বাংলাদেশের বাঙালিদের রয়েছে শত শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বাংলাদেশের বাঙালি সংস্কৃতি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে সমহিমায় উজ্জ্বল। বাঙালির নিজস্ব কিছু সস্কৃতি ঐতিহ্য রয়েছে যা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। আমাদের কাছে এই কৃষ্টি সংস্কৃতি অনেক ভালোবাসার অনেক ভালোলাগার । বাংলা নববর্ষ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য।। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের মাঝেও নববর্ষ উদযাপন এর আয়োজন দেখা যায়। অন্তরে লালিত সংস্কৃতি ঐতিহ্য ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও পহেলা বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি সকল বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত।পহেলা বৈশাখ উদযাপনের শুরু হয়েছিল পুরান ঢাকার মুসলিম মাহিফরাস সম্প্রদায়ের হাতে।

এই উৎসবটি শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল “শুভ নববর্ষ”। নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

পহেলা বৈশাখ বাঙালির সম্প্রীতির দিন, বাঙালির মহামিলনের দিন। এদিন সমগ্র জাতি জেগে ওঠে নবপ্রাণে নব-অঙ্গীকারে। বাঙালি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ছাড়াও বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন উপজাতি এই দিনটি পালন করে। যে সংস্কৃতি মানুষের তৈরি আবার সে সংস্কৃতি ছাড়াও মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। মানব জাতি তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে তাকে তার সৃষ্ট সংস্কৃতিকেও আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়, চর্চা করতে হয়, মনে-প্রাণে লালন করতে হয়। এ সংস্কৃতি কোন জাতির সামগ্রিক পরিচয়। এ সংস্কৃতিকে জিইয়ে রাখতে কিংবা এর খোঁজেই এ নববর্ষ উৎসব। এক জাতিকে অন্য জাতি থেকে পৃথক করে চেনার জন্য সবচেয়ে সহজতম উপায় হলো তাদের স্ব-স্ব সংস্কৃতি। প্রত্যেক জাতি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে আত্মপরিচয় দিয়ে থাকে। কোনো জাতিকে জাগাতে হলে প্রথমত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জাগাতে হয়।
এ- পহেলা বৈশাখ ধর্ম-বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বাঙালি সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির মিলনমেলার অপর নাম বাংলা নববর্ষ উৎসব।
বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
নগরীর অন্যান্য নিয়মিত আয়োজনের মধ্যে রয়েছে শিশু প্রতিষ্ঠান ফুলকির তিনদিন ব্যাপী “ছোটদের বৈশাখী উৎসব” যার প্রারম্ভ হয় পহেলা বৈশাখের দুদিন আগে এবং শেষ হয় বৈশাখের প্রথম দিন সন্ধ্যায়। ১৯৯০ সাল থেকে নিয়মিত এই আয়োজন হয়ে আসছে।
নগরীর কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ভবন বা সিআরবি তে মুক্ত মঞ্চে আয়োজন হয়ে থাকে সঙ্গীতানুষ্ঠানের ।
চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউটের বাদশা মিয়া রোডস্থ ক্যাম্পাসে বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে বর্ণাঢ্য সাঙ্গস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এবং এই অনুষ্ঠানে উঠে আসে,বাঙ্গালীর ঐতিহ্য,সংস্কৃতি,কৃষ্টি এবং একি সাথে আঞ্চলিক নানা বিষয় আশয়ও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে ।পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম এই দিনকে উৎসবে আনন্দে বরণ করে নেয় বাঙালি। এটি বাঙালির একটি সর্বজনীন উৎসব।

আজীবন নববর্ষ উদযাপন এর দিনটি বাঙালির চেতনায় স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।।