জামাকাপড় বানিয়ে লুকিয়ে রাখা, কাউকে না দেখানো। কেউ দেখলেই ঈদ শেষ! সেই ঈদ কই? চান রাতে সবাই মিলে হাত ভরে মেহেদি পরা! সেই ঈদ কই? আমাদের শৈশবে টিউব মেহেদি ছিলোনা। কত কসরত করে মেহেদির ডিজাইন করতাম। আগে কলম দিয়ে হাতে আঁকতাম, পরে চিকন কাঠি দিয়ে সেই আঁকা ডিজাইনের উপর মেহেদি পরতাম।রঙ গাঢ় করার জন্য লেবুর রস দিতাম! মেহেদি নষ্ট হবে সেই অজুহাতে কাজকর্ম বন্ধ আর মায়ের বকুনি।খাট থেকে না নামার আরো একটা বাহানা ছিলো আলতা। আলতা পরলে আর নিচে নামানামি নাই। সেকারণে কতো বকা খেয়েছি মায়ের কাছে।আর সালামীর কথা তো বলে শেষ করা যাবেনা।ব্যাগ ভর্তি হয়ে যেতো সালামী দিয়ে।দল বেঁধে বন্ধুরা কাজিনরা বাড়ী বাড়ী বেড়াতে যেয়ে সালাম করা আর সালামী পাওয়া।
ঈদের একটা সুবাস ও ছিলো।যেটা ঈদের দিন ভোরে ঘুম ভাঙার আগেই নাকে এসে ম ম করতো।এখন আমি নাক পেতে সেই সুবাস খুঁজি। আহারে ঈদ।কি আনন্দ চারপাশে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জামা পাল্টিয়ে শেষ করা যেতোনা।
প্রবাসের ঈদ। দামী দামী গিফ্ট পাই।কিন্তু খুবই একাকী লাগে। কারো কারো প্রচুর লোকজন।আমার এলাকায় তেমন নেই কেউ। তাই পরিবার নিয়ে লংড্রাইভ আইসক্রিম এটুকুনই। আজকাল লম্বা সময় মা ভাইবোনদের সাথে ভিডিও কলে ঈদ উদযাপন করে প্রবাসীরা। তবে নানান ভাবে আনন্দ আসে ঘুরেফিরে। মানুষের আনন্দ কে থামিয়ে রাখা যায়না। ফল্গুধারার মতো আনন্দ প্রশ্রবণ মানুষের মানুষের মনে।হৃদয় খুঁড়ে মানুষ আনন্দ বের করে নিয়ে আসে। ভিন্ন ভিন্ন লোকালয়ে এই আনন্দের চেহারা একটু আলাদা এই আরকি।
ঈদ আসে ঈদ যায়।আনন্দ কেবলই চেহারা পাল্টায়।আগের চেহারা পাইনা।আতিপাতি করে খুঁজে মরি আমার প্রিয় ঈদ। রোজার ঈদ! কোরবানির ঈদ।কোরবানির দিন সকালে আমি ভয়ে বারান্দায় বের হতাম না। দাদু বলতেন দুই রাকাত নামাজ পড়ো যেন তোমার বাবার কোরবানি কবুল হয়। রান্না ঘরে খাবার ঘরে লাইন ধরে বুয়ারা চালের রুটি বানাতো।সেমাই আর খিচুড়ির সুগন্ধ আমাদের ঘিরে রাখতো।
আজ আর সেই সুবাস নেই।শৈশবের সুবাস।কোন মানুষই শৈশবের ঈদ আনন্দ ভোলেনা। পৃথিবীর যেখানেই থাকুক।