ছোটবেলায় বাংলা ব্যাকরণ পড়তে গিয়ে পড়েছিলাম ‘বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।’ বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে দান করেছে এক অভাবনীয় গতিময়তা। বিজ্ঞানের কল্যাণেই আমরা বলি পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। তথ্য প্রযুক্তির এই অবাধ প্রবাহে এর ইতিবাচক দিকগুলো যখন ম্লান হয়ে নেতিবাচক দিকগুলো সামনে আসে তখন সত্যিই দুঃখবোধ জাগে। কারণ এই প্রযুক্তির  নেতিবাচক ব্যবহার আমাদের আবেগ অনুভূতির বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে কিছু মানুষরূপী অমানুষ অবক্ষয়ের শিকার হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আর এই অবক্ষয় শব্দটির আজ নানামুখী ব্যবহার লক্ষণীয়। পত্রপত্রিকা, সামাজিক আলোচনা, টকশোর নানা আলাপ আলোচনায় অবক্ষয় শব্দটি নানাভাবে আলোচিত। অবক্ষয় শব্দটির আভিধানিক যে অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় তা হলো ‘হানি বা ধ্বংস’। যুব সমজের অবক্ষয় মানে যুব সমাজের বিনাশ বা ধ্বংসকেই  বোঝানো হয়। জীবনকে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন কিছু মানবিক গুণ, সে গুণগুলো যখন মানুষের লোপ পায়, সে মানুষ যখন সমাজ ও জাতির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় -আমরা ধরে নিই তার মধ্যে নীতি নৈতিকতার অবক্ষয় নেমে এসেছে। কিছু খারাপ আচার আচরণ তার মাঝে যখন পরিদৃষ্ট হয়, তখন সেগুলোকে আমরা মূল্যবোধের অবক্ষয় হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি। এই অবক্ষয়ের কারণে সে সুস্থ সুন্দর সমাজ থেকে এক ধরনের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং সমাজে নানা অপকর্মে জড়িয়ে নেতিবাচক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এ কারণে সে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, সুশাসনের বিঘ্ন ঘটানো, বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব বৃদ্ধি, দায়িত্ব এড়িয়ে চলার প্রবণতা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, পেশিশক্তির প্রভাব খাটানোসহ নানা নেতিবাচক কমর্কা-ে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। সর্বোপরি এক ধরনের লাগামহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়া এ সব তরুণ সমাজ ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি প্রকৃতিকে অস্থির করে তোলে। এই সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয় থেকে আমাদের বাঁচতে হলে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ। প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় অনুশাসন পালনসহ, সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে এই অবক্ষয়কে দূর করা আজ সময়ের শুধু প্রয়োজনেই শুধু নয়, আমাদের সকলের অনিবার্য দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। অবক্ষয়ের এ যুগে সবাই তীরটি ছুঁড়েন তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহকে। বিষয়টিকে অস্বীকার করবার উপায় নেই সত্যি, কিন্তু এই একটি কারণকে একমাত্র বলে ধরে নেয়া বোধ হয় ভুল হবে। অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটি একটি অবশ্যই। কিন্তু সময়ের ¯্রােতকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ঠিক তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়টির ¯্রােতধারাকে কখনো বেঁধে রাখা যাবে না। তবে এটা ঠিক এই নৈতিকতার অবক্ষয় সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে। সৃষ্টি করছে নানা অপরাধ। এই অবক্ষয় আমাদের চোরাচালান, রাহাজানি, ছিনতাই এর মত ঘটনার জম্ম দিচ্ছে। এ কারণে নানা ধরনের মাদক যেমন হেরোইন, গাঁজা,ইয়াবার মত মাদকে আসক্তি এবং ডাকাতি, চাঁদাবাজি ধর্ষণ, ইভটিজিং এর গুরুতর অপরাধে জড়াচ্ছে আমাদের যুব সমাজকে। আমাদের যুব সমাজের অনেকেকেই এসমস্ত অপরাধে জড়িয়ে, বিপথগামী হয়ে দেশ ও জাতিকে অন্ধকারে নিপতিত করছে। এই অবক্ষয়ের জন্য অনেক কারণ আমরা নির্ণয় করতে পারি। দারিদ্র আমাদের জন্য এক ধরনের অভিশাপ। বাংলাদেশ অনেক মানুষ এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। অর্থ বিত্ত না থাকলে মানুষের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ লোপ পায়। সমাজে অপরাধ প্রবণতা মাথাছাড়া দিয়ে ওঠে। যদিও বাংলাদেশ অনেকটাই দারিদ্র্রকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে, তবুও অন্যান্য আরো অনেক উপাদান সমাজে অবক্ষয় বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। পারিবারিক কিছু কারণ সমাজের অবক্ষয় নেমে আসার অন্যতম কারণ হতে পারে। একটি পরিবার গড়ে উঠে পিতামাতা সন্তান সন্ততি সবাইকে নিয়ে। এখানে বিদ্যমান থাকার কথা একটি চমৎকার পারিবারিক বন্ধন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় অনেক পিতামাতা তাদের নিজস্ব পেশায় এমনভাবে নিমগ্ন থাকেন নিজের সন্তান সন্তানাদি কোথায় কী করেন তার খোঁজ খবরই রাখেন না। এই উদাসীনতাই অনেক সন্তানকে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয়। আর এর পারিবারিক বন্ধনের বাইরে গিয়ে অনেকেই বিভিন্ন বন্ধুবান্ধবের সাথে মেলামেশা করে। এখানে নানান অসৎ সঙ্গদোষের সংস্পর্শে এসেও নিজেকে নানা ধরণের অবক্ষয়ে জড়িয়ে ফেলে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় অনেক ভালো ভালো পরিবারের সন্তানরা খারাপ বন্ধুবান্ধবদের সংস্পর্শে এসে নানা অপরাধে জড়িয়ে গেছে এ রকম উদাহরণ কম নয়। এখানে এ অবক্ষয় কোন দারিদ্র্যতার কারণে নয় বরং তা এধরনের অর্থবিত্তের দাপট কিংবা খারাপ সঙ্গদোষে। বেকারত্ব মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য কম দায়ী নয়। এদেশে এখন প্রচুর শিক্ষিত বেকার। এ বেকার শ্রেণি ছাড়াও আছে প্রচুর অশিক্ষিত বেকার। দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থবিত্ত থাকলে যে কোন জায়গায় থেকে আজ ডিগ্রি নেয়া যায়। সরকারি বেসরকারি অনেক কলেজে এখন বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পড়ানো হয়। ফলে দেশে প্রতিবছর প্রচুর ছেলেমেয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে। কিন্তু যে হারে শিক্ষিত ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। শিক্ষিত এ যুব সমাজের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করে। এ হতাশায় তাদের অনেক সময় নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত পথে পা বাড়াতে প্রলুব্ধ করে। আর এসমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের নজরই বেশি-তাদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য অন্যান্য ক্যারিকুলাম দিকে নজর দেন না বললেই চলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিন্তাচেতনার আকাশ-জমিন ফারাক। অথচ এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখনও অনেক কম। অনেক মানুষ এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। এক শ্রেণির মানুষের কাছে সম্পদের পাহাড়, আরেক শ্রেনির মানুষ সহায় সম্বলহীন। ধনীক শ্রেনির সন্তানেরা অর্থবিত্তের প্রভাবে অনেক সময় নানা অপরাধে জড়িয়ে যায়। ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা জরুরি। দারিদ্র্য যেমন অবক্ষয়ের কারণ, তেমনি অর্থবিত্তও একটি কারণ। সবকিছু একটি নির্দিষ্ট কাম্য সীমার মধ্যে থাকা উচিত। পারিবারিক ভাঙ্গন ও নিঃসঙ্গতার মত বিষয়গুলো অনেক সময় আমাদের সামনে চলে আসে। বর্তমান সময়ে সামাজিক বিনোদন মাধ্যমতো আছেই। আকাশ সংস্কৃতির অবাধ প্রবাহ অন্যতম কারণ। এছাড়া কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, নগর জীবনের বন্দি জীবন যাপন, নির্মল আনন্দ বিনোদনের অভাব সহ নানা কারণকে চিহ্নিত করা যায়। এখন এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক দায়বদ্ধতার আছে। সবচেয়ে যে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে অবক্ষয়ের এ বিষয়টি পারিবারিকভাবেই আমাদের নজরে রাখতে হবে। পরিবার হচ্ছে একটি শিশুর প্রথম পাঠশালা। অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাবার জন্য যে বিষয়টা দরকার শৈশব থেকে শিশুর মনে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রতকরণ। ছেলেমেয়েদের  শৈশবে নৈতিক মূল্যবোধে জাগ্রত করতে পারলে সে কখন অমানবিক কিংবা অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে না। শিশুদের মধ্যে শিশুকাল থেকেই তার নিজস্ব ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি সাহিত্য সংস্কৃতির বীজ বপন করা গেলে তার সুদূরপ্রসারী ভালো ফলাফল সুনিশ্চিত। অবক্ষয় থেকে রাখার বহুমাত্রিক উপায় হয়তো আছে, কিন্তু শিশু মনের ভিতরে সে ব্যাপারটি জাগ্রত করা গেলে সেটি দীর্ঘমেয়াদী ফলদায়ক হতে পারে। এখানে প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকারও। রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় হীন স্বার্থে আমাদের যুব সমাজ কে ব্যবহার করে। এই বিষয়গুলো নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত থাকা দরকার। মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে অনেকগুলো উপায় হয়তো আছে কিন্তু সবগুলো উপায় নিয়ে আলোচনা এ সীমিত পরিসরে সম্ভব নয়। এখানে হয়তো কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা যায়। সমাজে আদর্শবান ও সৎ ব্যক্তিরা যদি যথাযথ সম্মান ও মূল্যায়ন পান তাহলে এটা দেখে তাঁদের উত্তরসূরীরা অনুপ্রাণিত হতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকাও এক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ন নয়। দেশে শিল্পায়ন ও বিনোয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। এ সেক্টরটার উন্নয়ন করা গেলে দেশে অনেক কমর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এগুলোর সাথে অবক্ষয়ের ব্যাপারটার একটা ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। কারণ অবক্ষয়রোধ কল্পে শুধু কয়েকটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে অগ্রসর হলে চলবে না। বিশ্বায়নের এ যুগে বিশ্বের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনশীল। সেই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির আলোকেই আমাদের সবকিছু বিবেচনায় রাখতে হবে। আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে অপসংস্কৃতি ঠেকাতে আমাদের শিশুকিশোরদের জন্য নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রসার করতে হবে বিভিন্ন সমাজমূলক কর্মকা-ের। একটি সমন্বিত রাজনৈতিক অঙ্গীকারই অনেক কিছুর পট পরিবর্তন করে দিতে পারে। এখানে সাহিত্য সংস্কৃতির বিষয় টা নিয়ে নিয়ে আলোকপাত করা যেতে পারে গভীরভাবে। সাহিত্য সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় যে বৃহত্তর শিশুকিশোরদের সামিল করা গেলে এর ফল হতে পারে ইতিবাচক হতেই পারে। এ বোধ জাগ্রত করা যেতে পারে পরিবার থেকেই, তারপর তার শিক্ষা লাভ করা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু এদেশের প্রেক্ষাপটে সেই চর্চার ভিত অনেকটাই দুূর্বল। যার কারণে নৈতিক অবক্ষয়ের অধঃপতনের সীমা অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে। যে শ্রেণির শিশুকিশোররা এ অবক্ষয়ের শিকার তাঁদের অধিকাংশই এসব প্রাথমিক, মাাধ্যমিক, কিংবা কলেজ পর্যায়ের ছাত্রছাত্রী। আবার অনেকেই পড়াশুনার পাঠ চুকিয়েছেন এমনও আছে। ছাত্রছাত্রীদের তৃণমূল পর্যায়ে সুস্থ সুন্দর বিনোদন সংস্কৃতি চর্চা, সাহিত্য চর্চার বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক ভাবে ঢুকিয়ে দিতে পারলে অবক্ষয়ের মাত্রা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য বিষয়গুলোকে নিয়ে নির্ধারিত পাঠ্যসূচির বাইরে এ বিষয় গুলোকে বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্ত করে পুরস্কার কিংবা চূড়ান্ত পরীক্ষার নম্বরে যুক্ত করা যেতে পারে। বিনোদন,সাহিত্য সংস্কৃতিতে ব্যস্ত থাকা মানুষগুলো সবসময় সৃজনশীল কাজে ব্যাপৃত থাকে বলে তারা সহজেই অবক্ষয়ের দিকে পা বাড়ান না। কারণ মানুষ ধীরে ধীরে ভালো কাজের মাধ্যমে যখন নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে ফেলে,তখন তার দিয়ে কোন খারাপ কাজ সংগঠিত হওয়া খুব কঠিন। এ কাজগুলোর জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার। অবক্ষয় রোধে যারা শিশুসাহিত্য চর্চা করছেন, তাদের দায়বদ্ধতা তো আছে, যারা সাহিত্য নিয়ে নানামুখী কাজ করছেন, তাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। শিশুসাহিত্যিকদের দায়বদ্ধতা এখানে বেশিই বলা যায়। কারণ শিশুমনস্ক এমন বিষয়গুলো শিশুদের গল্প,ছড়া,কবিতায় এমন ভাবে তুলে ধরতে হবে যাতে এগুলোর মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা থাকে। এগুলো পড়ে যেনো শিশুরা যেন নিজের চিন্তা চেতনাকে আরো শাণিত করতে পারে। নিজের ভালো মন্দগুলো যেন উপলব্ধি করতে শেখে। শিশুদের নিজের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সৃজনশীল শিশুমনষ্ক সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে নিতে পারেন যথাযথ পদক্ষেপ এবং এটি সময়ের দাবিও বটে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান, পাঠ্যবইয়ের কলেবর বৃদ্ধি, সিলেবাসের ঘনঘন পরিবর্তন, প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের ডামাঢোলে চাপা পড়ে যায় এসব ভাবনা কিংবা এ বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে তেমন কেউ হয়তো গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনই না। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ছেলেমেয়েরা এক ধরনের যান্ত্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। তারা পাঠ্যসূচির বাইরে সৃজনশীল বিষয়-আশয় নিয়ে অতো ভাবেন না। ফলে অনেক ছাত্রছাত্রী মানবিক মূল্যবোধের বিষয়টি নিজের মন মননে ধারণ করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে না। ফলে অবক্ষয়ের বেড়াজালে কেউ কেউ সময়ে সময়ে জড়িয়ে যায়। এদেশের শিশুসাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কিন্তু এই সমৃদ্ধ সাহিত্য কতটুকু আমাদের শিশুকিশোররা গ্রহণ করছে বা তাদের কাছে আমরা কতটুকুই বা পৌঁছে দিতে পারছি তার পরিসংখ্যান থাকা দরকার। শিশুসাহিত্যের ভালো ভালো বই যাদের জন্য রচিত তারা যাতে সেটা পড়ে নিজেকে ঋদ্ধ করতে সে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। কারণ শুধু আইন প্রয়োগ করে, কিংবা আইন শৃংখলা বাহিনির হাতে অবক্ষয় দমনের ভার দিয়ে সেটা কমানো সম্ভব নয়। রোগ না হওয়ার জন্য বা রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করা যেমন রোগ নিরাময় বা রোগ থেকে দুরে থাকার অন্যতম উপায়, ঠিক তেমনি অবক্ষয় রোধের জন্য আগে থেকেই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির বীজ শিশু মনে রোপন, অনেকগুলো উপায়ের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতেই পারে। ইংরেজ কবি জন মিল্টন বলেছেন, ‘সাহিত্য এমন এক সুগন্ধি যা মানুষকে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়।’ মিল্টনের এ কথার সূত্র ধরে বলা যায় সাহিত্য সংস্কৃতির প্রসারতাই মানুষের মধ্যে সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনে প্রেরণা দেয়। অবক্ষয়ের মত জঞ্জাল সেখানে সহজে বাসা বাঁধতে পারে না।