পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যখন স্বীয় কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ‘মানবিক পুলিশ’ হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত; তখন এক শ্রেণীর অপরাধপ্রবণ মানুষ ‘পুলিশ’ পরিচয় ব্যবহারের মাধ্যমে নানা অপকর্মে লিপ্ত। ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধী নিজেদের অপরাধপ্রবণ মানসিকতা চরিতার্থ করতে গিয়ে এ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের অপরাধ রোধে সামাজিকভাবে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন। তিনি বলেন, জনগণের সেবক হওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় তাদের নাম পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ করলে জনগণের মধ্যে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশের আরো কঠোর হওয়া উচিত, কেননা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে ক্ষতি হবে তাঁদেরই।
ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপহরণের ঘটনায় অপহরণকারী দলের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ সরোয়ার হোসেন প্রকাশ মানিককে (২৩) গ্রেপ্তার এবং অপহৃত আবু তাহেরকে (৪৫) উদ্ধার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। গত ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে থেকে অপহরণকারী মানিককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে আবু তাহেরকে উদ্ধার করা হয়। ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন আজাদীকে জানান, গত ৬ জানুয়ারি ভোর ৬ টার দিকে ব্যবসায়ী আবু তাহের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদ আল ইব্রাহীম ঈদগাহ কাঁচা রাস্তার মোড়ের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে ঈদগাহ কাঁচা রাস্তার মাথা মাহাদি স্টোর নামীয় মুদি দোকানের সামনে রাস্তার উপর পৌঁছা মাত্র আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা আসামিরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভিকটিম আবু তাহেরকে অপহরণ করে।
পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে এক নারীকে বিয়ে ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। মামলার নথির বরাত দিয়ে বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দীন আজাদীকে জানান, আকিবুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি ছাড়াও তাহসান খান প্রিজন নামের আরেকটি ফেসবুক আইডি চালান। সেই আইডিতে আকিব নিজেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পরিচয় দিয়ে দুই সন্তানের জননী ওই নারীর সাথে পরিচিত হন। গত ৩ জুলাই ওই নারীর ডিভোর্সের পর আকিব বিভিন্ন সময়ে তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান এবং অন্তরঙ্গ ছবি তোলেন। ৭ আগস্ট আকিব ওই নারীকে বিয়ে করে বিভিন্ন হোটেলে এবং বাকলিয়া রাহাত্তার পুল এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অবস্থান করেন। ওই নারীর অভিযোগ, আকিব চাকরিতে সমস্যার কথা বলে তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নিয়েও পরিশোধ করেননি। এছাড়াও ওই নারীর কাছ থেকে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল ফোন, তিন লাখ টাকায় মোটর সাইকেল কেনা ছাড়াও অন্তত ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আকিব। আকিবের সাথে আরও নারীর সাথে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জানতে পেরে ওই নারী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আকিব তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে আকিব পুলিশ কর্মকর্তা নন এবং তার সাথে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
গত ৭ জানুয়ারি ঢাকা – চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করার সময় তিন ডাকাতকে গণধোলাই দিয়েছে জনতা। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আটক ডাকাতরা হলো- চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার আলগী গ্রামের সহিদুল্লাহর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), একই জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কূল গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে রিপন মিয়া (৪৬) ও কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার রায়পুর গ্রামের মৃত দুদু মিয়ার ছেলে বারেক মিয়া (৫০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে পুলিশের নকল আইডি কার্ড উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশ।
সীতাকুণ্ডের কুমিরায় পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর তার থেকে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের কয়েকজন সোর্সের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার ভুক্তভোগী জানে আলম অভিযুক্ত সোর্স জেবল, মোশাররফ, মোস্তফা ও আকাশ প্রকাশ সুমনের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর দুই সোর্স মোস্তফা ও মোশাররফকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ২৭ অক্টোবর পুলিশ পরিচয় দিয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ২ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে জানান, বিপন দাশ (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী ২৬ অক্টোবর দুপুরে নগরের ডিসি হিলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় সুজন ও শ্যামল নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেয়। তারা বিপনের হাতে থাকা মোবাইল কেড়ে নিতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ঝাউতলা গলির মুখে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বিপনকে ভয় দেখিয়ে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনার পর ২৭ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে সুজন ও শ্যামলকে স্টেশন রোড এলাকায় ঘুরতে দেখে টহল পুলিশকে খবর দেন বিপন। এরপর পুলিশ তাদের আটক করে।
এদিকে ব্যবসায়ী আবু তাহেরকে অপহরণ করে ৬৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় অপহরণকারী সরোয়ার হোসেন প্রকাশ মানিককে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার অপহরণ মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম খায়রুল আমিনের আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। অপহৃত আবু তাহের নগরীর আইকন ডেভেলপমেন্ট প্রপার্টিজ লিমিঢেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলে জানা গেছে।
আসামি সরোয়ার হোসেন নোয়াখালীর সুধারাম থানার কিশোরগঞ্জ পাক ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হালদার-দুলালের বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে। আসামি সরোয়ার আর্থিকভাবে প্রচুর দেনা হওয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বলে জানায় পুলিশকে।