কোন কোন লেখকের লেখা পড়তে পড়তে লেখার সম্পর্ক ধরে তাদের সাথে আমার অদেখা এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।এমন একজনের লেখা কিছুদিন দেখতে পাচ্ছিলাম না।ভাগ্যের বরাতে তাঁর সাথে দেখা হ’য়ে গেলে প্রশ্ন করেছিলাম ‘আপনি আর লিখছেন না কেন’?
উনি নিস্পৃহ কণ্ঠে উত্তর দিয়েছিলেন -‘লিখে কী হবে”।
কোন হতাশার গভীর থেকে তাঁর এই ক্ষেদক্তি আমার জানা হয়নি। কিন্তু তারপর থেকেই আমার কানে একই প্রতিধ্বনি “লিখে কী হবে”।
নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি লিখি কেন?
ভালো লাগে বলে?
সময় কাটাতে?
নাম কেনার আশায়?
এমন কতো কিছুই আমাকে ভাবায়।কতোজন কতো বিষয় নিয়ে লিখছে -নারী নির্যাতন, ধর্ষণ,কন্যাদিবস,করোনা,শিক্ষা, সামাজিক অবক্ষয়, রাজনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি।জাতির বোধে তাকি আঘাত হানছ? তা যদি হতো তব কেন সমাজ পাল্টাচ্ছে না? কেন মানুষ দিনদিন বিবেকশূন্য হয়ে বিপথগামী আজ?কিন্তু তাই বলে কি লেখক লিখবে না?
সত্যি বলতে কি কেউ শুনুক বা না শুনুক,পড়ুক বা নাই পড়ুক অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে লেখকের প্রতিবাদ করা ধর্ম।
সে অস্ত্র দিয়ে না হোক কলম দিয়ে হোক। অস্ত্রের চেয়ে কলমের জোর এতটুকু কম নয়।আবার প্রয়োজনে অস্ত্রও জ্বলতে দেখেছি সময়ের প্রয়োজনে।
সত্য সুন্দরের জন্য প্রতিবাদ করবেই লেখক। যাদের লেখা মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার মূল্যবোধটুকু জিইয়ে রাখে তাঁরা যদি বলে “লিখে কী হবে” তবে এই মূল্যবোধহীন ক্ষয়িত সমাজের ঘূণে ধরা বিবেককে কে জাগাবে?
প্রতিদিন যখন চারিদিকে মানবতা বর্জিত মানুষের মধ্যে থাকতে থাকতে হতাশার ভারে জর্জরিত হতে থাকি তখন একটিমাত্র লেখার জিয়নকাঠিতে প্রচুর পাঠক আশার আলো দেখতে পায়।খুব ছোটবেলায় বাবা আমার একটি লেখা পড়ে ডাইরি দিয়ে বলেছিলেন রোজ কিছু না কিছু
লিখবে।অভ্যাসটা করিনি। কিন্তু যখনই মনে মেঘ এসে ভর করে তখনই বর্ষণ অনিবার্য। তখন কী করে বলি “লিখি কি হবে?”
লেখার পরে লেখকের আনন্দানুভূতি কী সে লেখক মাত্রই জানে।
পাখি নিজের আনন্দে গায়
নদী নিজের আনন্দে বয়
লেখক নিজের স্বভাবে লিখবে।
এটাই নিয়ম।অনেক আগে যে ছাত্র বলেছিল,”আমি আমার ধর্মগ্রন্থ পড়ে তেমন আনন্দ লাভ করিনা,যেমন করি রবীন্দ্রনাথ পড়ে।
এটা কি পাপ?
আমি নিজের বিশ্বাসকে চেপে রেখে মনকে বলেছিলাম
যে লেখা মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে,যে লেখা
মানুষকে আনন্দ দেয় সেও তো ধর্ম।