে থাকে। কয়েকদিনের জন্য আমাকে চীনে যেতে হবে। ভাবছি চীন থেকে এসে অতসীর ব্যাপারটার একটা সুরাহা করবো। এভাবে আসলে চলা যায় না। আমাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতেই হবে। তাছাড়া আমি যে অতসীকে নিয়ে এতকিছু ভাবছি,অতসী তো সেসব কিছুই জানে না। আমি প্রস্তাব দিলেই যে ও হৈ হৈ করে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে তেমন তো না। ওর মতামতটাও জানতে হবে। ও আমাকে পছন্দ করে,শ্রদ্ধা করে সেটা আমি বেশ বুঝতে পারি,তবে পছন্দ কিংবা শ্রদ্ধা করলেই যে বিয়ে করতে রাজি হবে এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। তবে আপাতত শুধু অপেক্ষা! চীন থেকে এসেই সবকিছুর সুরাহা করবো। চীনে যাওয়ার আগের দিন অতসীকে বললাম,
-এবার চীন থেকে ফিরে তোমার সাথে জরুরী কিছু আলাপ আছে। ব্যাপারটা মাথায় রেখো।
কথাটা শুনে অতসী গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। ওর সে দৃষ্টিতে কী ছিল জানি না,তবে আমি ওর চোখে চোখ রাখতে পারলাম না। দৃষ্টি আনত করলাম।
চীনে এক সপ্তাহ থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পনেরোদিন থাকতে হলো। পুরো সময়টা এত ব্যস্ততার মধ্যে কাটলো,অতসীকে নিয়ে ভাবার পর্যন্ত সময় পেলাম না। ফেরার আগের দিন পরিবারের সবার জন্য টুকটাক গিফ্ট কিনলাম। অতসীর জন্যও একটা শাল আর একটা ব্যাগ নিলাম। দেশে ফিরে পরদিন অফিস গেলাম না। বাচ্চাদেরকে সময় দিলাম। এর পরের দিন অফিসে গেলাম একটু দেরি করেই। রুমে ঢোকার সময় খেয়াল করলাম অতসীর চেয়ারটা খালি।ও সিটে নেই। নিশ্চয় অন্য কারো টেবিলে গিয়ে আড্ডা পেটাচ্ছে। এ কয়দিন আমি অফিসে না থাকাতে হয়তো এ অভ্যাসটা পেয়ে বসেছে। সিটে বসে পিয়নকে দু কাপ কফি বানাতে বলললাম। পিয়ন আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলাম, কফি দু কাপ কেন ও জানতে চাইছে। গম্ভীর কণ্ঠে বললাম,
-অতসী ম্যাডামকে ডেকে আনো। উনাকেও কফি দেবে।
পিয়ন মুখ কাঁচুমাচু করে বললো,
-ম্যাডাম তো অফিসে আসেন না। আজকেও আসেননি।
ভ্রু কুঁচকে গেলো আমার। অতসী অফিসে আসে না মানে! কবে থেকে আসে না? পিয়নকে দিয়ে ম্যানেজারকে ডাকালাম। ম্যানেজার ঢুকেই একটা খাম আমার দিকে এগিয়ে দিলো। বললো,
-স্যার, অতসী মজুমদার চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। এটা আপনাকে দিতে বলেছেন।
আমার মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছিলো। কোনো কারণ ছাড়া অতসী হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিলো কেন? খামে নিশ্চয় চিঠি আছে। নিশ্চয় সেখানেই লেখা আছে কারণটা। আমি দ্রুত খামটা ছিঁড়ে চিঠিটা বের করে নিলাম। অতসী লিখেছে,
শ্রদ্ধেয় স্যার,
সালাম নেবেন। আপনি হয়তো এতক্ষণে খুব অবাক হয়ে গেছেন। ভাবছেন কেন আমি চাকরিটা ছেড়ে দিলাম! আসলে আমি বেশ কিছুদিন ধরে এর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আর একটা চাকরি জোটাতে আমার কিছুটা সময় লাগলো। ভাবছেন, কেন ছেড়ে গেলাম এমন সুযোগসুবিধাসম্পন্ন চাকরি? স্যার,সত্যি কথা বলতে কি আপনিই আমাকে বাধ্য করলেন চাকরিটা ছাড়তে।আপনি আমাকে সরাসরি না বললেও আমি বুঝতে পারছিলাম আপনার চোখের ভাষা। আপনি যে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছেন সেটা অফিসের সবাই বুঝতে পারছিলো। এমনকি ম্যানেজার স্যারও। এ নিয়ে বেশ কানাঘুষোও চলছিল। আপনার সুন্দর একটা পরিবার আছে। ক্ষণিকের মোহে আপনি ওদের প্রতি অবিচার করে সবার কাছে ছোট হয়ে যান এ আমি চাইনি। তাই নিজেকে আপনার চোখের আড়ালে সরিয়ে নিলাম। ভালো থাকবেন সবাইকে নিয়ে।
ইতি
অতসী মজুমদার
চিঠি পড়া শেষ করে খেয়াল করলাম পিয়ন এবং ম্যানেজার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার কান ঝাঁ ঝাঁ করছে। মনে হচ্ছে গরম বাতাস বেরুচ্ছে। অতসীর এ অন্তর্ধান আমার বুকটা ভেঙে দিলেও মুখে গাম্ভীর্যের আড়াল টেনে বললাম,
-ভালো অফার পেয়েছে,তাই চলে গেছে। থাক, ও ভালো থাকুক। ম্যানেজার সাহেব, আবার বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তবে মনে রাখবেন এবার কিন্তু ছেলে নেবো। মেয়েরা বড্ড খামখেয়ালী হয়।
ম্যানেজার একটু মুচকে হেসে বললেন,
-ঠিক আছে স্যার।
ম্যানেজার এবং পিয়ন রুম থেকে বিদায় নিলে আমি চেয়ারে গাটা এলিয়ে দিলাম। অতসীর সিটটার দিকে তাকিয়ে বুক চিরে বেরিয়ে এলো একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস।