কামিনী রায় একজন কবি ও সমাজ সংস্কারক। পারিবরিক সংস্কারের বাইরে গিয়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি কতটা প্রগতিশীল জ্ঞানপিপাসু। যে যুগে হিন্দু পুরমহিলাগণের লেখাপড়া করাকে একান্তই নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হতো কামিনী রায় সে যুগের ভারতবর্ষের প্রথম স্নাতক ডিগ্রিধারী। আজ কবি কামিনি রায়ের ১৫৭ তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর জন্মদিনে শৈলী টিভি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
কামিনী রায়ের আসল নাম কামিনি সেন। কেদারনাথ রায়কে বিয়ে করে তিনি হলেন কামিনী রায়। কামিনী সেনের জন্ম ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার বাকেরগঞ্জের বাসণ্ডা গ্রামে। তাঁর পিতা চণ্ডীচরণ সেন একজন ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী, বিচারক ও ঐতিহাসিক লেখক ছিলেন। পিতা চণ্ডীচরণ সেনের কাছে কামিনী রায়ের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তৎকালীন পুরোহিত সমাজের বিধি বিধানের কারণে কামিনী রায় গোপনে বাবা ও মায়ের কাছে শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি ১২ বৎসর বয়সে কলকাতার একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮০ সালে তিনি কলকাতা বেথুন স্কুল হতে এন্ট্রান্স (মাধ্যমিক) পরীক্ষা ও ১৮৮৩ সালে এফ.এ (উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বেথুন কলেজ হতে তিনি ১৮৮৬ সালে ভারতের প্রথম নারী হিসাবে সংস্কৃত ভাষায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
১৮৮৬ সালে তিনি বেথুন কলেজের স্কুল বিভাগে শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঐ কলেজে অধ্যাপনাও করেছিলেন। যে যুগে মেয়েদের শিক্ষাও বিরল ঘটনা ছিল, সেই সময়ে কামিনী রায় নারীদের পক্ষে কথা। তার অনেক প্রবন্ধেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি নারী শ্রম তদন্ত কমিশন (১৯২২-২৩) এর সদস্য ছিলেন।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে জাঁকিয়ে বসা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার জেরে জুটিয়ে ছিলেন নারীবাদী তকমা। তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের রাস্তা থেকে সরে আসেননি সেসময়ের জনপ্রিয় মহিলা সাহিত্যিক কামিনী রায়। তিনি আমৃত্যু সাহিত্য, সমাজসেবা ও মহিলাদের উন্নয়নে নিজের জীবন অতিবাহিত করেছেন।
মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লিখতেন। তিনি একসময় ‘জনৈক বঙ্গমহিলা’ ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন।
রচিত কবিতাগুলোতে জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাক্সক্ষা, আনন্দ-বেদনার সহজ-সরল ও সাবলীল প্রকাশ ঘটেছে। পনেরো বছর বয়সে তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’ প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে। এ ছাড়াও তার লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘নির্মাল্য’, ‘পৌরাণিকী’, ‘মাল্য ও নির্মাল্য’, ‘অশোক সঙ্গীত’ (সনেট সংগ্রহ), ‘অম্বা’ (নাট্যকাব্য), ‘দীপ ও ধূপ’, ‘জীবন পথে’, ‘একলব্য’, ‘দ্রোণ-ধৃষ্টদ্যুম’, ‘শ্রাদ্ধিকী’ ইত্যাদি।
১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কামিনী রায় ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ সম্মানে সম্মানিত হন। তিনি ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় লিটারারি কনফারেন্সের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।