আজ অনেক বছর পর তালপুকুরের সেই শান বাঁধানো ঘাটে এসে বসলাম। সূর্য পাটে যেতে বসেছে। চারপাশে ঠান্ডা আবহাওয়া ঝিরিঝিরি বাতাস দুপুরের রোদের একটা গরম আভা এখনও আছে। হাঁসগুলো এখনো পুকুরের মধ্যখানে। আমি ঘাটের ঠিক মাঝখানে বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তাল পুকুরের অপর প্রান্তে —
পুকুরটিরও এখন যৌবনের ভাটা পড়তে শুরু করেছে। নেই আগের মতো জলে স্বচ্ছতা, সূর্যের আলোর সাথে জলের ঝিকিমিকি। পুকুর পাড়ের সেই নব গাছগুলো এখন অনেক বয়স পেরিয়ে ঝিমিয়ে গেছে। চারিদিকে তাল গাছে ঘেরা ছিল, পুকুরটি বাতাসে হঠাৎ ধপ করে তাল পড়ার শব্দ। তার সাথে ছিল আরো অনেক ছোট বড় গাছ। সেই সব গাছে এখন তেমন ডালপালা নেই, পাতাগুলো শুকিয়ে পোড়া পোড়া, পারেনা আগের মতো বাতাস ছড়াতে। আগে আমরা এই আমগাছ, পেয়ারা গাছ, বড়ই গাছে কতো চড়েছি। আর জলে নামার আগে অড়ল তো খেতেই হবে। অড়ল গাছগুলো নুয়ে পড়ত পানিতে আহা —-
মুহূর্তেই হারিয়ে গেলাম সেই কৈশোরে। দুষ্টুমী দামাল, ধাপাধাপি, হৈ হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখা সেই আমিতে—-
বাড়ির এই তাল পুকুরে সকাল বিকেল দু’বেলা আসা হতো -থ–সকালে স্নানে কয়েকজন মিলে একটু সময় নিয়ে আসা পুকুরে এক প্রান্ত থেকে ডুব দিয়ে সাঁতার কেটে অপর প্রান্তে যাবার প্রতিযোগিতা চলতো। মাঝ পুকুরে কতো কিছু হারিয়েছি, – পায়ের নুপুর, নাকের ফুল, হাতের গামছা, এরপর মায়ের বকুনি। চোখ টকটকে লাল হয়ে যেত পুকুরে ডুব দিতে দিতে। মায়ের ভয় একটাই অসুখ যদি হয় —
আজ পুকুর পাড়ে বসে সে সব সোনালী দিনগুলির কথা ভাবছি ইচ্ছে করছে খুব —এক মুহূর্তে যদি ইচ্ছাপূরণ ঠাকুর এসে বর দিত আর ফিরে পেতাম সেই কিশোরী কাল।
সাহসিকতার বিশ্বাস নিয়ে জলে নেমে পড়লাম চেষ্টা করলাম সাঁতার কাটতে। আগের মতো আর পারলাম না, থামিয়ে দিল ফেলে আসা দিনগুলি। জানিয়ে দিল তুমি আর নেই সেই তুমি।