তুমিইতো সে, যে আমার এবং শুধু একান্ত আমার অতন্দ্র প্রহরী হয়ে যৌবনের শুরু থেকে একসাথে বৃদ্ধ হওয়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছো। কখনো বন্ধু, কখনো প্রেমিক, কখনো দেহরক্ষী, কখনো অস্থির মনে শান্তির সুশীতল বাতাস দিয়ে ছায়াসঙ্গী হয়ে।
যখন হাজার চোখের দৃষ্টি শরীরময় বুলিয়ে ভালোবাসা শব্দটির অপব্যবহার করে হাতছানি দেয়, মিথ্যে প্রেমের প্ররোচনায় হাত বুলিয়ে যায় খোলা পিঠের আঙিনায়, তা সে ছোট হোক আর বড়, অশিক্ষিত হোক আর শিক্ষিত কিংবা শ্রদ্ধেয়জন, চোখে চিবিয়ে চরিতার্থ করে মনের কুৎসিত সুপ্ত বাসনা। তখন একমাত্র তুমিই তো সে, যে সকল চোখের চাহনিতে কাদা ছিটিয়ে নষ্ট করে তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ দৃষ্টি।
ভালোবাসা শব্দটিকে মিথ্যে মায়ায় বন্দী করা লোক, যাদেরকে মনের অস্থির টালমাটাল, বেসামাল, টানপোড়নের সময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না, কুলুপ আঁটে কানের দরজায়, বিপদ জেনে লুকায় ঘরের কোণে, পাছে তার বুকে মুখ লুকিয়ে অন্তত কান্নার আশ্রয় দেয়া লাগে। ঠিক সেসময় একমাত্র তোমাকেই পাওয়া যায় কখনো আশ্বস্ত করা চোখের চাহনিতে, কখনো তোমার বিশাল বুকে, ছাতার মতো মনটাতে আশ্রয় নিতে।
একমাত্র তুমিই সে, যে স্ত্রীর স্তন ক্যান্সারে কেটে নেওয়া স্তনযুগলের একটিমাত্র অবশিষ্ট স্তনেও বিশ্বের তাবৎ সুডৌল বক্ষের সৌন্দর্য খুঁজে নিতে জানে। তুমিই সে, যে এসিডদগ্ধ স্ত্রীর মুখের ক্ষতবিক্ষত দাগে খুঁজে পায় শ্রাবস্তীর কারুকাজ। একমাত্র তুমিই সে, যে নারীর কোন অঙ্গেই আকর্ষণের কিংবা অবহেলার কারণ খুঁজে পায় না; যা চায় তা শুধু মনটাকে অক্ষত, সুস্থ রাখতে।
একমাত্র তুমিই সে, যে আমি পোশাকে কী পরলাম কী পরলাম না এক বিন্দু ভ্রুক্ষেপ না করে প্রাধান্য পায় আমি কিসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি তাতে। তুমিই তো সে, যে আমার কপালের টিপে খুঁজে নিতে জানো স্বাধীন দেশের রক্তিম সূর্যকে, আমার উড়তে থাকা শাড়ির আঁচলে তোমার দেশের বুক চিরে বহতা নদীকে, আমার শাড়ির কুচির ভাজে খুঁজে নাও ঝিরঝির করে ঝরে পড়া ঝরনাধারাকে।
যখন একপাল কুৎসিত পিশাচ নারীর পোশাকের, চলার, বলার এমনকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায়। তখনো তুমি, একমাত্র তুমিই কখনো তোমার পাহাড়সম দেহ নিয়ে, কখনো শাণিত তলোয়ারের মতো কলম নিয়ে, কখনো মিটিং মিছিলে পথ অবরুদ্ধ করে দাড়াও অপ্রতিরোধ্য দেবতার ভঙ্গিমায়।
তুমি আছো বলেই তো অসতর্কতায় বেআবরু আমার মস্তক সযত্নে অবগুণ্ঠিত করো তোমার প্রেমের আঁচলে। রক্ষাকবচ হয়েই সাথে আছো মনের শক্তি, সাহস আর হাতিয়ার হয়ে। তুমি আছো বলেই আমার বিরামহীন, ক্লান্তিবিহীন পথচলা।
লেখক : প্রাবন্ধিক; অধ্যাপক, ওমরগণি এমইএস কলেজ