মহামারি করোনা ভাইরাস, খাদ্যদ্রব্যগুলোতে ভেজাল মেশানো, কিশোর গ্যাং, নারী ধর্ষণের খবর শুনতে শুনতে অনেক সময় আমার শান্ত মন অশান্ত হয়ে পড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অস্থিরতা, মানুষের নীরব হাহাকার সম্পর্কে যখন খবরের কাগজে পড়ি তখন মন বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। বিবিধ চিন্তা চেতনা মাথায় রাখতে গিয়ে আমরা অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। বিগত সময়ে কাছের মানুষগুলোর ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনে নিজের মধ্যে দুঃশ্চিন্তার ছাপ পড়ে যায়। শত চিন্তা মাথায় নিয়ে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্য বের হয়। দীর্ঘ যাত্রা পথে বিভিন্ন অপরিচিত মানুষের সংস্পর্শে আসছি। জানিনা কখন কি হয়। বর্তমান সরকার যতেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানুষকে ভালো রাখার জন্য। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সচল রাখার জন্য এবং আমাদের জীবন জীবিকা থেমে না থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হবে। অনেকের মত আমিও অফিসে যাই। তিনবার গাড়ি পরিবর্তন করে কর্মস্থলে পৌঁছি। এই গাড়িগুলোতে কিছু সচেতন মানুষের পাশাপাশি অসচেতন মানুষ দেখা যায়। যে মানুষগুলোর অনেককে মাস্ক পরিধান করতেও দেখা যায়না। একবার এক অপরিচিত ভদ্রলোক আমাকে বলছেন, ভাই মানুষকে একদিন মরতেই হবে। আমার কপালে যদি করোনা কারণে মৃত্যু হয় তাহলে হবেই। অতএব মাস্ক পড়ার দরকার নাই। আমার কোনো কথা উনি মানতে নারাজ। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে। দেখলাম গাদাগাদি করে কিছু গার্মেন্টসে কর্মরত মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। যাদের একজনও মাস্ক পড়েনি। শ্রমিককে দেখলাম একে অপরের হাত ধরে বাসায় যাচ্ছে। মেয়েগুলোকে যখন বলা হলো তোমরা মাস্ক পড়নি কেন? তখন দেখা গেল সে কথা শুনে মেয়েগুলো হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাজারে যেতে হয় কেনাকাটা করার জন্য। আমি চেষ্টা করি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কিছু কেনার জন্য। কিন্তু দুঃখের সাথে লিখতে হচ্ছে বাজারে আসা অন্য ক্রেতা আমাকে সরিয়ে তিনি কিভাবে বাজার করবেন তার প্রতিযোগিতায় মশগুল থাকেন। মুদীর দোকানে গেলাম কিছু কেনার জন্য। সেখানেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে পারলামনা আরেকজন অসচেতন ক্রেতার জন্য। আমরা অনেকে সচেতন হয়েছি। তবে আরও সচেতন হতে হবে। রাস্তায় আন্তঃ জেলা বাস সার্ভিস বন্ধ থাকলেও এখন আগের মতো সামাজিক দুরত্ব মানা হয়না। আবার গাড়িগুলোতে স্যানিটাইজ ব্যবস্থাও নাই। সিএনজি অথবা অটোরিকশা করে প্রায় সময়অফিসে যায়। কিছুদিন গাড়িগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে দেখা গেলেও এখন আর আমার চোখে খুব একটা দেখা যাচ্ছেনা। এই ছোট ছোট গাড়ির মালিক সমিতিকে আমি অনুরোধ জানাব আপনাদের গাড়িগুলোতে প্রতিদিন কয়েকবার জীবাণুনাশক স্প্রে করার জন্য আপনাদের সদস্যদের উৎসাহিত করুন। আমাদের মতো নিয়মিত যাত্রীদের একটু নিরাপদ রাখুন। গত কয়েকদিন আগে বিশেষ একটা কাজে পরিচিত একটা প্রতিষ্ঠানে গেলাম। গিয়ে দেখলাম কোটি কোটি টাকা লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানটির জীবানুনাশক ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। আমি অনুরোধ করার পর শুনলাম তারা অনেক পরিবর্তন এনেছেন। যে বাসায় ভাড়া থাকি সে বাসার গেইট থেকে বাসা পর্যন্ত আমি জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করি যাতে প্রতিবেশীরা নিরাপদে থাকেন। মোট কথা আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। আরেকজনকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে হবে। করোনা ভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার চেষ্টা করব। এতে করে আমাদের সবার মঙ্গল হবে। সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।