চট্টগ্রাম একাডেমির ফয়েজ নুরনাহার মিলনায়তনে কবি শিশুসাহিত্যিক সুবর্ণা দাশ মুনমুন এর কিশোরকবিতা গ্রন্থ ‘হাওয়া গান ঝিরঝির ‘এর প্রকাশনা উৎসব গত ২৬ মে অনুষ্ঠিত হয়। কবি ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম-এর বিভাগীয় পরিচালক কাজী নাজিমুল ইসলাম। আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আলেক্স আলীম, শিক্ষক প্রশিক্ষক ড. শামসুদ্দিন শিশির, হুলাইন ছালেহ নূর কলেজের অধ্যক্ষ ছন্দা চক্রবর্তী, কবি অরুণ শীল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশুসাহিত্যিক আজিজ রাহমান। তিনি সুবর্ণা দাশের কিশোর কবিতা রচনাশৈলীর প্রশংসা করে বলেন, হাওয়া গান ঝিরঝির এর সবকটি কবিতায় প্রকৃতির সাথে কিশোর মনের যে মেলবন্ধন তা তিনি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন।কবির প্রকৃতির উপস্থাপন, ছন্দ, অন্ত্যমিল অসাধারণ। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন কিশোর কবিতায় সুবর্ণা দাশ মুনমুনের এই পথচলা সুদূরপ্রসারী হোক।
বিদগ্ধ আলোচক শিশু সাহিত্যিক অরুণ শীল কিশোর কবিতা নিয়ে বলেন, কিশোর কবিতা বাস্তবতা আর স্বপ্নের মাঝামাঝি জগত। সুবর্ণা দাশের কিশোর কবিতায় ছন্দের জাদুময়তা আছে। সবকিছু রং বদলায় সবকিছুর পরিবর্তন হয় তাই গতানুগতিকতা পরিহার করে নতুন নতুন সৃষ্টির কৌশলে পাঠককে মনোমুগ্ধ করে রাখতে হবে।
আলোচক অধ্যক্ষ ছন্দা চক্রবর্তী বলেন, কবিদের একটি তৃতীয় চোখ আছে আর আছে কল্পনাশক্তি। ছন্দ মিল মানুষকে বেশ আকৃষ্ট করে।বই মস্তিষ্কের সন্তান। হাওয়া গান ঝিরঝির বইটি পাঠ করে মুগ্ধ হলাম। অধ্যক্ষ ছন্দা চক্রবর্তী হাওয়া গান ঝিরঝির বই এর প্রায় প্রতিটি কবিতা নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেন এবং কবির বেশ প্রশংসা করেন ও কবিকে অভিনন্দন জানান।
আলোচক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লেখক ড. শামসুদ্দিন শিশির বরাবরই চমৎকার কথামালায় মুগ্ধ করেন।তিনি বলেন, মানুষের প্রয়োজনে যা কিছু আছে সবকিছু সুবর্ণা দাশ মুনমুন এর কবিতার মাঝে আছে।তার প্রতিটি কবিতায় সমাজ সংস্কৃতি আর প্রকৃতির অপরূপ মেলবন্ধনে তৈরি করেছেন।
বিদগ্ধ আলোচক লেখক অধ্যাপক আলেক্স আলীম সুবর্ণা দাশ মুনমুনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি অসাধারণ ছন্দময় কবিতা উপহার দেন।
কবিতাটি হলো…..
ভালো লাগে ফুল আর
ভালো লাগে পাখি
এইসব নিয়ে থাকে
মুনমুন নাকি!
তার হাতে জেগে উঠে
কৈশোরবেলা।
আকাশের নীল আর
কত কীযে মেলা।
সাগরের ঢেউ এসে
কত কথা কয়!
যৌবনে মুনমুন
কৈশোরময়।
ছন্দকে গায়ে মেখে
নদী যায় বেঁকে।
সূর্যের ছোঁয়া পাই
মুনমুন থেকে।
পথচলা সোজা নয়
হতে পারে ভুল।
কেউ দেবে ভালোবাসা
কেউ দেবে হুল।
মুনমুন মুনমুন
লিখে যাও আরও
চাঁদের জ্যোৎস্না হয়ে
প্রতিদিন বাড়ও।।
সত্যি এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হতেই পারে না।
প্রধান অতিথি কাজী নাজিমুল ইসলাম (বিভাগীয় পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম) বলেন, হাওয়া গান ঝিরঝির বইটির অসাধারণ প্রচ্ছদ হয়েছে । প্রত্যক মানুষের মধ্যে কবিসত্তা বিদ্যমান। কিশোর কবিতা কঠিন এক অনুষঙ্গ।ছন্দের মাধ্যমে আকৃষ্ট করতে হয় কিশোরদের। সুবর্ণা দাশ মুনমুন অত্যন্ত চমৎকারভাবে ছন্দের জাদুময়তা ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রতিটি কবিতায়। তিনি কবিকে অভিনন্দন জানান।
শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন কথাসাহিত্যিক দীপক বড়ুয়া, কবি সাহিত্যিক শৈবাল বড়ুয়া, শিক্ষক সংগঠক মাজহারুল হক, অধ্যাপক বদরুননেসা সাজু, কবি সাহিত্যিক জিন্নাহ চৌধুরী।
কবি সুবর্ণা দাশ মুনমুন কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ডা. কাজল কান্তি দাশ আশীর্বাদ জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। কবির কবিতা আবৃত্তি করেন দু’জন আবৃত্তি শিল্পী।
কবিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তাঁর সহপাঠী বন্ধুরা। আলোচনার ফাঁকে গুণীজনরা ‘হাওয়া গান ঝিরঝির ‘ বই এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
গণিতের ছাত্র হয়েও সাহিত্যের ফুল ফোটানো মানুষ আমাদের আলোকবর্তিকা বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক কবি সাংবাদিক রাশেদ রউফ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আদর্শ। তিনি তাকেই অনুসরণ করেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাউকে ছোট করে দেখতেন না। তাঁর অনুজ লেখকদের পিঠ চাপড়ে বলতেন তুমি ভালো লিখছো, এগিয়ে যাও।
তাই আমিও আমার অনুজ লেখকদের বলছি সবাই আমার থেকে ভালো লিখো। সুবর্ণা দাশ মুনমুনও আমার চেয়ে ভালো লিখে এগিয়ে যাও আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে। তিনি উদারতা দিয়ে সবাইকে অনুপ্রাণিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আমরা সুবর্ণা দাশ মুনমুনকে অভিনন্দন শুভকামনা জানাই।তার এই পথচলা সুন্দর হোক। হাওয়া গান ঝিরঝির বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন বাচিক শিল্পী দিলরুবা খানম ছুটি।