আমার ছোট বেলা কেটেছে গ্রামে। সে সুবাধে গ্রামের সংস্কৃতির সাথে আমার নাড়ির সম্পর্ক। লেখা পড়ার কারণে অল্প বয়সে শহরবাসী হয়েছি। শহরের জীবনের মাঝেও গ্রামের সাথে কোন সময় সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। গ্রামের খেলাধুলা, আচার অনুষ্ঠানে আমি সময় সুযোগ পেলেই অংশ গ্রহণ করি। এতে আমার হারিয়ে যাওয়া বাল্য স্মৃতি রোমন্থন করে কিছুক্ষনের জন্য হলেও স্বপ্নে বিভোর থাকি। বর্তমান আধুনিক সভ্যতার উম্মাতালে এবং প্রাচ্যের খেলাধুলায় মত্ত আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা জানেও না আমাদের ঐতিহ্যবাহি গ্রাম্য খেলাধুলার কথা। আজকে আধুনিক খেলাধুলার সাজ সরঞ্জামের জন্য বিশাল অংকের অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে সময়কার খেলাধুলার জন্য কোন টাকা পয়সার বা অনেক জায়গার প্রয়োজন হতো না। সে সব খেলাধুলায় যেমনি শরীর চর্চা হতো, তেমনি নির্মল আনন্দে মাতোয়ারা সকলের সুসম্পর্ক ছিল কিংবদন্তির ন্যায়। বর্তমানে গ্রামে আগেরকার ন্যায় সকল কিছুই রয়েছে কিন্তু কোন সুসম্পর্ক নেই। সর্বত্র দ্বন্ধ, হানাহানি, রাজনৈতিক কলুষতা প্রভৃতিতে সকলেই জর্জরিত। ফলে নির্মল ঐক্যবদ্ধ আনন্দের সে পরিবেশ আজকাল গ্রামে নেই বললেই চলে।
এখনকার গ্রামের ছেলে মেয়েরা প্রাচ্যের আধুনিক খেলাধুলা অনুশীলনে ব্যস্ত, সে সময়কালের ন্যায় চাঁদনী রাতে খোলা মাঠে যে খেলাধুলা হতো সে ধরনের খোলা মাঠ গ্রামাঞ্চলে এখন নেই বল্লেই চলে। প্রাচীন চট্টগ্রামে এবং বেশ কিছুকাল পূর্বেও আমরা খালে বিলে মাঠে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে হেসে খেলে বেড়িয়েছি। পৌষ মাসে বিলের পাঁকা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসা হতো। মাঘ মাসের শীতের সময় ধান মাড়াই হয়ে গোলায় তোলে ফেলা হতো। সাথে সাথে চলত রবিশস্যের চাষ। ফাল্গুন মাস হতে সকাল বেলা ক্ষেতের কাজ করা হতো। বিকালে সকলে মিলে গরু বাচুর চড়ানোর জন্য মাঠে যেতাম। সেখানে চলত নানা প্রকার দেশীয় খেলাধুলা। সে সব খেলাধুলায় আমাদের সাথে যোগ দিতো বয়োজৈষ্ঠ্য যুবকেরাও।
জ্যোৎস্না রাতে নিশিরাত পর্যন্ত চলতো এসব খেলাধুলা। জৈষ্ঠ্য মাসের বৃষ্টিপাত শুরু হবার আগ পর্যন্ত এসব খেলাধুলা চলতো । যুগে যুগে মানুষের রুচির পরিবর্তনের ফলে অনেক খেলাধুলা বিলুপ্ত হয়েগেছে এবং অনেক খেলা বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে খ্যাত হয়ে রয়েছে। গবেষকদের গবেষণা হতে এবং আমার জানা কিছু খেলাধুলা হতে চট্টগ্রামের প্রচলিত প্রাচীন খেলাধুলার নামের তালিকা ও বর্ণনা এখানে তুলে ধরছি।
(১) বলী খেলা, (২) গরুর লড়াই, (৩) তুম্বরু খেলা, (৪) চুঁয়া খেলা, (৫) হা-ডু-ডু খেলা, (৬) চি-হি খেলা, (৭) ঝিঁ ঝিঁ খেলা, (৮) এচকি মেচকি খেলা, (৯) টুবি খেলা, (১০) দুর্বা খেলা, (১১) টুনি ভাইয়ের টুনি খেলা, (১২) জোড় না বেজোড় খেলা, (১৩) চোখ বান্ধা খেলা, (১৪) কুলুক খেলা, (১৫) তৈক্যা চুরি খেলা, (১৬) গাই খেলা, (১৭) বাঘ পাইর খেলা, (১৮) ডিহিল্যা বন্ধ করা খেলা, (১৯) মোগল পাঠান খেলা, (২০) দঁড়ি খেলা, (২১) নারিকেল খেলা, (২২) পানিখেলা, (২৩) ঢেঁকি খেলা, (২৪) চাঁন্দা খেলা, (২৫) পোড় খেলা, (২৬) হাতগুডি খেলা, (২৭) কড়ি খেলা, (২৮) নাইট্রা চড়ই খেলা, (২৯) কুত্তা খেলা, (৩০) কঁইল্যা খেলা, (৩১) কৈতর বাচা খেলা, (৩২) ডাংগোলা খেলা।
বর্ণিত খেলাগুলির বিশদ বর্ণনায় যাওয়ার পূর্বে এসব গ্রাম্য খেলাধুলা কিভাবে আরম্ভ করা হতো ? খেলা আরম্ভ করার পূর্বে এবং খেলার মধ্যে যা যা নিয়ম কানুন রযেছে সে সব পূর্বপ্রস্তুতি এবং নিয়ম কানুনগুলো পাঠকদের নিকট বর্ণনা করলে খেলাগুলো অন্যদের বুঝে নিতে সুবিধা হবে । তাই আমি গ্রামাঞ্চলের এসব খেলাধুলার পূর্ব প্রস্তুতি এবং নিয়ম কানুনগুলি প্রথমেই উল্লেখ করছি।
১। বদর দেয়া : চট্টগ্রামের গ্রামীন পরিবেশে ফাল্গুন মাস হতে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বিল পাথারে শেষ বেলায় জ্যোৎস্নামাখা রাতে খেলা শুরু করার পূর্ব প্রস্তুতির জন্য সকলকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে বদর দেয়া বা আহ্বান করা হতো। বদর দেয়ার ধরণ ছিল এভাবে—-
“গোলা – ব – দ – র
হৈ বদর”।
প্রথমে একজন আরম্ভ করত, পরে অন্যরা সকলে সমস্বরে বলা শেষ করত, যদি কোন সময় কেঊ আসতে দেরী করত বা আসতনা তাদের অনুপস্থিতির জন্য হেয় করেও বদর দেয়া হতো।
যেমন : “আইয়েলা কাইয়েলা, দইন পাইয্যা মাইয়েলা
গোলা – ব – দ – র, হৈ বদর”
অর্থাৎ উত্তর-দক্ষিন পূর্ব-পশ্চিম পাড়ার খেলোয়াড়রা মেয়ে লোকের মত। তাই খেলতে আসছে না , ইত্যাদি।
গবেষক এবং স্থানীয় জনসাধারণের মতে বিশিষ্ট সাধক বদর শাহের নামানুসারে চট্টগ্রামের লোকজন মহান দরবেশ ব্যক্তিটিকে স্মরণ করে তার নামানুসারে বদর দিতো।
২। তোক্ষ ঃ খেলাধুলা চলাকালীন সময়ে যে কোন দলের যে কোন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বা একদল খেলার নিয়ম ভঙ্গ করলে অপর দল তা মিমাংসা করার জন্য কিছু সময় খেলার বিরতি নেওয়াকে তোক্ষ দেয়া বলে। সে সময় যে কেউ তোক্ষ বলে ডাক দেওয়ার সাথে সাথে এটি কার্য্যকরি হয়ে যায়।
৩। চোট : তোক্ষ বা সাময়িক বিরতি পর পুনরায় খেলা শুরু করতে চোট বলে ডাক দেওয়ার সাথে সাথে খেলা
আরম্ভ হয়ে যায়।
৪। পোড়া খাওয়া : দাড়িয়াবান্দা বা পোড় খেলার উড়তি দল তোক্ষ বা বিরতি না দিয়ে চকের বাহীর চলে গেলে তাকে পোড়া খাওয়া বলা হয়।
৫। বাইশা : দু’দল খেলোয়াড়ের প্রতি দলের খেলার সময়কালকে বাইশা বলা হয়।
৬। ঘট্রে ঘট্রে : খেলার হারজিত নিয়ে কোন মতভেদ হলে যদি পুনরায় প্রথম হতে খেলা শুরু করতে হয় তাকে ঘট্রে ঘট্রে বলা হয়।
৭। লাগা : চট্টগ্রামের দেশজ খেলাধুলায় একপক্ষ অপর পক্ষকে পরাজিত করাকে লাগা গণনা করা হয়। যেমন- একদল অপর দলকে চারবার পরাজিত করলে চারটি লাগা গনণা করা হয়।
৮। উড়ে-ধড়ে ও মাইল্যা : খেলা আরম্ভ করার অগে দুদলের মধ্যে প্রথম আক্রমনকারী দল ”উড়ে এবং অপর দলকে ধরে” বলা হয় উড়ে দলের নেতার সন্মতিতে তা সাব্যস্ত করা হয়ে থাকে। পরো খেলা বা দাঁড়িয়াবান্দা খেলায় ”ধরে” বা আত্মরক্ষাকারী দলের নেতা মাইল্যা নামে খ্যাত ।
চাটগাঁর গ্রামাঞ্চলের খেলার নিয়ম কানুনের আলোকে এখন খেলাধুলার নামওয়ারী বিস্তারিত নিয়ম ও বর্ণনা এবং বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখানে উল্লেখ্য যে আমার সময়কালের অনেক খেলাধুলার আমি প্রত্যক্ষ সাক্ষী। কিন্তু আমার সময়ের পূর্বের অনেক খেলাধুলার বনর্ণা দেওয়ার জন্য গবেষকদের গবেষণা এবং বর্ণনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এখন আমি ধারাবাহিকভাবে খেলাধুলার বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করছি।
১। বলী খেলা : বলী খেলা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নাম। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে মল্লযুদ্ধ বা কুস্তি প্রতিযোগিতা। মল্লযুদ্ধে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য বহুকাল পুরানো। চট্টগ্রামে হিন্দু, মোসলমান অসংখ্য মল্লের পরিচয় পাওয়া যায়। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের সর্বমোট ২২টি মল্ল পরিবার ইতিহাসে বিখ্যাত। তার মধ্যে পটিয়া থানার আশিয়া গ্রামের আমানত শাহ মল্লের নাম ইতিহাস প্রসিদ্ধ। যার নামে আশিয়া মল্লপাড়া বলে একটি প্রসিদ্ধ পাড়া রয়েছে। বর্তমানে মল্লের বংশের অনেকেই মল্ল পরিচয় দেয়না। কারণ হঠাৎ গজিয়ে উঠা অনেকেই মল্লের পরিবারের সাথে সম্পৃত্ততার পরিচয় দিয়ে থাকে। এরপর রয়েছে চাতরির চিকন মল্ল, কাথরিয়ার চান্দ মল্ল, জিরির ঈদমল্ল ও নওয়াব মল্ল, পেরালার নানু মল্ল, পটিয়ার হিলাল মল্ল ও গোরাহিতো মল্ল, পারি গ্রামের হরি মল্ল, হাইদ্যাগাঁও এর অনিল মল্ল ও মোজাহিদ মল্ল, শোভনদন্ডির তোরপাচ মল্ল, কাঞ্চন নগরের আদম মল্ল, ঈশ্বর খাইনের গনি মল্ল, সৈয়দপুরের কাসিম মল্ল, খিতাপচরের খিতাপ মল্ল, ইমাম মল্লর চরের ইমাম মল্ল, গৈরলার ছুয়ান মল্ল, নাইখানের বোতাত মল্ল, মাহাতার এয়াছিন মল্ল, হুলাইনের হিম মল্ল প্রমুখ।
প্রাচীনকালের ইতিহাস হতে জানা যায় যে, প্রায় দেশের প্রতিটি জেলায় সীমাবদ্ধভাবে কুস্তি প্রতিযোগিতার প্রচলন ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের ন্যায় চট্টগ্রামব্যাপী প্রায় মাস/দুমাস ধরে ব্যাপকভাবে বলী খেলা এ অঞ্চলের কোন জেলায় অনুষ্ঠিত হতো না। গবেষকদের মতে চট্টগ্রামে প্রচলিত বলী খেলার জনপ্রিয়তা প্রাচীন আরব প্রভাবের ফলশ্রুতি। বলীখেলা চৈত্র মাস হতে শুরু করে জৈষ্ঠ্য মাসের অর্ধেক সময়কাল পর্যন্ত চলত। সেকালে চট্টগ্রামের প্রায় দু’লাখেরও বেশী লোক রোজগারের জন্য বার্মায় প্রবাসী ছিল। কিন্তু বৈশাখ মাস আসলেই তাদের অনেকেই দেশে চলে আসত, কেউ বলী খেলা দিতে, কেউবা বলী খেলা দেখতে। আবার কেউবা বলী খেলা খেলতে।
গ্রাম চট্টলার বিলে-মাঠে বলী খেলা শুরু হতো। যারা বলী খেলা দিতো তারা রুপার মেডেল ও সোনার মেডেল তৈরী করত। স্থান, তারিখ ঠিক করে সামর্থনুযায়ী ৪/৫ থানার হাট-বাজারে ঢুলী দিয়ে ঢোল সহরত যোগে প্রচার চালাত। কোন কোন সময় বলীদেরকে দাওয়াত দেয়া হতো । খেলার দিন যথা সময়ে নামী বলীরা ৮/১০ জন জুনিয়র বলী সহ শ/দুয়েক লোকের একটি দল নিয়ে ঢোল বাদ্য সহ দুপুরে খেলায় আসত। ছোট ছোট বলী খেলায়ও কমপক্ষে ৫/১০ জন বলীর দল আসত। খেলার প্রথম দিকে ছোট বলীদের খেলা চলত, পরে বড় বলীদের প্রতিযোগীতা শুরু হতো । এতে বিজয়ী বলীকে সোনার মেডেল দেয়া হতো । তখন জোরে সোরে ঢোলবাদ্য বেজে উঠত। ঢোলের তালে তালে আরম্ভ হতো বিজয়ী বলীর নাচ।
প্রাচীন চট্টগ্রামের বলীর নাচ খুবই দর্শনীয় ও জনপ্রিয় ছিল। এ বলী খেলাকে কেন্দ্র করে জমে উঠত মেলা। সেকালে চট্টগ্রামের বড় বড় গ্রামেও ২/৪টি করে বলী খেলা হতো । দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর হতে বলী খেলা কমতে শুরু করে। এখন তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি ময়দানে প্রতি বছর ১২ বৈশাখ মাসে আব্দুল জাব্বারের বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি চট্টগ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি নিদর্শন। এ বলী খেলাকে কেন্দ্র করে জমে উঠে বৈশাখী মেলার যা ৪/৫ দিন ব্যাপী চলতে থাকে। এতে গৃহস্থলীর নানা পণ্যও সরঞ্জামের দোকান থাকে। শহরবাসী সকলে এখান হতে সারা বছরের নিত্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় করে থাকে। বর্তমান সময়ে জব্বারের বলী খেলা সমগ্র দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বলি খেলায় মোল্ল হিসেবে স্বীকৃত। যা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের এক নিদর্শন বহন করে আসছে। এ বলী খেলা বদরপাতির বিখ্যাত আব্দুল জব্বার মিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। (সূত্র – পূর্ণ চন্দ্র চৌধুরী কর্তৃক প্রণীত চট্টগ্রামের ইতিহাস, ৪র্থ ভাগ, পৃষ্ঠা – ১৩-১৪, আব্দুল হক চৌধুরী প্রণীত চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি পুস্তক দ্রষ্টব্য)।
২। গরুর লড়াই ঃ প্রাচীনকালে স্পেনে ষাড় ও মানুষের লড়াই অত্যান্ত জনপ্রিয় ছিল। আমি নিজে সে ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুড়ে ফিরে দেখেছি। আমার ধারনা স্পেনের সে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এবং তারই আদলে ষাঁড়ে ষাঁড়ে লড়াইয়ের উৎপত্তি হয় চট্টগ্রামে যা গরুর লড়াই বলে খ্যাত। চট্টগ্রামের ভাষায় ষাঁড়কে “বিড়িষ” গরু বলা হয়ে থাকে। এ গরুর লড়াই প্রাচীন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলা বা উৎসব হিসেবে খ্যাত ছিল। বলী খেলার ন্যায় এ খেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হতো এবং গরুর লড়াইয়ে অংশ গ্রহণের জন্য প্রত্যেক ঘরে ঘরে লড়াইয়ের জন্য ষাঁড়দেরকে প্রস্তুত করা হতো । বিজয়ী গরুকে মেডেল দেয়া হতো । বিজয়ী গরুকে মেডেল পড়িয়ে ঢোল বাদ্য সহকারে তখন গ্রামের মানুষ ফিরে আসত। এখেলাকে কেন্দ্র করে মেলাও জমে উঠত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতে বলী খেলার ন্যায় এটিরও বিলুপ্তী ঘটে। আজকাল কোথাও এখেলার প্রচলন দেখা যায় না। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই গরুর লড়াই কি এটিও জানেনা।
৩। পর খেলা বা দাঁড়িয়াবান্ধা খেলা ঃ গ্রাম বাংলার “দাঁড়িয়াবান্ধা” খেলা চট্টগ্রামে “পর খেলা” নামে সমধিক পরিচিত। গবেষকদের মতে এ “পর” খেলা শব্দটি আরবী প্রভাবিত নাম। “পর” খেলা আরবী “ফরা” শব্দ হতে উদ্ভুত। ফরা অর্থ পলায়ন করা। একদল অপর দলকে ধরা ছোঁয়া না দিয়ে খেলার ছকের মধ্যে দিয়ে পলায়ন করার মধ্যেই এই খেলার হারজিত নির্ভর করে। পর খেলার খেলোয়ারদের বলা হয় “ছাব”। এই শব্দটি আরবী সাহেব অর্থ অনুচর/সহচর হতে উৎপত্তি। পর খেলার ছক রক্ষাকারী দলের প্রধান “মইল্ল্যা” আরবী “মোহল্লা” যার অর্থ হচ্ছে স্থান রক্ষাকারী। পর খেলার একদল ছক বা দাইর রক্ষাকারী অপর দল আক্রমনকারী। পরখেলা একটি নিদির্ষ্ট ছকের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় বলে তার নাম পর খেলার দাইর। পর খেলার সময় দু’জন খেলোয়ারের জন্য একটি করে দাইরের প্রয়োজন হয়। প্রতি দলে ৭ হতে ৯ জন খেলোয়ার থাকে তবে অবস্থা ভেদে বেশী কম হতে পারে। খেলায় মইল্ল্যা যে দাইরে থাকবে সে দাইরে একজন ছাব থাকে। সমান্তরাল রেখায় তিনটি অগভীর গর্ত থাকে। প্রতি দুই দাইরে দু-কামরা হয়। অগভীর গর্তগুলোকে “ফোন্ডা” বলা হয়। খেলায় দুই জন মইল্ল্যা হয়। তাদের একজন অপর জনকে বলে এই দল উড়ে অর্থাৎ আক্রমকারী হবে এবং অপর দলকে ধরে বলে অর্থাৎ খেলার ছক রক্ষাকারী। খেলা শুরু হওয়ার পর একজন উড়ে দল নিয়ে উড়তে যায় এবং ধরে দল প্রত্যেক দাইরে গিয়ে দাঁড়ায় ছক রক্ষা করার জন্য। উড়ে দল প্রথম দাইরে এসে সমবেত হয়। সেখানে ধরে বা আত্মরক্ষাকারী দলের মইল্ল্যা এসে “পর” বলে ডাক দিলে উড়ে দল মইল্ল্যা ছুঁতে না পারে মত ছকে ঢুকে। তখন মইল্ল্যা দু’পাশের মধ্যের দাইরে দৌড়াদৌড়ি করে উড়ে দলের কাউকে ছুঁতে পারলে উড়ে দল মারা যায়। তখন তাদের ধরতে হয়। আর উড়ে দলের ছাবেরা ধরে দলের প্রতি দাইরে ছাবকে ফাঁকি দিয়ে মইল্ল্যার শেষ দাইর পার হয়ে যেতে পারলে তখন শেষ দাইর প্রথম দাইর হয়। উল্টো দিক হতে খেলার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। আর উড়ে দলের একজনকেও যদি কেউ না ছুঁই মতো শেষ দাইর পাড় হয়ে যেতে পারে তবে তাদের জিত হয়। এইভাবে দাইর রক্ষাকরী ও আক্রমনকারীর মধ্যে পর খেলা চলে। যা তখনকার সময়ে সকল বয়সী ছেলে যুবকদের জন্য অতিপ্রিয় খেলা ছিল। এখন এটি বিলুপ্ত প্রায়।
৪। হা-ডু-ড বা ঘাডু ঘাডু খেলা : এ খেলাটি তখনকার গ্রাম বাংলার খুবই জনপ্রিয় খেলা যা চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে ঘাডু ঘাডু খেলা হিসেবে পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের জনসাধারনের মাঝে এ খেলাটি অতি জনপ্রিয় বলে বাংলাদেশ সরকার খেলাটিকে জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
হা-ডু-ডু খেলাটি বিরত্বের খেলা হিসেবেও বিবেচিত। এখেলায় নির্দিষ্ট সীমা রেখা দিয়ে একটি বড় কোর্ট করতে হয়। এ কোর্টকে দু’ভাগে ভাগ করে নিয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত করা হয়। ৩,৫,৭ বা ততোধিক খেলোয়ার নিয়ে দ’ুপক্ষ হয়ে দু”ভাগে ভাগ করে খেলাটি খেলা যায়। এক পক্ষের একজন খেলোয়ার এককভাবে একটি বোল আউরিয়ে দম নিয়ে শত্রুর পক্ষের সীমানায় প্রবেশ করে। শত্রু পক্ষকে ঘায়েল করে তার সীমানায় ফেরত আসতে হয়। এসময় যদি শত্রু পক্ষ তাকে ঘায়েল করতে পারে তবে তার মৃত্যু হয় বা শত্রু পক্ষের হাতে পড়ে তার বোল ফুড়িয়ে দম শেষ হয়ে গেলে এতেও তার মৃত্যু হয়। এ খেলায় যেহেতু এককভাবে শত্রু পক্ষের সীমানায় প্রবেশ করে শত্রু পক্ষের সম্মিলীত আক্রমনের মূখে তাদেরকে ঘায়েল করে বিজয়ী হয়ে নিজ কোর্টে বা ঘরে ফিরে আসার মধ্যে যথেষ্ট শারীরক শক্তি, কৌশল, ক্ষীপ্রতা শৌর্য্য বীর্যের প্রয়োজন হয়, তাই এ খেলাটি শৌর্ষ্য বির্য্যরে প্রতীক। চট্টগ্রামের ভাষায় এখেলায় একটি জনপ্রিয় বোল রয়েছে তা হল :
“ঘা – ডু – ডু – ডু লক্ষণ,
তোরে মাইত্যে কতক্ষণ কতক্ষন,
———————- ইত্যাদি।
৫। ডাং গোলা বা ডাংগুটি খেলা ঃ- চট্টগ্রাম অঞ্চলে খেলাটি ডাংগুলি বা ডাংগোলা খেলা হিসেবে পরিচিত। এ খেলায় সোয়া হাত পরিমাণ লম্বা মসৃন ও গোলাকার একটি বাঁশ বা গাছের দন্ডকে বলা হয় ডাং এবং পাঁচ আঙ্গুল বা ৯/১০ ইঞ্চি লম্বা আঙ্গুলের সমান ছোট গাছ বা বাঁশের ডালকে বলা হয় গুটি বা গোলা। এ নিয়ে ডাংগুটি বা ডাংগোলা খেলা। সমান সংখ্যক দু’দলের মধ্যে ডাংগোলা খেলা অনুষ্ঠিত হয়। একদল উড়ে অপর দল ধরে। একটি ছোট গর্ত থাকে সেখানে ডাংপাতা থাকে। ধরে দল নির্দিষ্ট দুরুত্বে দাঁড়ায়। উড়ে দলের একজন করে ধরে দলের দিকে গোলা ছুড়ে মারে। গোলা মাটিতে পড়ার আগে ধরে ফেলতে পারলে উড়ে দল মারা যায়। তখন তাদের ধরতে যেতে হয়। আর গোলা মাটিতে পড়লে তা ধরে দলের একজন ডাং এর দিকে ছুঁড়ে মারে। গোলা ডাং এ ঠেকলে উড়ে দল মারা পড়ে। যদি না ঠেকে তখন উড়ে দল ডাং দিয়ে গোলা পিঠাতে থাকে। গোলার দুরুত্ব হিসেব করে মোহর গোনা হয়। অথবা ডাং দিয়েও গোনা হয় এভাবে এক ডাং দো ডাং ইত্যাদি। এ খেলাটিও এখন প্রায় বিলুপ্ত।
৬। চিঁ হিঁ খেলা : এটি চট্টগ্রামের গ্রাম বাংলার কিশোরদের অতি প্রিয় খেলা। ১০/১২ জন ছেলে দু’দলে বিভক্ত হয়ে খেলাটি খেলতে হয়। খেলোয়ারদের ভাষায় মোট খেলোয়ারদের অর্ধেক “উড়ে” তারা থাকে ঘরে বাকী অর্ধেক “ধরে”, তারা থাকে বাইরে। যারা ঘরে থাকে তাদের জন্য নির্দিষ্ট দুটো এলাকা থাকে। একটি এলাকায় একজন দাঁড়ায়, তাকে বলা হয় “বুড়ী” তার চারিদিকে বৃত্তাকার চিহ্ন দেয়া হয়। বুড়ীর অন্তত ৭/৮ হাত দূরে আরো একটি বৃত্তাকার চিন্ত দিয়ে ঘর তৈরী করা হয়। সেখানে অন্যরা দাঁড়ায়। বোল সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। তাদের একজনকে বোল দিয়ে বুড়িকে বাইরের বা ধরে খেলোয়ারা যাতে না ছুঁতে পারে সে মত ঘরে আনতে হয়। বুড়ীকে আনতে না পাড়লে যে বোল দেবে সে বোল নিয়ে ঘরে ফিরে আসবে। যদি বোল পড়ে যায় তখন বাইরের বা ঘরের খেলোয়ারা তাকে ছুলে সে খেলার ভাষায় “মারা” যায়। নির্দিষ্ট সংখ্যক বোলের মধ্যে ঘরের খেলোয়ারা বুড়ীকে বাইরে বা ধরে খেলোয়ারা না ছুঁতে পারে মত করে ঘরে নিয়ে আসতে পারলে তারা বিজয়ী হয় এবং বাইরের খেলোয়ারা যতক্ষণ ঘরের খেলোয়ার বা বুড়ী মারতে (ছুঁতে) না পারে ততক্ষন তারা ঘরে থাকে। মারতে পারলে ঘরের দল বাইরে যাবে, বাইরের দল ঘরে আসে। এইভাবে খেলা চলতে থাকে। ঘা-ডু-ডু খেলার ন্যায় চিঁহিঁ খেলার বোল প্রায় একই ধরনের।
৭। এচকি মেচকি খেলা ঃ এ খেলা চট্টগ্রামের সর্বত্রই এবং স্কুলের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের খুবই প্রিয় খেলা। একটি বয়স্ক মেয়ে ছোট শিশুদের এক জায়গায় জড়ো করে বসায় এবং তাদের হাতগুলো মাটির উপর উপুর করে রাখতে বলে। অতপর বয়স্ক মেয়েটি নিজের ডান হাত মুঠো করে প্রত্যেক উপুড় করা হাতের পাঞ্জার উপর আস্তে আস্তে কিল দিয়ে ছড়া বা বোল আউড়ায় থাকে। ছড়ার একটি শব্দ বলার সাথে সাথে এক একটি হাতের পাঞ্জার উপর কিল দিয়ে ছড়া বরে। যার হাতে কিল দেয়ার সাথে সাথে ছড়া বলা শেষ হয় তখন হাতের মুঠো খুলে তার হাতে পাতা দিয়ে কোপ দেবার মত করে কেছেৎ বলে আঘাত দেয়। তখন সে ছেলে বা মেয়ে বা মেয়েটি হাতখানা উঠিয়ে ফেলে। এইভাবে বার বার ছড়া বলে হাত কাটতে থাকে। সব হাত কাটা হয়ে গেলে খেলাও শেষ হয়ে যায়। এচকি মেচকি খেলায় বিভিন্ন গ্রামীন ছড়া প্রচলিত ছিল যা গ্রাম বাংলার ইতিহাসের অতি মূল্যবান সম্পদ।
৮। দুধা খেলা : চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে এখেলাটি প্রচলিত। ১০ হতে ১৪ বছর বয়সের ছেলেদের মধ্যেই খেলাটি জনপ্রিয়। ৪/৫ জন ছেলে নীচু নীচু ২/৩ টি গাছের ডালের উপর উঠে একজন নিদির্ষ্ট রেখাবদ্ধ বৃত্তের মধ্যে দাঁড়্য়া। গাছে চড়া ছেলেরা নীচের ছেলেটিকে লক্ষ্য করে বোল দেয়। “দু’ধারে দুধা” নীচের ছেলেটিকে বলে : দুধ কা না দস,
গাছের ছেলেগুলো জবাব দিবে : বাঘের ডরে
: বাঘে কি করে?
: মারে ধরে।
: বাঘের নাম কি?
: ওলা।
: গাছে গাছে বোলা।
এ বোল বলার সাথে সাথে নীচের ছেলেটি গাছের ডালে বসা ছেলেগুলোকে ধরার চেষ্টা করে। যদি সে কাউকে ছুঁতে পারে তখন ঐ ছেলেকে পরাজিত হয়ে নীচে চলে আসতে হয়। সে ধরবার চেষ্টায় গাছে উঠলে তখনই অন্য গাছ থেকে কেউ নেমে এসে তার বৃত্ত ছুঁতে পারলে সে পরাজিত হয়। কেউ তার বৃত্তে আসবার আগে কাউকে ছুঁতে পারলে সে গাছে উঠে এবং ঐ ছেলেটি নীচে নেমে আসে। স্থান বেধে দুধা খেলার বহু প্রকার বোল প্রচলিত রয়েছে।
৯। টুনি খেলা ঃ এ খেলাটি ৮/১০ বছরের ছেলে মেয়ে উভয়ের নিকট প্রিয়। খেলাটি অলস সময়ের। যখন কিছুই করতে হয়না। ঘরে একা বসে ভালও লাগেনা তখন এখেলাটি খেলার উত্তম সময়। তাই এটি যখন তখন যেখানে সেখানে খেলা যায়। ৪/৫ জন ছেলে মেয়ে যে কোন এক জায়গায় গোল হয়ে দু’হাত জোড় করে বসে, তাদের একজন প্রথম পক্ষ হয় আর একজন হয় দ্বিতীয় পক্ষ। প্রথম পক্ষ ছোট একটি মাটির গুটি বৃদ্ধ ও অনামিকা আঙ্গুলে ধরে দু’হাত জোড় করা ছেলে মেয়েদের মুটোর ফাঁকে আঙ্গুল ডুকিয়ে গুটি রাখার ভান করে ছড়া কাটে। যেমন –
“টুনি ভাইয়ের টুনি, হারবা গাছের বুনি,
কাত্থে আছে, কাত্থে নাই।
করে কাউয়া ভাইঙ্গা চুইয্যা, ঠিডিং ঠিডিং মালিক জোড়,
এ বেটা ভা বড় চোর ইত্যাদি”।
এ ধরনের ছড়া কেটে যে কোন একজন হাতের ফাঁকে গুটিটি ডুকিয়ে দিয়ে অপর একজনের হাতে দিয়েছে বলে ভুল নির্দেশ দিয়ে বোল বলা শেষ করে দেয়। তখন চারিদিকে ঘুড়তে থাকা দ্বিতীয় পক্ষ প্রথমবারে কারো হাতের ফাঁক হতে যদি গুটিটি বের করে দিতে পারে তবে তার জিত হয়। আর না পারলে হেরে যায়। স্থান বিশেষে টুনি ভাইয়র টুনি খেলায়ও বহু ধরনের ছড়া প্রচলিত ছিল। যা চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বর্ণিত খেলা সমূহ ছাড়াও আরো অনেক খেলা চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত ছিল বর্তমানে এসব অনেক খেলাধুলার অস্তিত্বই খুজে পাওয়া যায়না। যদিও পাওয়া যায় তা অনেকের স্মৃতির মধ্যেই শুধু জাগড়িত রয়েছে। বর্তমান নষ্ট সময়ের কারণে বেচে থাকার তাগিদে অনেকেই তাও ভুলতে বসেছে। এসব অনেক খেলাধুলার বিস্তারিত বিবরণ আমি উল্লেখ করেছি। কিন্তু অনেক খেলাধুলার বর্ণনা দেয়া সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে অনেকগুলো খেলা চট্টগ্রামের স্কুল গুলোর মাঝে প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য খেলাগুলো হচ্ছে। যেমনঃ- (১) জোড় না বেজোড় খেলা, (২) চোখ বান্দা খেলা, (৩) কুলুক খেলা, (৪) টিক্কা চুরি খেলা, (৫) বাঘ পাইর খেলা, (৬) পানি খেলা, (৭) হাত গুডি খেলা, (৮) কড়ি খেলা, (৯) কৈতর বাচা খেলা। (১০) কুত্তা খেলা, (১১) কইল্যা খেলা, (১২) গেইট ধরা খেলা প্রভৃতি।
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক গ্রামাঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া এসব খেলাগুলোর বর্ণনা পাঠে আশা করি সকলেরই ভাল লাগবে। আজকাল আকাশ সংস্কৃতি ও কম্পিউটার এর বদৌলতে ছেলে মেয়েরা কম্পিউটার গেইমের মধ্যে ডুবে রয়েছে। এছাড়াও পাশ্চাত্যের রেসলিং খেলা অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করে নিয়েছে।
টেলিভিশন কম্পিউটারের আধুনিক খেলাধুলার মাঝে প্রজন্ম এমনভাবে ডুবে রয়েছে ফলে শারীরিক গঠন মূলক খেলাধুলা তাঁদেরকে আকর্ষণ করতে পারছেনা। এছাড়াও শহরে বা গ্রামে এখন মাঠের বড় অভাব। খেলাধুলার জন্য তেমন কোন খোলা মাঠ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। নির্মল খেলাধুলা না থাকার কারণে ছেলে মেয়েরা অপরাধ জগতে ঢুকে পড়ছে এবং ঘরে ঘরে কোন্দল, ঝগড়া ঝাটি লেগেই রয়েছে।
আমাদের শিকড় গ্রামের প্রচলিত খেলাধুলা প্রজন্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস। আশাকরি এতে আমাদের প্রজন্ম তাদের শিকড়ের সন্ধান পাবে।
সূত্র : (১) চট্টল গবেষক আব্দুল হক চৌধুরী লিখিত – চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি পুস্তক দ্রষ্টব্য, (২) আব্দুল করিম সাহিত্যে বিশারদ রচিত, প্রাচীন বাংলা পুথির বিবরণ, (৩) ডঃ আহমদ শরীফ রচিত চট্টগ্রামের ইতিকথা প্রভৃতি পুস্তক দ্রষ্টব্য