এই পৃথিবীতে আমরা সকলেই সুখের পেছনে ছুটি। এটাই যেন নিয়ম, এটাই যেন স্বতঃসিদ্ধতা! শুনতে অবাক লাগলেও কিন্ত আশ্চর্যজনকভাবে এটা সত্যি যে, সুখকর অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে পরিবর্তন খুব কম ক্ষেত্রেই ঘটায়। বিপরীতদিকে, জীবনের কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, নিকটজনের মৃত্যু ইত্যাদি সহ যেকোন প্রকার দুঃখজনক অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনকে নিমিষেই বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে! দুঃখযন্ত্রণার অভিজ্ঞতা, যা যত বেশী তীব্র, তা জীবনে ততবেশি পরিবর্তন আনে। সেই পরিবর্তন সাময়িকভাবে অবশ্যই সুখকর হয়না কিন্ত সময়ের সাথেসাথে দেখা যায়, সেই দুঃখই আমাদের জীবনে চরম এবং পরম এক শিক্ষক হয়ে দাঁড়ায়। বেদনা আর অশ্রুজলের অভিজ্ঞতা না থাকলে সুখকে বোঝা বা তার কদর করা সম্ভব নয়। সোনা পুড়েপুড়ে খাঁটি হয়। যে প্রস্তরে শিল্পী যতবেশি সুনিপুণভাবে হাতুড়ির ঘা মারতে পারে, সেই প্রস্তরের মূর্তি ততবেশি সূক্ষ্ম অবয়বের হয়।
প্রথমপ্রেম ভাঙার কষ্টের সাথে কম করে হলেও ৯০শতাংশ ব্যক্তি অবশ্যই পরিচিত। কোনকোন মানুষ সেটাকে অভিশাপের মত সারাজীবন ধরে নিজের সাথে বয়ে নিয়ে চলে। ক্ষেত্রবিশেষে হতাশানিমজ্জিত আর অতিআবেগী কেউকেউ আবার নিজের জীবনটাকেই শেষ করে দেয়! কিন্ত এই স্বপ্নভঙ্গের বেদনাটাকে যদি একটু তেজ আর একরোখা ভাবের সাথে মিশিয়ে নিজের চরিত্রের মাঝে আনা যায়, দুঃখ ভোলার হাতিয়ার হিসেবে যদি পড়াশোনা বা নিজের কাজে আরো বেশি ডুবে যাওয়া যায়, তবে নিশ্চিতভাবে অলংকৃত এক অভীষ্টলক্ষ্যে মানুষকে পৌঁছে দেবে এই দুঃখই!
কষ্ট -ব্যথা, দুঃখ- যন্ত্রণা… এগুলো মানুষের জীবনে অভিশাপের ছদ্মবেশে আসলে বরদান! আনন্দ কি তা জানার জন্য অন্তত একবার হলেও দুঃখকে সকলের আলিঙ্গন করা উচিত। বিষাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভয়কে জয় করার মতই দুঃখকে জয় করার যে অভিজ্ঞতা তা মানুষের মাঝে জীবনপরিবর্তনকারী এক আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়।