ইতিহাসের প্রবাহমান ধারায় ১৯৭১ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা।
১৯৭১ এর দীর্ঘ সাড়ে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা বোনের ইজ্জত আভ্রুর বিনিময়ে আমরা পেলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ৯৩ হাজার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসর্ম্পনের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিশে^র দরবারে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্ব ঘোষণা করা হলো।
“বাঙালি জাতি হাজার বছর পর একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেল, জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীত পেল; কিন্তু তার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে পেল না। কারও দয়ার দানে নয়, কোন দেশ-দরবার নয় বরং এক সাগর রক্তে দামে বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বাধীনতা। এক রক্তের সাগর পেরিয়ে বাঙালি জাতি পৌঁছেছে তার বিজয়ের সোনালী তোরণে। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাঙালি জাতি বিজয়ের স্বাদ পেলেও তা ছিল অপূর্ণ। বহু চড়াই-উৎরাইয়ের পর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বিশ^বাসীর চাপের মুখে বাঙালির নয়নমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলেন। জীবন মৃত্যুর কঠিন চ্যালেঞ্জের ভয়ঙ্কর অধ্যায় পার হয়ে সারা জীবনের স্বপ্ন, সাধনা ও নেতৃত্বের ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান নেতার প্রত্যাবর্তন, সকল স্তরের জনগণকেই আনন্দে উদ্বেলিত করেছিল।
৮ জানুয়ারি, ১৯৭২ শনিবার বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান। সেদিনই মধ্যরাতের কিছুক্ষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রওয়াল পি-ি থেকে লন্ডনে রওনা হলেন। তখন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে কোন সরাসরি বিমান যোগাযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধু গেলেন তেহরান বা আঙ্কারা রুটে। ভোর সাড়ে ৬ টায় ঘন কুয়াশার মধ্যে বঙ্গবন্ধু লন্ডনের বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছলেন। সঙ্গে বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা শেখ মুজিব পেলেন মহামুক্তির আস্বাদ।
বিমানবন্দর থেকে তাঁকে রোলস থিমুজিন গাড়িতে করে মে-ফেয়ারের কেন্দ্রস্থল কারিজ হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তির প্রথম দিনেই মধ্যহ্নের আগে তিনি ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়অর্ড হিথের সাথে ও দিল্লীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে কথা বলেন। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এ্যাডওয়াড হিথ অবকাশ যাপনে ব্যস্ত ছিলেন। মি. হিথ অবকাশ সংক্ষিপ্ত করে বঙ্গবন্ধুকে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে অভ্যর্থনা জানান। দুই নেতা একান্তে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক করেন।
লন্ডনে প্রায় ২৪ ঘন্টা অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু তাঁর হোটেলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দুই শতাধিক সাংবাদিকের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ পরদিন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সম্মানিত প্রধানমন্ত্রীকে একটি বিশেষ বিমানে দেশে পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থা করে দিলেন। দেশে ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু দিলীøতে কিছু সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি করেন। দিল্লীতে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বরাহগিরি ভেঙ্কট গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর পুরো মন্ত্রিসভা, সামরিক বাহিনীর প্রধানরা স্বাধীন বাংলাদেশের মহামান্য স্থপতিকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেন।
এদিকে স্বাধীন বাংলার রাজধানী ঢাকার জনসমুদ্র, বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। ঢাকার প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি গলি ছিল লোকে লোকারণ্য। নতুন করে প্রাণ ফিরে পাওয়া ঢাকার নারী-পুরুষ কেউ সেদিন বাসায় ছিল না। সবার ঠিকানা যেন হয়ে গেল রাজধানীর রাজপথ, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। গ্রামগঞ্জ থেকেও ঢাকার অভিমুখে ছুটে আসলেন লক্ষ লক্ষ জনতা। গ্রাম থেকে কৃষক, শ্রমিক, কুলি, মুজুর, রিক্সাওয়ালা, ঠেলাগাড়ীওয়ালা সহ কেউ সেদিন বাদ যায়নি। তেজগাঁওয়ের কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধুকে বহন করে একটি খোলা ট্রাকের আড়াই ঘন্টা সময় লেগেছে। রাস্তায় জনতার ভীরে গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সম্মেলনে এক আবেগঘন ভাষণ দিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে দাঁড়ালেন তখন মনে হল সারাটি জীবন যেন তিনি এ দিনটির জন্যই অপেক্ষা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুও উপলব্ধি করলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর স্বপ্নের দেশে মায়ের বুকে তিনি ফিরে এসেছেন।
বাংলাদেশে ফিরেই রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছেন তা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের প্রয়োজনে পুরো ভাষণটি এখানে তুলে ধরা যুক্তিসংগত মনে করছি।
পাকিস্তানের সামরিক জান্তাদের ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে তৎকালিন রেসকোর্স ময়দানে সোহরাওয়াদী উদ্যান বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা আবেগে আপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, লাখ লাখ মানুষের প্রাণদানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার প্রতি সালাম। তোমরা আমার সালাম নাও।
আমার বাংলায় আজ এক বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। ৩০ লাখ লোক মারা গেছে। আপনারাই জীবন দিয়েছেন কষ্ট করেছেন। আমাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে-পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা। বাংলার এক কোটি লোক প্রাণভয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের খাবার, বাসস্থান দিয়ে সাহায্য করেছে ভারত। আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী, ভারত সরকার ও ভারতবাসীকে আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই কৃতজ্ঞতা। বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থনদান ও সহযোগিতাদানের জন্য ব্রিটিশ, জার্মান, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন জনগণকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
গত ৭ মার্চ রেসকোর্সে বলেছিলাম, ঘরে ঘুরে দুর্গ গড়ে তোল। আজ আবার বলছি, আপনারা সবাই একতা বজায় রাখুন। আমি বলেছিলাম, বাংলাদশকে মুক্ত করে ছাড়বো। বাংলাদেশ আজ মুক্ত স্বাধীন। একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এই স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন দেশেরূপেই বেঁচে থাকবে। বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে এমন কোন শক্তি কারো নাই।
গত দশ মাসে সেনাবাহিনী বাংলাকে বিরান করেছে। বাংলার লাখো মানুষের আজ খাবার নাই, অসংখ্য লোক গৃহহারা। এদের জন্য মানবতার খাতিরে আমরা সাহায্য চাই। বিশে^র সকল রাষ্ট্রকে অনুরোধ করছি-বাংলাকে স্বীকৃতি দিন। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি।’ কবিগুরুর এই আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। বাঙালি জাতি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তারা মানুষ, তারা প্রাণ দিতে জানে। এমন কাজ তারা এবার করেছে যার নজির ইতিহাসে নেই।
আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে-পূর্ণ হবে না। তোমরা আমার ভাইয়েরা গেরিলা হয়েছিলে দেশমাতার মুক্তির জন্য। তোমরা রক্ত দিয়েছো। তোমাদের রক্ত বৃথা যাবে না। তোমরা বাংলায় যারা কথা বল না, তারা এখন বাংলার মানুষ হও।
ভাইরা, তাদের গায়ে হাত দিও না; তারাও আমাদের ভাই। বিশ^বাসীকে আমরা দেখাতে চাই; বাঙালিরা কেবলমাত্র আত্মত্যাগ করতে পারে, তাই না, তারা শান্তিতে বাস করতে পারে। কিন্তু ইয়াহিয়া সরকারের সাথে যারা সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদের বিচার হবে। সেই ভার সরকারের উপর ন্যস্ত রাখুন। ইয়াহিয়া খান আমার ফাঁসির হুকুম দিয়েছিলেন। আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। বাঙালিরা একবারই মরতে জানে। তাই বলছি, ক্ষমা চাই না। তাদের বলেছি, তোমরা আমাকে মারলে ক্ষতি নেই। কিন্তু আমার লাশ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও।
কান্না মার্চের সেই রাতে আমাকে ছেড়ে যাবার সময় আমার সহকর্মী তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল ও অন্যান্যরা কাঁদছিলেন। কিন্তু আমি বলেছি, এখানেই আমি মরত চাই। তবুও মাথা নত করতে পারব না। আমি তাঁদের বলেছিলাম, ‘তোমরা নির্দেশ মতো সংগ্রাম চালিয়ো। তারা সে ওয়াদা পালন করেছে।
বাংলাদেশ আজ মুক্ত, স্বাধীন। কিন্তু আজ আমাদের সামনে অসংখ্য সমস্যা আছে, যার আশু সমাধান প্রয়োজন। বিধ্বস্ত বাংলাকে নতুন করে গড়ে তুলুন। নিজেরা সবাই রাস্তা তৈরি করতে শুরু করুন। যার যা কাজ করে যান। পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে আমার কোন ক্ষোভ নেই। পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা; আপনারা অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করেছেন, অসংখ্য বাঙালি মা-বোনের অসম্মান করেছেন তবু আমি চাই আপনারা ভালো থাকুন।
আমি আজ বক্তৃতা দিতে পারবো না। ওরা আমার লাখ লাখ মানুষকে হত্যা রেছে। এমন গ্রাম নেই যেখানে আগুন দেয় নাই। আজ বহু ছাত্র, যুবক, বুদ্ধিজীবী ও সহকর্মীকে আমি দেখছি না। এত বেসামরিক লোককে হত্যা করার নজির বিশে^ আর নাই। প্রথম মহাযুদ্ধ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও এত বেসামরিক লোক মরে নাই। সকলে জেনে রাখুন বাংলাদেশ এখন বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ও পাকিস্তানের স্থান চতুর্থ। ইন্দোনেশিয়া প্রথম ও ভারত তৃতীয়। বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয় ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে আমি চিনি। তাঁকে আমি জানাই আমার শ্রদ্ধা। তিনি জওহরলাল নেহেরুর কন্যা, মতিলাল নেহেরুর নাতনি। তাঁর রক্তে মিশে আছে রাজনীতি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্ব’র সকল রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আমার মুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। আমার সাথে দিল্লীতে শ্রীমতি গান্ধীর আলাপ হয়েছে। আমি যখনই বলব ভারতীয় সেনাবাহিনী তখনই দেশে ফেরত যাবে। এখনই আস্তে আস্তে অনেককে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণীর জনতাকে আমি পরম কৃতজ্ঞতার সাথে সালাম জানাই। আমি সালাম জানাই- মুক্তি বাহিনীকে, গেরিলা বাহিনীকে, কর্মী বাহিনীকে। আমি সালাম জানাই-সংগ্রামী শ্রমিক শ্রেণীকে, কৃষককূলকে, বুদ্ধিজীবীদের। বাংলাদেশেকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। একটি লোককেও আর না খেয়ে মরতে দেওয়া হবে না। সকল রকমের ঘুষ লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
আমি ফিরে আসার আগে ভুট্টো সাহেব অনুরোধ করেছেন, দুই অংশের মধ্যে বাঁধন সামান্য হলেও রাখা যায় কিনা। আমি তখন তাকে বলেছিলাম, আমি আমার মানুষের কাছে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না। এখন আমি বলতে চ্ইা, জনাব ভুট্টো সাহেব, আপনারা সুখে থাকুন, আপনাদের সাথে আর না। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এখন যদি কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, তাহলে সে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য মুজিব সর্বপ্রথম তাঁর প্রাণ দেবে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে নির্বিচারে গণহত্যা করেছে, তার অনুসন্ধান ও ব্যাপকতা নির্ধারণের জন্য আমি জাতিসংঘের নিকট একটা আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠনের আবেদন জানাচ্ছি।
আমি বিশে^র সকল মুক্ত দেশকে অনুরোধ জানাই, আপনারা অবিলম্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দিন এবং সত্বর বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য করে নেয়ার জন্য সাহায্য করুন। জয় বাংলা।”
আন্তর্জাতিক চাপের ফলশ্রুতি আর ভুট্টোর স্বার্থজড়িত কূটনীতির পরিণতিতে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধু। প্রাণ ফিরে এলো বাংলার। অবিলম্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য আবার সেই রেসকোর্স ময়দান থেকেই তিনি দেশবাসীকে দেশ গড়ার সংগ্রামের আহ্বান জানিয়ে দেশ গড়ার কাজে সকলকে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। এক জটিল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে তিনি দেশ ও জাতির পুর্নগঠনের কঠিন দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি নতুন উদ্যমে মাতৃভূমির সেবায় আত্মনিয়োগ করলেন।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ। খাদ্য, বস্ত্র, অর্থ কিছুই নেই। সীমাহীন অভাব ও অপরিসীম চাহিদার মধ্যে শূন্য হাতে বাংলার মসনদে বসলেন আমাদের স্বাধীনতার মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের করুণ অবস্থা বর্ণনা করে বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশ্য এক বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বলেন, “চারিদিকে অসংখ্য নরকঙ্কাল, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের লাশ, বীরাঙ্গনা মা-বোনের আর্ত হাহাকার, অচল কল-কারখানা, থানা আইন আদালত শূন্য ও বিধ্বস্ত, ব্যাংকে তালা, ট্রেজারি খালি, রেলের চাকা বন্ধ, রাস্তা-ব্রিজ ধ্বংস, বিমান ও জাহাজ একখানাও নেই, যুদ্ধের জন্য অনেক ক্ষেতে ফসল বোনা সম্ভব হয়নি, পাট ঘরে ওঠেনি, নৌকা, স্টিমার, লঞ্চ, বাস, লরি ও ট্রাকের শতকরা সত্তর ভাগ নষ্ট, না হয় অচল, অনেকের হাতে অস্ত্র, তাদের মধ্যে আছে দুস্কৃতিকারী। আমাদের প্রয়োজনীয় সৈন্য ছিল না, পুলিশ ছিল না। জাতীয় সরকার চালানোর মতো দক্ষ অফিসারও ছিল না। তখন পাকিস্তানে বন্দি কয়েক লাখ বাঙালি।– ক্ষুধার্থ বাঙালিকে বাঁচানোর জন্য চাই অবিলম্বে খাদ্য, ঔষধ চাই, কাপড় চাই, চারিদিকে এই চাই, চাই আর নাই, নাই”।
অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশগড়ার। বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন ছিল এ দেশকে ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ভারতীয় জেনারেল আফসির করিম। তিনি তার স্মৃতি রোমন্থন করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘…যুদ্ধের ভয়াবয়তা ও তান্ডবলীলা আমি কম দেখিনি। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যে নৃশংসতা আমি দেখেছি, তাতে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম। সৈন্য হলেও রক্ত আর ধ্বংসের চিত্র আমাকে প্রবলভাবে বিচলিত করেছিল। এখনো ভেবে বিস্মিত হই, কিভাবে একটা দেশ ধ্বংসের তা-ব ও পশুত্বের আস্ফালনের বিরুদ্ধে লড়ে এত অল্প সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করল। সুস্থ থাকা সম্ভব ছিল না। একটি যুদ্ধ মানুষের জীবনকে কোথায় এনে ফেলতে পারে, তা মানুষটির জীবনকে কতটা নির্মম পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, তারই প্রতিচ্ছবি ছিল কৃষ্ণনগর শরণার্থী শিবির। একটি যুদ্ধ এক এক্িট পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। এমন লাখ লাখ পরিবার রয়েছে যাদের সব ছিল, তারাই একেবারে নিঃসহায় হয়ে স্থান করে নিয়েছে শরণার্থী শিবিরে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর সরকারের দায়িত্ব ছিল যুদ্ধবিধ্বংস্ত স্বাধীন এই বাংলাদেশের দেশের পুর্নবাসন, একটা স্বাধীন জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তিস্থাপন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতিষ্ঠা। এক রক্তক্ষয় স্বাধীনতার যুদ্ধের পর সারা দেশের প্রশাসন, অর্থনৈতিক কাঠামো, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তখন বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজমান। আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি নামমাত্র। দেশের অফিস-আদালত ছিল এলোমেলো, ডাক ভিাগ সম্পূর্ণ বন্ধ, তার বিভাগ প্রায় অচল; অসংখ্য ব্রীজ ও সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ প্রতিপদে বিঘিœত। যুদ্ধকালীন প্রয়োজনেই মুক্তিবাহিনী, পাক বাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী তিন পক্ষই যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। চালনা ও চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত, মাইন নিমজ্জিত জাহাজ অবরুদ্ধ। এক কথায় আর্থিক অবস্থা অতিশয় দুর্বল, ব্যাংক বন্ধ, প্রচলিত মুদ্রার আইনগত কোন মূল্য নেই। বৈদেশিক মুদ্রা ও ‘গোল্ড রিজার্ভ’ শূন্যের কোঠায়। সীমাহীন সমস্যা, অর্থ নেই, খাদ্য গুদাম খালি, মেশিনপত্র ও যন্ত্রাংশ লুন্ঠিত। ঘর-বাড়ি ভস্মীভূত। খাদ্য নেই, বাসস্থান নেই, ঔষধপত্র নেই। চারিদিকে শুধু রিক্ততা ও হাহাকার। অন্যদিকে ছিল বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন সমস্যা। দেশের ভিতরেই দেড় কোটি লোকের উদাস্তুর দশা, ত্রিশ লক্ষ শহীদ পরিবার, দু’লক্ষ নারীর নির্যাতিত অবস্থা। এছাড়া ছিল ভারতে আশ্রয়প্রাপ্ত এক কোটি শরণার্থীর পুর্নবাসন সমস্যা। ইউনাইটেড নেশন রিলিফ অপারেশন ঢাকা ন’মাস যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করে বলেছিলেন দশ হাজার কোটি টাকা। বহির্বিশে^র প্রায় সকল পর্যবেক্ষকরাই বলেছিলেন যে, যুদ্ধোত্তরকালে বাংলাদেশ কিছুতেই দুর্ভিক্ষ ও অরাজকতা এড়াতে পারবে না।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে সাথে নানা কারণে আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল সবচাইতে সমস্যাসঙ্কুল ও বিপজ্জনক। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়, নিয়মিত বাহিনী ছাড়াও গণবাহিনী হিসাবে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল ৮৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে। মুজিব বাহিনীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। এদের প্রায় সবাইকে অস্ত্র দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া স্থানীয় প্রশিক্ষণ ও উদ্যোগের ভিত্তিতে যে সব বাহিনী ও গ্রুপ গেরিলা পদ্ধতিতে লড়াই করে চলেছিল তাদেরকেও বিভিন্ন দফায় অস্ত্র সরবরাহ করা হয়। প্রায় ৮০ হাজার হিসাব বহির্ভূত অস্ত্রশস্ত্র সারাদেশে ছড়ানো ছিঠানো ছিল। সরবরাহকৃত এই বিপুল অস্ত্রশস্ত্রের অপব্যবহারে স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিপন্ন হয়ে ওঠে। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পরও যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিরাপদ মনে হচ্ছিল না। শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে নতুন সরকার ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে এবং পরিচালিত হতে থাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রভাবে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে শেখ মুজিব ঢাকার মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সে শঙ্কা দূরীভূত হয়। বাংলাদেশকে ভারতের প্রভাব থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে শেখ মুজিব বিচক্ষণতার সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মাত্র দু’মাসের মধ্যে স্বদেশে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। ভারতীয় সরকারের অসন্তোষ সত্ত্বেও তিনি ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। দেশের ভেতরে নতুন কাঠামো তৈরি করে আইনশৃঙ্খলার উন্নতির দিকে নিয়ে যাবার ব্যাপারেও সচেষ্ট হন। শুধু তাই নয়, তিনি বিশ^বাসীকে বাংলাদেশকে সাহায্যের জন্য যে উদাক্ত আহ্বান জানালেন সে আবেদনের অনুকূলে সাড়া পাওয়া গেল। বিশে^র বিভিন্ন দেশ উদার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো বাংলাদেশের প্রতি। যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও চীনের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও প্রথম বছরেই বিশ্বের ১৭টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তাছাড়া বাংলাদেশ প্রথম বছরেই জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ যেমন WHO, UNESCO, ILO, FAO, বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ইত্যাদির সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বন্ধুরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো যদি বিরাট পুনর্বাসন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে না আসত তবে হয়তো বা নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ঠিকে থাকাটাও কঠিন হয়ে উঠত।
বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই ১৯৭২ এর জানুয়ারী ‘অস্থায়ী সংবিধানের আদেশ’ জারি করেন। মার্চ মাসে জারি করা হয় বাংলাদেশের ‘গণপরিষদ অধ্যাদেশ’ ১৯৭২ এর ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। এ অধিবেশনে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংবিধান কমিটি গঠন করা হয়। আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। কমিটি ৭১ অধিবেশনে মিলিত হয়ে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন সম্পন্ন করেন। ১৯৭২ এর ১২ অক্টোবর গণপরিষদে সংবিধানের খসড়া পেশ করা হয়। ১৯৭২ এর ৪ নভেম্বর স্পিকার মোহাম্মদ উল্লাহর সভাপতিত্বে গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহিত হয়। ঐদিন দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে গণপরিষদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে ৪০৩ জন সদস্যের ‘হ্যাঁ’ সূচক জোরালো ধ্বনির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন করা হয়।
বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৭২ এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকীতে। এ সংবিধানে ৩৮৬ জন সদস্য স্বাক্ষর করেন। প্রথম সাক্ষরটি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ স্বাক্ষরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ সহ ১৩ নম্বর ক্রমিকে স্বাক্ষর করেন সিংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
মুক্তিসংগ্রামের মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯৭২ এর ৪ঠা নভেম্বর স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু রচনা করলেন বিশ্বের অত্যাধুনিক ও গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সংবিধান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসনামলে দেশের জন্য একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সমন্নুত রাখার জন্য সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রীয় আদর্শ মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে গৃহিত হয়।
বিশে^র আধুনিক সংবিধান বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধু সরকার সুন্দর দেশপোযোগী শাসনতন্ত্র উপহার দিয়েছেন। যা আমাদের জন্য অহংকারের বিষয়। বাংলাদেশকে একটি জনকল্যাণমুখী আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইতিহাসের সোনালী খাতায় বরপুত্র হয়ে থাকবেন যুগ থেকে যুগান্তরে।
স্বাধীনতার মাত্র কয়েক মাস পরে গণভবনে বুদ্ধিজীবীদের এক সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘বহু দশক ধরে উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্র ও দুর্দশার কারণ হয়ে এসেছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতায় রূপ দেওয়া হয়। এটা সা¤্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের ফল। —– জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের অভ্যুদয় শতাব্দীব্যাপী ষড়যন্ত্র ও অভিশপ্ত সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এক প্রচন্ড প্রতিবাদের ঘোষণা। আমরা যদি সর্বশক্তি দিয়ে বাংলাদেশের এই ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটি রক্ষা করতে সক্ষম হই, তবেই এই উপমহাদেশে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব ও শাস্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। দারিদ্র্য ও দুর্দশা মোচনের জন্য শান্তি ও রাজনৈতিক স্থায়িত্ব এক অনিবার্য পূবর্শত।’ -সুর্ব্রত ব্যাণার্জী, বাংলাদেশ, ন্যাশনাল বুক ট্র্যাষ্ট, নয়াদিল্লী, ১৯৭৯, পৃষ্টা-৭৩
বঙ্গবন্ধুর যে আশংকা তা স্বাধীনতা ৫২ বছর পরও আমাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমরা এর সত্যতা উপলব্ধি করছি। আজও এদেশ হতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প বিলুপ্ত হয়নি। মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতিনিয়ত স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আন্তর্জাতিক পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে তারা বাংলার স্বাধীনতাকে ও বাংলার জনপদকে রক্তাক্ত করার প্রয়াস চালায়। আজ সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার কলুষিত বিষবাস্পকে সমূলে বিনাশ করার। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাঙালি উপভোগ করতে পারবে। যথার্থ রূপ পাবে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তথ্যসূত্র :
১। বাংলাদশের স্বাধীনতাযুদ্ধ : দলিলপত্র,সম্পাদক- হাসান হাফিজুর রহমান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্যমন্ত্রণালয় ১৯৮৪।
২। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও শেখ মুজিব, ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
৩। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ দুটি নাম একটি ইতিহাস, মাহবুবুল আলম বিপ্লব।
৪। সমকালীন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ।

লেখক : প্রাবন্ধিক; সম্পাদক-শিল্পশৈলী