পাশা মোস্তফা কামাল একজন নিবিষ্ট শিশুসাহিত্যিক। ছোটোদের জন্য ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ ও গল্পের পাশাপাশি সমাজ সচতনামূলক ছড়াও তিনি লিখে থাকেন নিয়মিত। সম্প্রতি শিশু-কিশোর উপযোগী বেশ কিছু গবেষণাকাজ সম্পন্ন করেছেন, যেগুলো ছোটোদের মানস গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক। বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর মৌলিক গবেষণা আমাদের মুগ্ধ করেছে।
তাঁর ছড়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য শিশুদের আনন্দ দান। ব্যক্তিগত জীবনে হাসিখুশি থাকা এই মানুষটি তাঁর ছড়া- কবিতাগুলোতে উচ্ছল ও আনন্দময়। একটা গল্পবাজ মন সব সময়ে তাঁর ভেতরে কাজ করে। ফলে ছন্দে ছন্দে তিনি ছোটোদের কৌতুকমিশ্রিত বক্তব্য শোনান। তিনি মনে করেন, কষ্ট, দুঃখ থেকে ছোটোদের যত দূরে রাখা যায়, তত ভালো। কেননা ছোটোদের ভুবন আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের। তারা সব সময় হাসি খুশিতে দিন কাটাবে।
পাশা মোস্তফা কামালের কিশোরকবিতাও স্নিগ্ধ ও রুপোময়। দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু তাঁর কবিতার উপজীব্য হয়ে এসেছে বারবার। দেশ, মাটি এবং মানুষের কথা উঠে আসে তাঁর লেখায়।
অতি সম্প্রতি জেলহত্যা দিবসে তিনি লিখলেন অসাধারণ একটি লেখা। লেখাটি এখানে দেওয়া হলো :
জাতীয় চার নেতার স্মরণে
জেলের ভেতর খুন করেছে খুনপিয়াসি মোশতাকে
পঁচাত্তরে পাকি ভূতে মানিয়েছে পোষ তাকে।
ভূতটা এসে বলল তাকে বুট জুতাতে চুম্মা দে
হুকুম তামিল করলো তখন গদি লোভী উন্মাদে।
জাতির পিতার রক্তে রাঙায় লাল সবুজ এই বাংলাদেশ
বর্বরতার সেই কালো রাত একটা রাতেই ধ্বংস দেশ।
চার নেতাকে বাঁচিয়ে রেখে পায়নি স্বস্তি কুলাঙ্গার
তাইতো চালায় মধ্য রাতে জেলের ভেতর ব্রাশ ফায়ার।
গদির লোভে অন্ধ হয়ে করল বৃথা জীবনটাই
দুদিন পরেই দেখল খুনি পাছার নিচে গদি নাই।
ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নোংরা কাদার সাতপাঁকে
খাচ্ছে খাবি মীর জাফর আর অন্ধ খুনি মোশতাকে।
পাশা মোস্তফা কামালের প্রথম প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ ‘এক ঝুড়ি স্বপ্ন’ প্রকাশিত হয় ২০০২ খ্রিস্টাব্দে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ২৬। তন্মধ্যে আমাদের জাতির জনক (কিশোরপাঠ), আমাদের মুক্তিযুদ্ধ (কিশোরপাঠ), বিজয়ের গল্প, পানসি ভাসে আপন মনে, রংধনু উল্লেখযোগ্য।
ছড়াশিল্পী পাশা মোস্তফা কামালের জন্ম ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছোটদের মাসিক কাগজ ঝুমঝুমি সম্পাদনা করেছেন ২০০১ সাল থেকে। বর্তমানে তিনি পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক।
লেখালেখির বাইরে তিনি গান করেন, অভিনয় করেন, তবলা চর্চা করেন। পেশাগত দায়িত্বের ভেতরেও এভাবেই তিনি নিজেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত রাখেন।