শৈলীটিভি ডেস্ক ॥ প্রণব মুখোপাধ্যায় আর নেই। তিন সপ্তাহ দিল্লির আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেলে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে সব পক্ষের শ্রদ্ধা পাওয়া এই রাজনীতিবিদের। বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর গত ১০ অগাস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রণব। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার শরীরে করোণাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে তিনি চলে যান গভীর কোমায়। সেখান থেকে আর ফিরতে পারেননি।
তিনিই ছিলেন ভারতের একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতি। লেখক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এই মানুষটি আমাদের আত্মীয় তুল্য ছিলেন। ভারতের আর কোন প্রেসিডেন্ট এসে বলবেন, চট্টগ্রাম যাবেন? সূর্য সেনের ভিটে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি হবার পর বলেছিলেন, এখন তো সংসদে বা দলে কোন কাজ নাই আমার। অফুরন্ত সময়। এতো বড় ভবনে কি করবো বসে বসে? তাই এই সুযোগে এখানকার লাইব্রেরির সবগুলো বই পড়ে ফেলবো, যেন নিজের দেশকে আরো জানতে পারি। আজকাল ট্রাম্পের মতো পাগলা রাজা, রাশিয়ার পুতিনের মতো লৌহ কঠিন মানুষ, উত্তর কোরিয়ার কিমের মতো মাথা খারাপ বা ভাঁড়ের মতো ভাষণ দেয়া, উল্টো পাল্টা বলা মানুষরাই প্রেসিডেন্ট। তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। জ্ঞান স্পৃহা ও ভালোবাসা মিলেই তিনি ছিলেন অনন্য। করোনার সাথে যুদ্ধ করে টিকতে পারেন নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় রাজনীতির ‘প্রণবদা’ অনন্য ছিলেন পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নেওয়া আর বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষমতায়। ভারতীয় রাজনীতির বন্ধুর পথেও সবসময় তিনি ছিলেন শান্ত, স্থিতধী; বহুপক্ষীয় রাজনৈতিদক দর্শনে যার ছিল অসীম শ্রদ্ধা, যার প্রজ্ঞা, জ্ঞান, দক্ষতা আর স্মৃতিশক্তির প্রশংসা ছিল সব মহলে।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সামনের সারিতে থাকা এই রাজনীতিবিদ পার্লামেন্টেই কাটিয়েছেন ৩৭ বছর। ভারতের ইতিহাসে কংগ্রেসই সবচেয়ে বেশি সময় দেশ শাসন করেছে, আর প্রণব মুখোপাধ্যায় পালন করেছেন সরকারের বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং অর্থমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব।