“মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই
এর চেয়ে নামটি মধুর ত্রিভুবনে নাই”।

মা শব্দের সাথে জড়িয়ে আছে আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরতা। মায়ের বিশালতা কোন কিছু দিয়েই পুরোপুরি তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে এই ছোট্ট শব্দটি র মাঝে আছে আবেগ আর আত্মার সম্পর্ক।
একজন মানুষের পৃথিবীতে যে অস্থিত্ব তার পেছনে আছে একজন মায়ের দীর্ঘ নয় মাসের কষ্টসহিষ্ণু কাল। তাই মায়ের অবস্থান সবার উপরে। তার চেয়ে আপন এই জগতে কেউ নাই। সন্তানের কাছে তিনিই জগতে সর্বশ্রেষ্ঠা। মায়ের বুকের হৃদস্পন্দন সন্তানের কাছে সবচেয়ে পরিচিত।মায়ের বুকের দুধে শরীরে উষ্ণতায় সবার বেড়ে ওঠা। সন্তানের কাছে” মা” ডাকটি যেমন সবচেয়ে প্রিয়, তেমনি একজন মায়ের কাছে ও সন্তানের মুখ থেকে” মা” ডাক শোনাটিও সবচেয়ে ভালো লাগার মুহূর্ত। সন্তানকে বড় করবার জন্য একজন মা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সময়টা উৎসর্গ করেন। মা শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব ভালোলাগা, ভালোবাসা, আশা আবেগের সমারোহ। সন্তানের কাছে সবচেয়ে আপন, অতি নিকটের অতিশয় প্রিয় তার মা। পৃথিবীর সকল সম্পর্কের বেড়াজাল ছিন্ন করে সবাই চলে যেতে পারে কিন্তু মার স্নেহ, মমতা, ভালোবাসার বন্ধন কখনোই ছিন্ন হবার নয়।। মা এমনই একজন যিনি সারাজীবন শত কষ্টে সন্তানকে বুকের মধ্যে পরম যতেœ আগলে রাখেন। পৃথিবীর সব দেশেই মা শব্দটি সার্বজনীন। মা প্রথমে কথা বলা শেখা বলেই মায়ের ভাষা হয় মাতৃভাষা। আমাদের ইসলামে মায়ের মর্যাদা অসীম, মাকে মহান আল্লাহতায়ালাস্বীয় রাসুলের পাক(সাঃ) এর পরে সর্বোচ্চ আসন দিয়েছেন। সন্মানিত করেছেন অভাবনীয় মর্যাদার আসনে। বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত।বুখারী শরীফের এক হাদীসে আছে নবীকরীম( সাঃ) নিকট এক সাহাবী জিজ্ঞেসা করলেন আমার উপরে সবচেয়ে বেশী অধিকার কার? রাস্লু (সাঃ) বললেন তোমার মায়ের, এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করলেন এবং রাসুল (সাঃ) তিনবারই মায়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
মাকে স্মরণ করে জগদ্বিখ্যাত আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি,যা হতে আশা করি তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋনী।
নেপোলিয়ন বলেছিলেন আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব।
সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে একটি শিশু গাছে লিখেছিল” মা তুমি যেখানেই থাকো, সেখানে আমাদের ঘর”। সিরিয়া এখন জলন্ত অগ্নিকু-, মরনফাঁদ। সেখানকার মা ও শিশুদের এর থেকে বেদনার সময় আর কখনো হয়ত ছিলো না। এক মা তার ছোট্ট সন্তানটিকে বাঁচানোর জন্য আশ্রয় নিয়েছিলো শরণার্থি শিবিরে। শিশুটি বুঝেছিলো পৃথিবীতে মা- ই সব। তাই সে গাছে তার মনের কথা লিখেছিলো।ভারতের এ পি জে আবুল কালাম আজাদ এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ছোট বেলায় খুব অভাবের সংসার ছিলো তাঁদের। ঠিকমতো ঘরে খাবার থাকত না। সকাল বেলা মা সবাইকে দুটো করে রুটি খেতে দিতেন। ভাইবোনদের মাঝে তিনি ছিলেন মায়ের খুব আদরের, মা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে খেতে বসতেন। তিনি থালার সব কটি রুটি খেয়ে ফেলতেন। মা যে না খেয়ে থাকতেন সেটা খেয়াল করতেন না। একদিন তাঁর বড় ভাই বললেন কালাম তুমি কিছুই বুঝোনা, মা প্রতিদিন না খেয়ে থাকে। তুমি সবকটি রুটি খেয়ে ফেলো কেন? তখন তিনি মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন। এই মহাবিশ্বের হয়তো সবকিছুর বিকল্প আছে, নেই শুধু মায়ের। আমাদের জীবনে আমাদের মা-ই একমাত্র মানুষ যে ভিতর থেকে সবকিছু বুঝেন। মায়েদের বলে দিতে হয় না। সন্তানের মুখ দেখে সব কিছু বুঝেন। জীবনে যে মানুষের কাছে তার মায়ের স্নেহ, মমতা থাকে, সে সেই স্নেহ ভালোবাসা জোরে সারা পৃথিবী জয় করতে পারে। এমন কোনো পরিস্থিতি থাকেনা, এমন কোন অসুবিধে থাকেনা আমাদের জীবনে থাকেনা যা আমাদের মা ঠিক করে দিতে পারে না। আমার জানা মতে, সৃষ্টির আনন্দ অন্য আনন্দের থেকে বহুগুণ বেশী।আর যে মা আপনাকে দুনিয়াতে এনেছে, যে আনন্দ সে পেয়েছে সে সবসময় চাইবে সে আনন্দ ধরে রাখতে এবং সে আনন্দের উৎসকে সব থেকে বেশী যতœ করতে। আর এ কারনেই মা এর ভালোবাসার সমকক্ষ তো দূরের কথা এর ধারে কাছের কোন অনুভূতি যাবার সামর্থ্য রাখে না। তাই মাকে ভালোবাসুন, যেভাবে মা শিশুকালে আমাকে / আপনাকে ভালোবেসেছিলেন। বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হলে তাদের পাশে থাকুন যেভাবে আপনি / আমি নবজাতক থাকাবস্থায় তিনি পাশে ছিলেন। তাদেরকে আপনার সর্বোত্তম জিনিসটা দেন, নরম ও কোমল ব্যাবহার টুকু দেন। তাদের খাওয়া পরাকে অনর্থক খরচ মনে করবেন না। নইলে আপনি যে ভাবে অবহেলা করবেন সেভাবে আপনিও আপনার সন্তানের কাছে অবহেলিত হবেন।