ফটিকছড়ি নিবাসী রুজিনা বেগম, বয়স ৩৫, চার সন্তানের জননী, পেশায় গৃহিনী। হঠাৎ প্রচণ্ড পায়ের নিম্নাঙ্গের (কাপ্স্‌ মাসেল) ব্যথার জন্য হাঁটাচলা বা উঠাবসা করতে পারছেন না। উনার ভাষ্যমতে মনে হচ্ছে পায়ের ভেতরে কি যেন-কি হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কোন কিছু বুঝে উঠার সাথে সাথেই হসপিটালাইজ করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর এম.আর.আইতে কোমরের পি.এল.আই.ডি/ ডিস্ক প্রলাপ্স/ ডিস্ক হার্নিয়েটেড সমস্যাটি ধরা পড়ে। আমাদের মেরুদণ্ডে অনেকগুলো ছোট ছোট কশেরুকা বা হাড় রয়েছে (৩৩টি), এই ছোট্ট হাড়গুলোর মাঝখানে নরম এক জাতীয় তন্তু রয়েছে যাকে ডিস্ক/ইন্টারভাটেব্রাল ডিস্ক বলে। যাতে এক হাড় অপর হাড়ের মাঝে ঘর্ষণ না লাগে, চলাফেরা সহজ করা, মেরুদন্ডকে একসাথে শক্ত করে রাখার জন্য লিগামেন্ট হিসাবে কাজ করে। ইতোপূর্বে ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়ে ফিজিওথেরাপি দিতে সাজেশ করেন। ফিজিওথেরাপি সাজেশ করার কারণে আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখার পর তাঁদের অবহিত করি এটা ফিজিওথেরাপিতে ভাল হবে, এধরনের অনেক রোগী আমরা পূর্বে ভালো করেছি। ইতোমধ্যে কিছু ডাক্তার সার্জারী করার পরামর্শও দেন। সাধারণত সামনে ঝুঁকে কাজ করলে, ভারী কিছু হঠাৎ উঠালে, পড়ে গেলে বা দুর্ঘটনা হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। রোগী এবং অবিভাবকদের কাউসিলিং এর মাধ্যমে থেরাপিতে এধরনের রোগী অবশ্যই ভাল হয় সে ব্যপারে বুঝাতে চেষ্টা করি। রুজিনার স্বামী ভারতে নেবার জন্য তোড়ঝোঁড় শুরু করেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। আমি তাঁদের বুঝানোর চেষ্টা অব্যহত রাখি কিছুটা সময় (সপ্তাহ খানেক) আমাদের দেয়ার জন্য। যথারীতি আমি ফিজিওথেরাপি শুরু করি, ২ দিন দেওয়ার পর রোগীর পরিবর্তন দেখা যায়। তখন রুজিনার স্বামী বুঝাতে বাকী থাকলো না রোগী ভালো হবে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে। এভাবে আমি প্রতিদিন ৩ বার করে থেরাপি দেবার পর সপ্তাহ খানিকের মাথায় পায়ের ও কোমরের ব্যথা সম্পূর্ণ ভালো। ৮-১০ দিন পর উনারা ভালো হয়ে বাড়ি যান। এ ধরনের রোগীরা সাধারণত ১ মাসের মধ্যে ভালো হয়। একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে রুজিনা বার বার আমাদের বলছে আমার পায়ের ব্যথা আপনার কেন আমার কোমরে থেরাপি দিচ্ছেন? যতবার আমরা ফিজিওথেরাপি দিতাম ততবার উনি একই কথা বলতেন। তাই সবাইকে বলছি পি.এল.আই.ডি/ডিস্ক প্রলাপ্স রোগীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোমরে তেমন ব্যথা অনুভব করেন না, ব্যথা রোগীর পায়ের দিকে নার্ভের মাধ্যমে নামতে থাকে। বসলে, দাঁড়ালে বা হাঁটা-হাঁটি করলে পায়ের পাতা বা কাপ্স মাসেলে ব্যথা থাকবে, অবশ অবশ ভাব হবে বা কোন সময় পায়ে কোন সেন্স থাকবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় এক শ্রেণীর রোগী আছেন তারা মনে করে বাংলাদেশে ভালো মানের কোন চিকিৎসা নাই বা দেশে কোন রোগী ভালো হয় না। কোমর ব্যথার বেশিরভাগ রোগী ফিজিওথেরাপি না নিয়ে সরাসরি সার্জারিতে চলে যান বা দেশের বাইরে যাচ্ছেন। এ জন্য ডাক্তারদের সঠিক পরামর্শ ও রোগীদের ধৈর্য্য ধরে কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে সহজে ভালো হয়ে যাবেন। তাই ব্যথা জাতীয় যেকোনো রোগে বা কোমর ব্যথার ডিস্ক প্রলাপ্স/পি.এল.আই.ডি/ ডিস্ক হার্নিয়েটেড এ পিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন এবং সুস্থ থাকুন।
লেখক
অ্যাসোসিয়েট কন্সালটেন্ট( অবস-গাইনী)
ইমপেরিয়াল হসপিটাল, চিটাগাং