শতাব্দী প্রাচীন ও চট্টগ্রামের এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারে স্থাপিত চট্টগ্রাম আদালত ভবন বা কাচারি পাহাড় যা ঐতিহাসিক পরীর পাহাড় হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক পরীর পাহাড়ে স্থাপিত চট্টগ্রাম আদালত ভবন। বর্তমানে এ আদালত ভবনটির ঐতিহাসিক অবকাঠামো ও ডিজাইন ঠিক রেখে অনেক অনেক গুণ বর্ধিত হয়েছে। আদালত ভবনের মূল অবকাঠামোগত সৌন্দর্য্য ও ডিজাইন সঠিক রাখার জন্য অনেক আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম ও দাবির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে আদালত ভবনটি পূর্বের অবস্থার পরিবর্তিত রূপে আধুনিক স্থাপনার সাথে মিল রেখে বর্ধিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ স্থাপত্যে নির্মিত এ আদালত ভবন ও পরীর পাহাড়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
পরীর পাহাড়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : চট্টগ্রাম বিভাগ বা জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র চট্টগ্রাম শহরের কাচারি পাহাড়ের প্রাচীন নাম পরীর পাহাড়। সুদূর অতীতে এর অন্য কোন নাম ছিল কিনা জানা যায় নি। এই পরীর পাহাড় নামটি মুসলিম প্রভাবিত নাম হিসেবে ঐতিহাসিকগণ স্বীকার করেছেন। চট্টগ্রামে জনশ্রুতি ছিল যে, জ্বীন পরী অধ্যুষিত চট্টগ্রাম পীর বদর শাহ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে আগমন করেন। তিনি জ্বীন পরীদের নিকট হতে সামান্য পরিমাণ চাটির জায়গা আদায় করে চাটি জ¦ালিয়ে ইবাদতে মগ্ন হন, এতে জ¦ীন পরীরা ঐ চাটির আলোয় টিকতে না পেরে চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। তখন থেকে অত্র এলাকার নাম চাটিগাঁ নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্ণিত জনশ্রুতি ইতিহাসের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন চট্টগ্রাম বিষয়ে অভিজ্ঞ ঐতিহাসিক ও গবেষক আবদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেছেন, “মধ্যযুগে ত্রিপুরার রাজা, গৌড়ের সুলতান ও মোঘল সুবেদার এবং মগ ও ফিরিঙ্গী জলদস্যু এ চার শক্তির মধ্যে যুদ্ধ হত চট্টগ্রামকে নিয়ে। সেকালে চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ পূর্ববঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাসমূহ হতে মানুষ চুরির ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সোনারগাঁও এর শাসনকর্তা ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ্ এর রাজত্বকালে (১৩৩৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দ) সম্ভবত ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দ তাঁর সেনাপতি কদল খান গাজি তৎকালীন চট্টগ্রামে বসবাসকারী পীর বদর শাহ প্রমুখ ইসলাম প্রচারকদের সহযোগিতায় চট্টগ্রামকে প্রথম মুসলিম রাজ্যভূক্ত করেন। বর্ণিত জনশ্রুতি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের আলোকে ঐতিহাসিক পটভূমিতে ইতিহাসের সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়। আরাকানি মগ দস্যুদের উৎপাত, চুরির ঘটনা প্রভৃতি জ¦ীন পরীর মানুষ চুরির রুপকথা বা জনশ্রুতি আকারে পল্লবিত হয়ে চট্টগ্রামে প্রচারিত বা প্রচলিত হয়। বন জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ের ওপরে আরাকানি মগ দস্যুদের আড্ডার কথা সত্য মিথ্যা ও কল্পনারঞ্জিত কাহিনীই “পরীর পাহাড়” নামে আখ্যায়িত হতে সাহায্য করে। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে মোঘল বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত আরাকানি শাসনকালে পরীর পাহাড় তাদের মানুষ চুরি ও রাহাজানির দোসর পর্তুগীজদের আড্ডায় পরিণত ছিল।
ইংরেজ রাজত্বকালে পরীর পাহাড় “ফেয়ারী হিল” নামে খ্যাত হয়। তখন এই পাহাড়টি “জন হ্যারি” নামক একজন পর্তুগীজের সম্পত্তি ছিল। জঙ্গলাকীর্ণ পরীর পাহাড়ে তখন একটি কুটির ছিল, এ কুটিরে সম্ভবত পর্তুগীজদের একটি ডাক্তারখানা ছিল। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে বুলক ব্রাদাসের এজেন্ট সেখানে অবস্থান করতেন। “ইংরেজ ক্যাপ্টেন ট্রেক্সরা” পর্তুগীজ “জন হ্যারির” কাছে থেকে পরীর পাহাড় কিনে নেন। পরে “পেরেডা সাহেব” “ট্রেক্সরা সাহেব” হতে পাহাড়টি খরিদ করেন। অবশেষে সম্ভবত ঊনবিংশ শতকের মধ্যবর্তীকালে পটিয়া থানার ছনহরা নিবাসী সরের জাহাজের মালিক ও খ্যাতনামা জমিদার “অখিল চন্দ্র সেন” নয় হাজার টাকা মূল্যে পরীর পাহাড়টি কিনে নেন।
মোঘল শাসনামলে চট্টগ্রাম শহর প্রধানত কাতালগঞ্জ, ভাঙ্গঘুটনা, কাপাসগোলা, চকবাজার, চন্দনপুরা, আন্দরকিল্লা, জামাল খাঁ, রহমতগঞ্জ প্রভৃতি নিয়ে ছিল চট্টগ্রাম শহর। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানীর দেওয়ানী শাসন ও রাণী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালে চট্টগ্রামের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল নিজ শহর মৌজায় বর্তমান ডক্টর এনামুল হক সড়কের পশ্চিম দিকস্থ মাদ্রাসা পাহাড় ও তৎসন্নিহিত পাহাড় শীর্ষের ভবনে। বর্তমানে সেখানে হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজ স্থাপিত। চট্টগ্রামের আলাসদর আদালত ছিল এই মাদ্রাসা পাহাড়ে। পরবর্তীকালে শহর সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে অফিস আদালতের স্থান সংকুলান না হওয়ায় নতুন প্রসাশনিক অফিস ও আদালত স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে জমিদার “অখিল চন্দ্র সেন” হতে পরীর পাহাড় ইংরেজরা খরিদ অথবা হুকুম দখল করেন। ১৮৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দে ছয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে “কলিকাতার রাইটার্স বিল্ডিং” এর অনুকরণে বৃহৎ দ্বিতল আদালত ভবনটি নির্মিত হয়। আদালত ভবন প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কবি নবীন চন্দ্র সেন চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আদালত ভবন প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে পরীর পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “এ অট্টালিকা শীর্ষ পর্বতের পাদদেশ দিয়া কর্ণফুলী প্রবাহিতা, অদূরে সমুদ্র, পশ্চাতে সৌধ শীর্ষ পর্বত সজ্জিত নগর ও দূরে চট্টগ্রামের পার্বত্য রাজ্য শোভা অট্টালিকার পাদদেশ মূলে পর্বত শীর্ষে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ গিরি পাশ কাটিয়া এরূপ রাস্তা নির্মিত হয়েছে যে, অনায়াসে গাড়ী পর্যন্ত উঠতে পারে। অট্টালিকার স্থান হইতে দেখিলে প্রাকৃতিক শোভায় তোমার মনপ্রাণ মুগ্ধ করিবে। (—-নবীব চন্দ্র সেন, আমার জীবন, ৩য় ভাগ সংস্করণ পৃঃ-৬)
আদালত ভবন নির্মিত হওয়ার পর হতে চট্টগ্রাম শহরের “পরীর পাহাড়” জনসাধারণের নিকট “কাচারি পাহাড়” নামে পরিচিত পায়। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খাঁনের সামরিক শাসনকালে প্রয়োজনের তাগিদে পরীর পাহাড়ের দ্বিতল কোর্ট ভবনের উপর আর এক তলা ভবন নির্মাণ করে তেতলা করা হয়। (সূত্র : গবেষক আবদুল হক চৌধুরী রচিত বন্দর শহর চট্টগ্রাম ও কমকালীন দৈনিক পত্রিকাসমূহ)
৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে উপস্থিত পাকিস্তানী ফ্রিগেট সম্ভবত বাবর নামক জাহাজ হতে কামানের গোলা ছোঁড়া হয় চট্টগ্রামে। এর একটি গোলার আঘাতে কাচারি পাহাড়ের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে এজলাসে “বর্তমান জেলা দায়রা জজ” বসেন সে দিকের ভবন সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পুরানো স্থাপত্য রীতি ও নীতি এবং নক্শা বজায় রেখে মেরামত করা হয়। আমি এতক্ষণ পরীর পাহাড়ে স্থাপিত আদালত ভবনের সংক্ষিপ্ত উপাখ্যান যা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। তা এখানে উপস্থাপন করেছি।
পরবর্তীতে মূল আদালত ভবন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ধারাবাহিকতা ও যার প্রেক্ষিতে তৈরী হয় সমস্যাদি ঃ ১৮৯৩ সালে কোলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং এর অনুকরণের দ্বিতল বিশিষ্ট এ ভবনটি নির্মাণকালেই উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র বিচার বিভাগই এখানে থাকবে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রশাসনিক অনেক অফিস আদালত এখানে স্থাপিত হওয়ার কারণে ষাটের দশকে দ্বিতল ভবনটির উপর সম্পূর্ণ বেমানান ত্রিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। তদুপরি নির্মাণের পর শত বছরের অধিক সময় ধরে এর পরিচর্যা ও মেরামতের দিকে কোন সরকারই কোন সময়ই নজর দেয়নি। ১৯৯৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগ এ ভবনটিকে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করেন। এর প্রেক্ষিতে সরকার এ আদালত ভবন ভেঙ্গে একটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই সময় লেগে যায় প্রায় পনের বছর। ইতিমধ্যে ১৯৯১ এর ২৯ শে এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ও বড় ধরনের একটি ভূমিকম্পের ধকল ভবনটি সামলিয়ে সামান্য পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে সুস্থভাবে টিকে রয়েছে। আটচল্লিশ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আদালত ভবন উন্নয়ন পরিকল্পনায় পুরানো ভবন ভাঙ্গার দরপত্র তৈরী হলেও নতুন আদালত ভবনের তখনও পর্যন্ত “স্থাপত্য নকশাই” চূড়ান্ত হয়নি। যার কারণে চট্টগ্রামের এ শতাব্দী প্রাচীন পুরাকীর্তি রক্ষার দাবি নিয়ে চট্টগ্রাম আদালত ভবন সংরক্ষণে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। সর্বস্তরের জনগণের ও বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি ছিল লাল ইটের ও দালানটি শুধুমাত্র একটি ভবন নয়, কার্যালয় নয়, এটি এখন ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আবেগ, বাংলাদেশের “দি অ্যান্টি কুইটিজ অ্যামেন্ডমেন্ট অর্ডিনেন্স” ১৯৭৬ মোতাবেক ব্রিটিশ স্থাপত্যটি পুরাকীর্তি মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে এ ভবনটি এতই মজবুত ও ভাল পর্যায়ে রয়েছে যে এতে সামান্য কয়েক লক্ষ টাকা বা কোটি টাকার মত টাকা খরচ করে সংস্কার করলেই আরো একশ বছরের অধিক টিকে থাকা কোন ব্যাপার নয়। যেখানে সরকার এ ভবনটি ভেঙ্গে নতুন বিল্ডিং তৈরীর জন্য ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সেখানে স্থাপত্যের নিদর্শন এ ভবনটি রক্ষায় সংস্কার করে এ ভবন সংলগ্ন বিস্তীর্ণ খালি জায়গায় নতুন ভবন অনায়াসে তৈরি করা যায়। এতে সরকারের দুদিকেই লাভ। উপরোক্ত টাকায় একদিকে শতাব্দী প্রাচীন সংস্কৃতির ধারা এ ভবনটিও রক্ষা হবে এবং নতুন ভবনও নির্মাণ হবে। সে সময়ের অবস্থা পরিস্থিতি জানার ও বুঝার সুবিধার্থে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী নিম্নে এবং কিছু স্থাপত্য ও কারিগরী দিক পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।
ক) ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মূল আদালত ভবন ১০৬ বছরের পুরানো কাঠামোগত দিক হতে মূল ভবনটি এখনও নতুন ভবনের মতই টেকসই ও মজবুত।
খ) কয়েকটি জায়গায় যে ধরনের ফাটল পরিলক্ষিত হয়েছে সেগুলি মূল কাঠামোর জন্য হুমকি স্বরূপ নয় এবং তা স্বল্প ব্যয়ে মেরামত ও সংস্কার উপযোগী।
গ) আদালত ভবনের ভিতরের দেয়াল ২৬ ইঞ্চি এবং বাইরের বারান্দার দেয়াল ২৪ ইঞ্চি বা ১৬ পুরু। কাঠামোগতভাবে এগুলো অতি মজবুত।
ঘ) মূল ভবনটির ছাদ নির্মিত হয়েছে স্টিল জয়েন্ট, স্টিল রিবস ও টাইলস দিয়ে। এ ধরনের ছাদেরর ক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার খুবই সহজসাধ্য ও সাশ্রয়ী।
ঙ। মূল আদালত ভবন সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী, প্রয়োজন শুধুমাত্র যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের।
এ ছিল সে সময়ের অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও স্থপতিদের মতামত। উপরোক্ত বিষয়াবলী পর্যালোচনা ও পযবেক্ষণ করে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সাধারণ জনগণের দাবি ও মনোভাবের কথা চিন্ত করে গণতান্ত্রিক সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের নির্দেশে তৎকালীন চট্টগ্রামের অবিসংবাধিত নেতা চট্টল গৌরব পর পর তিন বার নির্বাচিত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।
“চট্টগ্রাম উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, “শতাব্দী প্রাচীন চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পুরাতন স্থাপত্য নকশা অক্ষুন্ন রেখে ৩৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন আদালত ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার নির্মাণ কাজ অতি শিগগির আরম্ভ হবে”।
চট্টগ্রামের নগর পিতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সভায় বিভিন্ন পর্যায়ে আদালত ভবনের নির্মাণ কাজের উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যক্ত করা হয়। ইতিমধ্যে সরকার এ প্রকল্পের জন্য দেড়কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। উন্নয়ন কাজকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়ছিল।
প্রথম জজশীপের কাজ শুরু করা হবে। আদালত ভবনের বিদ্যমান মডেল সংরক্ষণ, সৌন্দর্য বর্ধন ও উন্নয়নে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করা হয়। সে সময়ে সিটি মেয়র তার বক্তৃতায় বলেন, চট্টগ্রাম আদালত ভবন প্রাচীন স্থাপত্য হিসাবে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তিনি নাগরিকদের দাবির প্রতি সম্মান রেখে আদালত ভবনের বিদ্যমান মডেল সংরক্ষণ, সৌন্দর্য বর্ধন ও উন্নয়নে চট্টগ্রামের জনগণের নিকট প্রতিশ্রুতিদ্ধ। এ ছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত যা শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির ফলশ্রুতি।
উপরোক্ত বিষয়াবলীর আলোকে এসব স্থাপত্য ও পুরাকীর্তির মর্যাদা দান ও সংস্কার করে বর্তমানে যে আদালত ভবন পরিপূর্ণতা পেয়েছে।
ক) দেশ, জাতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তির নিদর্শন হচ্ছে স্থাপত্য। এ ধরনের পুরাকীর্তিমূলক নিদর্শন চট্টগ্রাম আদালত ভবন। যা দেশে ও জাতির সাংস্কৃতিক ইতিহাস ঐতিহ্যকে সুদীর্ঘকাল ধরে প্রজন্ম পরস্পরায় পরিচিত করার কাজের অনন্য ভূমিকা রাখে।
খ) পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ঐতিহ্য সচেতন জাতি মাত্রেরই অপরিহার্য কর্তব্য।
গ) এর আগে পুরাকীর্তি সংরক্ষণের প্রয়োজনেই দেশের ঐতিহ্যবাহী আহসান মঞ্জিলকে নবসাজে সজ্জিত করা হয়েছে, যা সকল সুধীমহল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছিল।
ঘ) চট্টগ্রাম আদালত ভবনের ন্যায় ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত রেলস্টেশন ও রেলওয়ে হেড কোয়ার্টার এবং মহসীন কলেজের আদি ভবনের সংস্কারও অতিশয় জরুরী।
সে সময়কালে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষার আন্দোলনে শরিক সাধারণ মানুষের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে এবং চট্টলার অসিসংবাদিত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ও সহযোহিতায় জননেত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনার আলোকে বর্তমান দৃষ্টি নন্দন আদালত ভবন এবং ইতিহাসের আনেক ঐতিহ্য ও প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম রেলওয়ে ভবন ও রেল ষ্টেশন এখনো আধুনিকতার ছোয়ায় তার ঐতিহ্য নিয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসা ভবনের পুর্তগীজ ঐতিহ্যে নির্মিত পুরাতন রাষ্ট্রীয় কার্যালয়টি সংরক্ষণ করা হয়নি। এটি সংরক্ষণ ও মেরামত ও ঐতিহ্য রক্ষা এখন সময়ের দাবি।
চট্টগ্রামের আধুনিক কাছাড়ি পাহাড় দৃষ্টিনন্দন বর্তমান ‘লাল ভবন’ এবং সাথে গড়ে উঠা বিভিন্ন সময়ের দালান কৌটা, অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকদের আন্দোলনের সফল রুপকার জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার অনন্য নিদর্শণ।
বঙ্গবন্ধ কন্যা শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা পেয়েছে। বেল ষ্টেশনের নান্দনিক ভবনটি স্বমহীনায় উজ্জ্বল, ইতিহাসের বিজয় ঘোষণা করছে। বিভিন্ন সময়ের গণবিরোধী সরকার সমূহের ইতিহাস ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এটি একটি প্রতিবাদ। এভাবে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যুগে যুগে সংরক্ষণ করে প্রজন্মকে “শেকড়” জানাতে হবে। তবেই নিজেকে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলবে।