কথিত ‘পিএস’ এজাজ চৌধুরীর অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক কমিশন কথিত পিএস এজাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের অনুমোদন দেয়ার পর প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধানের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এজাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, ইয়াবা, মাদক ব্যবসা ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে প্রায় ৭ বছর আগে নগরীর আছদগঞ্জে তার পিতার গোডাউন থেকেই মিলেছিল ওই সময়ের রেকর্ড ইয়াবার চালান। এজাজ চৌধুরী বর্তমানে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদক প্রধান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘২০১৯ সালের শুরুতে দুদকে জমা হওয়া একটি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত নভেম্বরে কমিশন অনুমোদন প্রদান করেছেন। প্রথমে চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হলেও অভিযোগের ব্যাপকতার কারণে দুদক চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় এখন সরাসরি প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
সূত্রে জানা গেছে, দুদকে আসা ওই অভিযোগে এজাজ চৌধুরীকে পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরীর পিএ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ নং- ১৮১/২০১৯। নগরীর টেরি বাজারে “ ভেনাস শপিং মল” নামের একটি অভিজাত বিপণীর কথা উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে। যেটির বাজারমূল্য আড়াই কোটি টাকার বেশি। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে, তাছাড়া ইয়াবা ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে স্ত্রীসহ নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে অভিযোগে। পটিয়া উপজেলার হরিণখাইনে নিজের গ্রামের বাড়িতে রাজকীয় তোরণ নির্মাণের কথাও রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এজাজ চৌধুরী পটিয়ার এমপি (বর্তমানে হুইপ) সামশুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) নন। হুইপের ব্যক্তিগত সহকারী হলেন হাবিবুল হক চৌধুরী। হাবিবুল হক ২০০৯ সাল থেকেই এমপি সামশুলের সরকারি পিএ হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তবে এজাজ এলাকায় ‘এমপির পিএস’ হিসেবে পরিচিত। ২০১২ সালে নগরীর আসদগঞ্জে এজাজের পিতা মালেক চেয়ারম্যানের গোডাউন থেকে র্যাবের হাতে পৌনে তিন লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর থেকেই এজাজ পটিয়ার এমপি’র পিএস নন বলে দাবি করে আসছেন সামশুল হক চৌধুরী।
সূত্রে জানা যায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার র্যাব-১ এর একটি টিম ২০১২ সালের ১৮মে ভোরে বন্দরনগরীর আসদগঞ্জে মালেক চেয়ারম্যানের আড়তে ২ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। তবে র্যাবের ওই অভিযানে আবদুল মালেক প্রকাশ মালেক চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার না হলেও কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় তাকে আসামী করা হয়। মামলায় জব্ধ ইয়াবার মূল্য দেখানো হয়েছে ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-৭ এর রতন দেবনাথ ওই বছরের ৩০ জুন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে আবদুল মালেককে পলাতক আসামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা ও স্পেশাল জজ আদালতে বিচারের অপেক্ষায় থাকা মামলাটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
এব্যাপারে এজাজ চৌধুরীর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে গত তিনদিন ধরে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর অফিসিয়াল পিএ হাবিবুল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি।