ড. মাহবুবুল হক একজন গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক। বাংলা বানান বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি লোকসাহিত্য গবেষণা ও বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ ভুমিকা রেখেছেন। আজ তাঁর ৭৩ তম জন্মবার্ষিকী। শৈলী টিভি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আমরা তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে। তবে শৈশব থেকে বেড়ে ওঠেছেন চট্টগ্রামে। ছাত্র জীবন ও কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন চট্টগ্রামে। পড়াশুনা করেছেন চট্টগ্রাম কলেজে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। সম্পৃক্ত ছিলেন ছাত্ররাজনীতির সাথেও। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছিলেন তিনি অগ্রগামী।
শিক্ষককতা পেশার মধ্যদিয়ে তিনি শুরু করেন তাঁর কর্মজীবন। শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজে। এরপর তিনি যোগদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো একই বছরো স্নাতকোত্তর ক্লাসে ভর্তি হয়ে স্যারের শিষ্যত্ব গ্রহণের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসার নিয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে। বর্তমানে তিনি অধ্যাপক পদে অবসর আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ ও পাঠ্যবই রচনা করে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বাংলা পাঠ্য বইয়ের রচয়িতাও তিনি। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে তাঁর।
প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাঁকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং গবেষণায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ফিলিপস পুরস্কার, রশিদ আল ফারুকী পদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কারও লাভ করেন তিনি।
বাংলাদেশ, ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তার চল্লিশটিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে: ‘বাংলা বানানের নিয়ম’, ‘রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা’, ‘তিনজন আধুনিক কবি’, ‘ইতিহাস ও সাহিত্য’, ‘সংস্কৃতি ও লোকসংস্কৃতি’, ‘বইয়ের জগৎ : দৃষ্টিপাত ও অলোকপাত’, ‘বাংলা কবিতা : রঙে ও রেখায়’, ‘ভাষার লড়াই থেকে মুক্তিযুদ্ধ’,‘মুক্তিযুদ্ধ, ফোকলোর ও অন্যান্য’, ‘বাংলার লোকসাহিত্য : সমাজ ও সংস্কৃতি’, ‘বাংলা ভাষা : কয়েকটি প্রসঙ্গ’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ’, ‘বাংলা সাহিত্যের দিক-বিদিক’, ‘কৃতীজন কৃতিকথা’, ‘মাক্সিম গোর্কির মা’।