সাঈদুল আরেফীন চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে এক বিশিষ্ট নাম। উন্নয়ন কর্মী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি সমধিক। দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন এসব জগতে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি যেমন আন্তরিক, তেমনি পরিশ্রমী।
সাঈদুল আরেফীনের প্রতিভা বহুমাত্রিক। একাধারে তিনি কবি, প্রাবন্ধিক, ফিচার লেখক, গল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক। রাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, নারী, শিশু অধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন গণমাধ্যমে। চট্টগ্রাম বেতারের নানা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন নিয়মিত। সংগঠক হিসেবেও তাঁর দক্ষতা আমরা প্রত্যক্ষ করি।
বড়দের জন্য কবিতা, প্রবন্ধ, ফিচার এবং গল্প লিখলেও সাঈদুল আরেফীন একজন সমাজসচেতন শিশুসাহিত্যিক। সহৃদয় স্নেহ ভালোবাসা ও পরম মমতায় তিনি গড়ে তুলেছেন ছোটোদের নিজস্ব জগৎ। যে জগৎ অত্যন্ত আপন, উদার ও বিশ্বস্ত। ছোটোরা যে ধরনের গল্প পড়ে নিজেদের মানসগঠনের ভিত্তি তৈরি করে, আনন্দ পায়, মজা পায়, ভরে ওঠে অন্তর; ঠিক সেরকম গল্পই লিখে থাকেন সাঈদুল আরেফীন। গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক সমাজবাস্তবতার নানান ছবি তুলে ধরেন ছোটোদের সামনে। যার কারেণে তারা জানতে শেখে জগৎ ও জীবনকে সপ্রাণ আন্তরিকতায়, চিনতে শেখে পরম আনন্দে। যে কোনো বিষয়কে সহজ, সরল ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা রাখেন সাঈদুল আরেফীন। তিনি শিশু মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে যেমন সচেতন, তেমনি প্রকাশভঙ্গিতে স্বতঃস্ফূর্ত ও যত্নশীল। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, সেটা হলো গল্পগুলোর বিষয় নির্বাচন। নানাবিষয়ে লেখা গল্পগুলো শুধু ছোটোদের মনকে আন্দোলিত করে না, বড়দেরও সমান আনন্দ দেয়।
‘মনে পড়ে জলকদর’ তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ। যেটি ২০১৪ সালে বেরোয়। ২০১৫ সালে বেরোয় তাঁর শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘ফুয়াদের ফিরে আসা’, ২০১৮ সালে ‘একাত্তরে দুই কিশোর’। সর্বশেষ ২০১৯ একুশে গ্রন্থমেলায় বেরিয়েছে কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘মশিহাটি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দাদু’, মুক্তিযোদ্ধা বাবু ও মানিক, কিশোর উপযোগী প্রবন্ধগ্রন্থ- ‘মহান ভাষা আন্দোলন ও এর নায়কেরা’।
সাঈদুল আরেফীন ১৯৬৮ সালের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর কোরবানীগঞ্জে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস বাঁশখালী উপজেলার জলদি গ্রামের নেয়াজর পাড়ায়। লেখালেখির হাতেখড়ি আশির দশকের মধ্যভাগে। দুই দশক আগে ‘যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (জেএসউএস)’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে এর পরিচালক (সামাজিক উন্নয়ন) ও অনারারী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা পদে অধিষ্ঠিত। শিক্ষা উন্নয়ন ও গবেষণামূলক কাজের প্রতি বরাবরই তাঁর ঝোঁক। চট্টগ্রাম নগরীর লামাবাজার সরকারি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জলদি হোছাইনীয়া কামিল এম এ ডিগ্রী মাদরাসার সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।